• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
ভোজ্যতেল খোলা বিক্রি বন্ধে শঙ্কা

সংগৃহীত ছবি

শিল্প

ভোজ্যতেল খোলা বিক্রি বন্ধে শঙ্কা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৭ জুলাই ২০২২

ভোজ্যতেল খোলা বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন না এলে আর সাত দিন পর বন্ধ হয়ে যাবে খোলা সয়াবিন ও পাম তেল বিক্রি। ইতোমধ্যে সময় নির্দিষ্ট করে সব উৎপাদক ও পরিবেশক পর্যায়ে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে ফুড গ্রেড বোতল, প্লাস্টিক ফয়েল ও পাউচ প্যাকে বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করতে হবে। অন্য কোনো উপায়ে পাওয়া যাবে না ভোজ্যতেল। এমন সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তি হচ্ছে, খোলা অবস্থায় তেলে সহজে ভেজাল মেশানো সম্ভব। আর কোনো পর্যায়ে ভেজাল মেশানো হয়েছে তা ধরাও কঠিন। তাই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায় না।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের চাহিদার পুরোটা বোতলজাত অবস্থায় সরবরাহের প্রস্তুতি পুরো সম্পন্ন হয়নি। এ ক্ষেত্রে আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি আমদানি এবং সংযোজনে সময় প্রয়োজন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা আবার বাড়তি শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির হবে। সে ক্ষেত্রে পুরো বাজার কয়েকটি কোম্পানির হাতে চলে যাবে।

চাহিদার সিংহভাগ সয়াবিন ও পাম তেল এখনও খোলাভাবে বিক্রি হয়। দাম কিছুটা কম এবং চাহিদামতো নেওয়া সম্ভব হয় বলে বেশিসংখ্যক মানুষ এই প্রক্রিয়ায় তেল কেনে। খোলা তেল বিক্রি বন্ধে এর আগে তিন দফা সময় বেঁধে দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরে প্রথম এমন উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে প্রস্তুতি না থাকায় তখন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। পরে চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে খোলা অবস্থায় ভোজ্যতেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তা-ও কার্যকর হয়নি। সবশেষ সময় নির্ধারণ হয় চলতি বছরের ৩১ মে। ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় নতুন করে আগামী ৩১ জুলাই থেকে খোলা তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা উইং-এর উপসচিব হারুন অর রশিদ বলেন, আগে কয়েক দফায় খোলা অবস্থায় ভোজ্যতেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। তবে এই দফায় নতুন করে আর সময় বাড়াতে চায় না শিল্প মন্ত্রণালয়।

ভোজ্যতেলের অস্থিরতাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রিফাইনারি অয়েলসহ ভোজ্যতেল উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। বৈঠকে প্যাকেটজাত তেল কিভাবে বিক্রি হবে, কত দাম হবে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে সরিষা, তিল ও সূর্যমুখী থেকে ভোজ্যতেলের যোগান আসে মাত্র তিন লাখ টন। এটা মোট চাহিদার মাত্র ১২ ভাগ। বাকিটার যোগান দিতে সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে সয়াবিন তেলের ৬০ শতাংশ ও পাম তেলের ৯৭ শতাংশই খোলা অবস্থায় বিক্রি হয়।

খোলা অবস্থায় ভোজ্যতেল বিক্রি বন্ধ এবং শতভাগ প্যাকেটজাত বিক্রি ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা উইং-এর উপসচিব হারুন অর রশিদ জানান, খোলা অবস্থায় তেল বিক্রির সুযোগ থাকলে তাতে সহজেই ভেজাল মেশানো যায়। বাজার তদারকির সময় ভোজ্যতেলে ভেজালের অস্তিত্ব পেলে দায় নিতে চায় না কেউ। খুচরা ব্যবসায়ীরা দায় চাপান পাইকারি ব্যবসায়ীদের ওপর। আবার পাইকারি ব্যবসায়ীরা দায় দেন উৎপাদকদের। সেক্ষেত্রে কারো বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।

তিনি বলেন, আইন করে ভোজ্যতেল ভিটামিন-এ মিশ্রণের নির্দেশনা দেয়া আছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই খোলা তেলে এই উপাদান দেওয়া হয় না। সেক্ষেত্রে দায়ী হিসেবে কোনো পক্ষকেও খুঁজে পাওয়া যায় না। অন্যদিকে বাজারে সয়াবিন বলে যা বিক্রি হয় তা আসলে সয়াবিন নয়। সয়াবিনের সঙ্গে পাম, আবার সুপার পামের সঙ্গে পাম মিশ্রণ করে বিক্রি করা হয়। এক্ষেত্রে সাদা চোখে ক্রেতারা কিছুই বুঝতে পারে না। এতে দাম এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পড়ে বড়সংখ্যক ভোক্তা। হারুন উর রশিদ বলেন, বোতল ও প্যাকেটজাত ব্যবস্থায় তেল বিক্রি হলে সেখানে উৎপাদকের নাম লেখা থাকবে। ফলে ওই তেল পরীক্ষায় ভেজালের মিশ্রণ পাওয়া গেলে উৎপাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। দামের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা আনা যাবে। নির্ধারিত দাম কার্যকরের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা ভূমিকা রাখবে।

ছোট ছোট প্যাকেট করে বিক্রি হবে সয়াবিন ও পাম তেল। নিম্ন আয়ের মানুষ যাতে তাদের প্রয়োজনীয় পরিমাণে তেল কিনতে পারেন সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে শিল্প মন্ত্রণালয়। তিনি জানান, প্যাকেটজাত বিক্রি ব্যবস্থায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়তে পারে ২ থেকে ৪ ভাগ। অর্থাৎ প্যাকেজিং বাবদ এই ব্যয় তেলের দামের সঙ্গে যুক্ত হবে। প্যাকেজিং-এর ক্ষেত্রে মান পর্যালোচনা করবে সরকার। এক্ষেত্রে প্রান্তিক পর্যায়ে পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে কাজ করবে মন্ত্রণালয়ের একাধিক টিম।

 বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, খোলা তেল বিক্রি বন্ধ হলে বাজার অস্থির হবে। সে ক্ষেত্রে পুরো বাজার চার থেকে পাঁচটি কোম্পানির হাতে চলে যাবে। তারা তখন নিজেদের মতো করে দাম নির্ধারণ করবে। এ বিষয়ে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সয়াবিন তেল প্যাকেটজাত করে বিক্রির জন্য এখনো পুরোপুরি প্রস্তুতি আমাদের নেই। এজন্য আরো সময় দরকার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads