• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বাবুনগরীসহ ৪৩ নেতার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন

সংগৃহীত ছবি

আইন-আদালত

আহমদ শফীর মৃত্যু

বাবুনগরীসহ ৪৩ নেতার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ এপ্রিল ২০২১

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক আমির আহমদ শফীর মৃত্যুর ঘটনায় হত্যার প্ররোচনা মামলায় আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

এতে মোট ৪৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে হেফাজতের বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর নাম রয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম তৃতীয় জজ আদালতে এ প্রতিবেদন জমা দেয় পিবিআই। পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পিবিআই’র চট্টগ্রাম জেলার সুপার নাজমুল হাসান বলেন, এ মামলার তদন্তে অন্তত ২২ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন তারা। মৃত্যুর পাশাপাশি মাদরাসায় ভাঙচুরসহ বিভিন্ন বিষয় তারা তদন্তে এনেছেন।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হাটহাজারী মাদরাসার দীর্ঘদিনের মহাপরিচালক আহমদ শফী।

মৃত্যুর আগের দিন মাদরাসায় তুমুল হট্টগোলের মধ্যে শফী মহাপরিচালকের পদ ছাড়েন। তার ছেলে মাদরাসার সহকারী পরিচালক আনাস মাদানীকেও বহিষ্কার করা হয়।

শফীর মৃত্যুর দিন আনাস মাদানী ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আগের দিনের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনার জন্য ‘টেনশনের’ কারণে ‘হার্টফেল’ করে তার বাবা মারা গেছেন।

পূর্বপরিকল্পিতভাবে আহমদ শফীকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর আদালতে মামলাটি করেন আহমদ শফীর শ্যালক মো. মঈনুদ্দিন।

মামলার আরজিতে বলা হয়, অসুস্থ হলেও আহমদ শফীকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায় তার কক্ষে আটকে রাখা হয়। তার কক্ষে আসামিদের ইন্ধনে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। মাদরাসা মাঠে আহমদ শফীকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে রাখা হয়। আর এটি আটকে রাখার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেন এনামুল হাসান ফারুকী।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী মারা যান। শফীর ছেলে আনাসকে চট্টগ্রামের দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষক পদ থেকে অব্যাহতিসহ ছয় দফা দাবিতে ১৬ সেপ্টেম্বর জোহরের নামাজের পর থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্ররা। তারা মাদরাসার সবকটি ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। আনাসসহ কয়েকজন শিক্ষকের কক্ষে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দিন রুহীকে মাদরাসার ভেতরে পেয়ে মারধর করে ছাত্ররা।

ছাত্রদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে মাদরাসাটির মহাপরিচালকের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে সরে দাঁড়ান আহমদ শফী। একই সঙ্গে তার ছেলে আনাস মাদানীকে মাদরাসার শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় শুরা কমিটি। দাবি মেনে নেওয়ায় ওইদিন রাতে ছাত্ররা আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করে।

আহমদ শফীর মৃত্যুর পর থেকেই আমির নির্বাচন নিয়ে সংগঠনটির মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়। ১৪ নভেম্বর ঢাকায় ও চট্টগ্রামে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধি সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন তোলে আনাস মাদানীর অনুসারীর একটি অংশ। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রয়াত আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন। আর ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ।

গত ১৫ নভেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে হেফাজতের নতুন আমির নির্বাচিত হন জুনায়েদ বাবুনগরী। এর আগে তিনি সংগঠনটির মহাসচিব ছিলেন। ১৫১ সদস্যের কমিটিতে আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীসহ তার অনুসারীদের কাউকে রাখা হয়নি।

পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে হেফাজত ইসলামের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আদেশ দেন।

কয়েক দফা সময় নিয়ে পিবিআই গতকাল সোমবার আদালতে প্রতিবেদনটি দাখিল করে।

পিবিআই সূত্র জানায়, হেফাজতে ইসলামের বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দীন মুনির, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়জী, হেফাজত নেতা মীর ইদ্রিস, হাবিব উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, আবদুল মতিন, মো. শহিদুল্লাহ, মো. রেজওয়ান আরমান, হাসানুজ্জামান, ইন আমুল হাসান ফারুকী, মীর সাজিদ, জাফর আহমেদ, মীর জিয়া উদ্দিন, আহমেদ, মাহমুদ, আসাদ উল্লাহ, জোবায়ের মাহমুদ, এইচ এম জুনায়েদ, আনোয়ার শাহ, আহমেদ কামাল, কামরুল ইসলাম কাশেমী, মোহাম্মদ হাসান, ওবাইদুল্লাহ ওবায়েদ, জুবায়ের মোহাম্মদ, আমিনুল হক, রফিক সোহেল, মুবিনুল হক, নাঈম, হাফেজ সায়েম উল্লাহ, আলম, সাব্বির আহমেদ, আবু সায়েদ, হোসাইন আহমেদ, তৌহিদ, আরফান, মামুন, আমিনুল ইসলাম, মাসুদুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ও নুর মোহাম্মদসহ ৪৩ জন রয়েছেন।

আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা গত ১২ জানুয়ারি ঘটনাস্থল হাটহাজারী মাদরাসা পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা হেফাজতে ইসলামের বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর জবানবন্দিও নিয়েছিলেন।

বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ ৪৩ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে সন্তোষ প্রকাশ করে অভিযুক্তদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন মামলার বাদী মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads