• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

তথ্যপ্রযুক্তি

আজ ফাইভ-জি যুগে প্রবেশ করছে দেশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১২ ডিসেম্বর ২০২১

পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা ফাইভজি নেটওয়ার্কের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আজ রোববার  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয়সহ ছয়টি এলাকায় সীমিত পরিসরে সম্পূর্ণ পরীক্ষামূলকভাবে এ যাত্রা শুরু হবে। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় ভার্চুয়ালি এ সেবা উদ্বোধন করবেন।

মোস্তাফা জব্বার জানান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর টেলিটক ১২ ডিসেম্বর ফাইভজি চালু করবে। প্রাথমিকভাবে রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি স্থানে এ সেবা চালু হবে। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ঢাকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ধানমন্ডি ৩২, বাংলাদেশ সচিবালয়, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এবং ঢাকার বাইরে সাভার ও টুঙ্গিপাড়াকে এই সেবার আওতায় আনা হবে। পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে টেলিটক ঢাকার ২০০টি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এ প্রযুক্তি সেবা চালু করা হবে।

‘আগামী বছরের মার্চে বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ নিলামে দেওয়ার পর বেসরকারি তিনটি মোবাইল অপারেটর এ প্রযুক্তি চালু করবে। ২০২২ সালের পর টেলিটক ও বিটিসিএল দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল, বিশেষ করে স্পেশাল ইকোনোমিক জোনগুলোতে এ সেবা চালুর প্রস্তুতির কাজ করছে।’

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন বলেন, বাংলাদেশ কোনো প্রযুক্তিতে আর পিছিয়ে থাকবে না। ফাইভজি, সিক্সজি, সেভেনজি যাই আসুক, কোনোটির ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না।

‘এখন আমরা ফাইভজি যেটা চালু করছি, এটার ফার্স্ট স্ট্যান্ডার্ডটা আমরা ফলো করছি। এটার সেকেন্ড স্ট্যান্ডার্ডের কাজ হচ্ছে। ২০২২-এ হয়তো সেটা রিলিজ হবে। আমরা সেকেন্ড স্ট্যান্ডার্ডটা ফলো করব।

দেশের ফাইভজি চালু হলে ব্যবহার করতে ইচ্ছুকদের তাদের মোবাইল ফোন সেট পরিবর্তন করতে হবে বলে জানান মন্ত্রী।

বাংলাদেশে মোবাইল ফোন সেট উৎপাদন করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ফাইভজি সেট কিন্তু উৎপাদিত হয়; স্যামস্যাং উৎপাদন করে। বিদেশেও রপ্তানি করে। আমাদের দেশীয় কোম্পানি যেগুলো প্রোডাকশনে আছে, তাদের আমরা অনুরোধ করেছি। তারা উৎপাদনে যাবে। মার্চের ভেতরে সেটগুলো বাজারে আসবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, ‘ফাইভজি ব্যবহার করতে হলে নতুন সেট লাগবে। একটি বিষয় খেয়াল করবেন, এই ফাইভজি কারা ব্যবহার করবে। এটির জন্য নির্ধারিত প্রযুক্তি হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্সসহ অন্যান্য কাজের।

এই ধরনের কাজগুলো কয়জন করেন? কতজন মানুষ এই প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত হবেন সেটিও মাথায় রাখবেন।

ফাইভজি চালু হলে  যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে দেশে : ১. ডাউনলোড স্পিড-ফোরজির চেয়ে ফাইভজির গতি ১০০ থেকে ২৫০ পর্যন্ত গুণ বেশি। এ গতিতে নেটফ্লিক্সে ৮কে রেজুলেশনের ৪০০ সিনেমা একবারে দেখা যাবে।

২. ল্যাটেন্সি কম-তথ্য আদান-প্রদানে সময়ের ব্যবধানই ল্যাটেন্সি। ফাইভজি এই সময় কমিয়ে আনবে ১ মিলিসেকেন্ডে। ফলে কাঙ্ক্ষিত তথ্য মিলবে রিয়েল টাইমে।

৩. স্বয়ংক্রিয় গাড়ি স্বয়ংক্রিয় গাড়ি ফাইভজি ব্যবহার করে, ট্রাফিক সিগন্যাল ও রোড সেন্সরের সঙ্গে সমন্বয় করবে। রাস্তার অন্য গাড়ির সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারবে। ফাইভজি নেটওয়ার্কে প্রতিক্রিয়া দেখাতে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির সময় লাগবে ১ মিলিসেকেন্ড। এতে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে।

৪. যানবাহন চালানো- আগামী দিনে স্বয়ংক্রিয় বা দূর নিয়ন্ত্রিত ট্রেন, ডেলিভারি ট্রাক ও প্লেন চালাতেও ফাইভজি একই সুবিধা দেবে।

৫. রোবট দিয়ে অস্ত্রোপচার-বিশেষজ্ঞ সার্জনরা রোবট দিয়েই জরুরি অবস্থায় সময় ও দূরত্ব কমাতে পারবেন।

৬. রোবটের কাজ-ফাইভজির কারণে ফ্যাক্টরিতে রোবটের সংখ্যাও বাড়বে। 

৭. ড্রোন দিয়ে কৃষিকাজ-ড্রোনের বহর দিয়ে কৃষিকাজও হবে। দূর নিয়ন্ত্রিত ড্রোন দিয়ে ফসল বাছাই করে তোলা যাবে। সার ও পানি দেওয়াও সম্ভব হবে।

৮. ভিআর গেইমিং-ফাইভজি ব্যবহারে পিসি ও গেমিং কনসোল থেকে সফটওয়্যার সরিয়ে ক্লাউডে রাখা যাবে। ক্লাউড সেবা নিলে দিতে হবে সাবস্ক্রিপশন ফি। এতে গেমারদের আর দামি ডিভাইস কিনতে হবে না।

৯. এআর-অগমেন্টেড রিয়েলিটি প্রযুক্তি আরো উন্নত হবে। ফলে ভার্চুয়াল অনেক কিছু আমরা আমাদের আশপাশেই দেখতে পারব।

১০. পণ্য ডেলিভারি-ই-কমার্স ও কুরিয়ার কোম্পানিগুলো ড্রোন দিয়েই পণ্য ডেলিভারি দেবে। আগামী দিনে বাড়ির দরজায় পণ্য নিয়ে হাজির হবে ড্রোন।

১১. আইওটি-স্মার্টহোমে ব্যবহূত ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ডিভাইসগুলো সর্বক্ষণ ফাইভজিতে যুক্ত থাকবে। ল্যাটেন্সি রেট কমের সমস্যা এড়ানো যাবে ফাইভজিতে। সব আইওটি ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করা যাবে রিয়েল টাইমে।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ প্রকল্পের প্রস্তাবনা নিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর মূল্যায়ন কমিটির বৈঠক হয়। এতে প্রকল্পটির বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। এসব বিষয়সহ প্রস্তাবনাটি (ডিপিপি) পরিবর্তনের জন্য টেলিটকের কাছে পাঠানো হয়েছে। টেলিটক তা এখনো পরিকল্পনা কমিশনে ফেরত পাঠায়নি।

টেলিটক প্রকল্প প্রস্তাবনা সংশোধন করে পাঠালে তা নিয়ে আবারো মূল্যায়ন কমিটির বৈঠক হবে। প্রস্তাবে সব কিছু সন্তোষজনক থাকলে তবেই তা অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তোলা হবে।

তবে এসব প্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। এই প্রকল্পে খরচ হবে ২৫৪ কোটি ৮ লাখ টাকা। বিষয়টি নিয়ে কমিশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ডিপিপি পুনর্গঠনের জন্য পাঠিয়েছি, কিন্তু তা এখনো আসেনি। পুনর্গঠিত প্রস্তাবনা এলে তার ওপর বৈঠক শেষে বেশ কয়েকটি ধাপ পার হয়ে তবে তা অনুমোদনের জন্য তোলা হবে।

‘তবে প্রস্তাবে কোনো অসংগতি পেলে তা আবার সংশোধনের জন্য টেলিটকে ফেরত পাঠানো হতে পারে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করে অনুমোদন পেতে দুই মাস বা এমনকি তিন মাসও লাগতে পারে।’

কমিশন বলছে, একনেকে অনুমোদন পেলেই প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায় না। প্রকল্প অনুমোদন পেলেও তাকে আরো কিছু ধাপ পার হতে হয়। দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে পণ্য কেনাকাটা করা হবে, যার মধ্যে থাকবে ফাইভ-জির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি।

তা ছাড়া এ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দও থাকতে হবে। তার জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সংশোধনী (সংশোধিত এডিপি) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এডিপি সংশোধন হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে। যন্ত্রপাতি কেনার পর তা স্থাপন করতে হবে। দেশে ফাইভজির কোনো সরঞ্জাম নেই বলে জানিয়েছে টেলিটক।

ইতোমধ্যেই ঢাকা শহরের বিভিন্ন সাইটে হুয়াওয়ে ও টেলিটকের যৌথ পরীক্ষায় ব্যবহারকারীদের জন্য এক দশমিক পাঁচ জিবিপিএস পিক ইন্টারনেট গতি এবং ৭১০ মিলি সেকেন্ড ল্যাটেন্সির মতো দারুণ ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে দেশে শিল্পের ডিজিটালাইজেশন ত্বরান্বিত করা এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীদের জন্য আরো অনেক সুযোগ তৈরি করা সম্ভব হবে।

হুয়াওয়ে বাংলাদেশের চিফ টেকনিক্যাল অফিসার কেভিন স্যু বলেন, বাংলাদেশে ফাইভ জি নেটওয়ার্কের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরিতে আমরা টেলিটকের সঙ্গে অংশ নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে টেলিটকের ৬৫ শতাংশেরও বেশি সাইটে হুয়াওয়ে প্রযুক্তি প্রদান করছে।

২০১৮ সালে ঘোষিত বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারে বাংলাদেশে ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সর্বাধুনিক মোবাইল প্রযুক্তি সেবা ৫-জি চালু করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসির নির্দেশনা মোতাবেক রাষ্ট্রীয় একমাত্র মোবাইল অপারেটর টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড প্রাথমিক পর্যায়ে বর্তমান ৪-জি নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনপূর্বক সীমিত পরিসরে চলতি মাসে ৫-জি চালু করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads