• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিলেন এএসআই সৌমেন

ছবি: বাংলাদেশের খবর

আইন-আদালত

কুষ্টিয়ায় স্ত্রী-সন্তানসহ ৩ জনকে গুলি করে হত্যা

দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিলেন এএসআই সৌমেন

  • জাহাঙ্গীর হোসেন জুয়েল, কুষ্টিয়া
  • প্রকাশিত ১৪ জুন ২০২১

কুষ্টিয়ায় প্রকাশ্যে গুলি করে স্ত্রী ও আগের পক্ষের সন্তানসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা মামলার আসামি এএসআই সৌমেন রায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল সোমবার বেলা সোয়া একটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত কুষ্টিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনামুল হকের খাসকামরায় তার জবানবন্দি নেওয়া হয়।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত নিশিকান্ত সরকার। এর আগে কঠোর নিরাপত্তায় আসামিকে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে তোলা হয়।

ওসি নিশিকান্ত সরকার বলেন, নিহত আসমার মা হাসিনা খাতুনের করা মামলায় ওই আদালতে আসামির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেয়ার আবেদন জানানো হয়। পরে আসামিকে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে পাঠানো হয়।

এদিকে নিহত সৌমেনের দ্বিতীয় স্ত্রী আসমা খাতুন, আসমার ছেলে রবিন ও যুবক শাকিল খানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার সকাল ৮টায় নিহতদের পরিবারের কাছে মরদেহগুলো হস্তান্তর করে পুলিশ। বাদ যোহর আসমা ও তার ছেলে রবিনকে কুমারখালীর নাতুড়িয়া গ্রামে জানাজা শেষে দাফন করা হয়। অপরদিকে শাকিল খানকে চাপড়া ইউনিয়নের সাওতা গ্রামে দাফন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের কাস্টমস মোড়ে আসমা খাতুন, তার ছেলে রবিন এবং শাকিল নামে এক যুবককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে আসমার স্বামী এএসআই সৌমেন রায়। এ ঘটনায় পুলিশ সৌমেনকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তল ও দুটি ম্যাগজিন উদ্ধার করে।

এএসআই সৌমেন বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি গঠন

কুষ্টিয়ায় গুলি করে তিনজনকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত খুলনার ফুলতলা থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সৌমেন রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে রেঞ্জ কার্যালয় ও খুলনা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহাবুব হাসান বলেন, এসএসআই সৌমেন রায় ছুটি না নিয়ে ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ঘটনার পর জানতে পারেন সৌমেন কুষ্টিয়ায়। তাঁর বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) তানভীর আহমেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

খুলনা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় গঠিত কমিটির সভাপতি হলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) তানভীর আহমেদ। অন্য সদস্যরা হলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) মো. খায়রুল আলম ও জেলা বিশেষ শাখার ডিআইও-১ শেখ মাসুদুর রহমান। কমিটি সাত কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

এ ছাড়া খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে রেঞ্জ কার্যালয়ের পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদকে। অন্য সদস্যরা হলেন, সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন ও কুষ্টিয়া ডিআইও-১ ফয়সাল হোসেন।

অতিরিক্ত ডিআইজি (এডমিন) এ কে এম নাহিদুল ইসলাম বলেন, সৌমেন রায়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে তদন্ত কমিটি কাজ করবে। দুই কার্যদিবসে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হবে।

সৌমেনের দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি জানত না তার পরিবার

কুষ্টিয়ায় গুলি করে স্ত্রী আসমা খাতুন, তাঁর ছয় বছর বয়সী ছেলে রবিন ও শাকিল নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করেছেন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সৌমেন রায়। অভিযুক্ত সৌমেনের গ্রামের বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলায়। সেখানে তাঁর পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত আসমা খাতুনের সঙ্গে সৌমেনের দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি তাঁর পরিবার বা শ্বশুরবাড়ির পরিবারের কেউ জানত না।

এদিকে তিনজনকে গুলি করে হত্যার পর সৌমেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সৌমেন বলেছেন, নিহত যুবক শাকিলের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর সম্পর্ক ছিল। তাই তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। সৌমেন খুলনার ফুলতলা থানায় কর্মরত।

এএসআই সৌমেন রায়ের ভাই বলেন, সৌমেন পারিবারিকভাবে ২০০৫ সালে পাশের গ্রামে বিয়ে করেন। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি খুলনায় থাকেন। সেই স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো নারীর সঙ্গে সৌমেনের বিয়ের বিষয়টি তাঁদের জানা ছিল না। তিনি আরও বলেন, ‘দ্বিতীয় স্ত্রীর বিষয়টি আমরা খবরে দেখেই প্রথম জেনেছি। এমনকি বিষয়টি সে তার স্ত্রীকেও জানায়নি। আমরা সবাই প্রথম জানলাম। আমাদের ধারণা, কুষ্টিয়ায় কর্মরত অবস্থায় হয়তো আসমার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায় সে। সৌমেনের ভাই জানান, অল্প বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর সৌমেনের হাত ধরে তাঁদের দরিদ্র পরিবারটি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল।

হত্যা মামলা করলেন নিহত আসমার মা

কুষ্টিয়ায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। রোববার রাতে কুষ্টিয়া মডেল থানায় হাজির হয়ে নিহত আসমা খাতুনের মা হাসিনা খাতুন বাদী হয়ে এ হত্যা মামলা করেন। মামলায় পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শককে (এএসআই) একমাত্র আসামি করা হয়েছে।


কুষ্টিয়ায় হত্যাস্থলের রক্ত রাতে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলে পুলিশ

কুষ্টিয়া শহরের কাস্টমস মোড়ে যেখানে রোববার তিন খুনের ঘটনা ঘটেছে, গভীর রাতে পুলিশের গাড়ি সেখানে গিয়ে পানি দিয়ে রক্ত ধুয়ে দিয়েছে। ঘটনাস্থলের পাশের ভবন ও আশপাশের দোকানের নিরাপত্তায় থাকা নিরাপত্তাকর্মী খন্দকার রেজাউল হক প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এমন তথ্য দিয়েছেন।

নিরাপত্তাকর্মী খন্দকার রেজাউল হক বলেন, গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান আসে। তখন ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রক্ত পরিষ্কার করার কথা বলেন সেখানে থাকা ব্যক্তিরা। রাত সাড়ে তিনটার দিকে একই গাড়িতে চালকসহ চার পুলিশ সদস্য ও একজন সাধারণ ব্যক্তি ঝুড়ি, ঝাঁটা ও পানি দিয়ে রক্তসহ সবকিছু ধুয়ে-মুছে দেন। সোমবার ভোররাত চারটার দিকে তাঁরা চলে যান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads