• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

মধ্যপ্রাচ্য

হামাসের শর্তের বেড়াজালে নেতানিয়াহু, গাজা পুনর্গঠনে সহায়তা দেবে চীন

যুদ্ধবিরতির পরও আকসায় ইসরাইলি পুলিশের তাণ্ডব

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২২ মে ২০২১

ফিলিস্তিনের হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করেছে ইসরাইল। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার এ যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে ১১ দিনের সহিংসতার অবসান ঘটল। যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মাথায় জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের ওপর আবারো হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি পুলিশ। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও আল জাজিরা। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ইসরাইলের ক্ষমতাসীন নেতানিয়াহু সরকারের মন্ত্রিসভা গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে ‘মিশরীয় প্রস্তাব’ মেনে নিয়েছে। ইসরাইলি মন্ত্রিসভার ঘোষণা অনুযায়ী, গতকাল স্থানীয় সময় রাত ২টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।

এদিকে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার ইসরাইলের রাজনৈতিক নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভার বৈঠকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার ব্যাপারে ঘোষণা আসে। তারপরই হোয়াইট হাউসে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন বাইডেন।

অন্যদিকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় সতর্ক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন গাজাবাসী। তারা একে অসাধারণ বিজয় হিসেবে দেখছেন। এর মাঝেই ইসরাইলকে নতুন শর্তের বেড়াজালে ফেলেছে হামাস। সর্বশেষ খবরে চীন জানায় বিধ্বস্ত গাজা ভূখণ্ড পুনর্গঠনে সহায়তা করবে তারা। এসবের মাঝেই ইরান শুক্রবার বিশাল আকারের একটি নতুন ড্রোন উন্মোচন করেছে; যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘গাজা’।

এদিকে মসজিদুল আকসায় ইসরাইলি পুলিশের চালানো তাণ্ডবের বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানিয়েছে, শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর আল-আকসা মসজিদের প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনিরা যুদ্ধবিরতি উদযাপন করতে জড়ো হন।

পূর্ব জেরুজালেম থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক বলেন, ‘তারা গান গাচ্ছিল এবং চিৎকার করছিল। এ সময় পাশের একটি প্রাঙ্গণ থেকে ইসরাইলি পুলিশ ফিলিস্তিনিদের উদযাপনের প্রাঙ্গণে চলে আসে এবং তাদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ তাদের ওপর স্টান গ্রেনেড, স্মোক বোমা ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি ছুঁড়তে শুরু করে।’

গাজাজুড়ে সতর্ক উচ্ছ্বাস : ঈদুল ফিতরের উৎসব ঠিকঠাক করতে না পারা গাজার অনেক বাসিন্দাকেই দেখা গেল শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাস্তায় নেমে এসে যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় উল্লাস প্রকাশ করতে। গভীর রাতে শহরটির বিভিন্ন অংশে আরবিতে স্লোগান উঠল, আল্লাহ মহান, তাকে ধন্যবাদ।

প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে গাড়ির ভিড়, হর্নে কানে তালা লেগে যাওয়ার দশা, জানালা দিয়ে উল্লসিত মানুষের পতাকা উড়ানো-আগের সব যুদ্ধবিরতি বা বন্দি বিনিময়ের সময়ের মতো এবারো গাজাকে এমন উৎসবমুখরই দেখা গেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজার বিভিন্ন মসজিদের লাউডস্পিকারে হামাস যোদ্ধাদের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। ঘোষিত হয় ‘সোর্ড অব জেরুজালেম যুদ্ধে দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিজয়’। উল্লসিত অনেককে দেখা যায় শূন্যে গুলি ছুঁড়তে। কেউ কেউ ব্যস্ত ছিলেন শব্দ বোমা ফাটাতে কিংবা আতশবাজি পোড়াতে।

গাজার তেল আল-হাওয়া এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, তারা তাদের বিপদমুক্তি ও ‘বিজয়’ উদযাপন করছেন। আনন্দিত অনেককেই এসময় একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করতে দেখা যায়। অনেকে আবার স্লোগান দেন ইসরাইলের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা হামাসের এক শীর্ষ সামরিক কমান্ডারের নাম ধরে, দেড় সপ্তাহের যুদ্ধে যাকে মারতে তেল আবিবের বেশ কয়েকটি চেষ্টা ব্যর্থ হয় বলে খবর স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর।

তবে এ উল্লাসের মধ্যে ছিল সতর্কতাও। যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে যুদ্ধবিরতি। দীর্ঘদিন ধরে চলা উত্তেজনা তো যে কোনো মুহূর্তেই নতুন সংঘাত-সংঘর্ষে মোড় নিতে পারে।

কেবল গাজা-ই নয়, উল্লাস দেখা গেছে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে থাকা শহর রামাল্লাতেও। শুক্রবার রাতে শহরটির সড়কে নেমে আসা কয়েকশ মানুষ স্লোগানে বলেছেন, মনেপ্রাণে আমরা তোমার সঙ্গেই আছি, গাজা।

আতশবাজির ঝলক দেখা গেছে পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারা এলাকায়ও। এখানে বসবাসরত কয়েকটি ফিলিস্তিনি পরিবারের উচ্ছেদ ঠেকাতে ইসরাইলের আদালতে যে দীর্ঘ আইনি লড়াই চলছে তা নিয়ে সৃষ্ট অসন্তোষ থেকে রমজান মাসে জেরুজালেমজুড়ে অস্থিরতা শুরু হয়েছিল।

তার ধারাবাহিকতায় গাজা থেকে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে হামাস রকেট ছুঁড়লে বেঁধে যায় সংঘর্ষ; যে সংঘর্ষ থামাতে বিভিন্ন দেশের একের পর এক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা হালে পানি না পেলেও শেষ পর্যন্ত মিশরের মধ্যস্থতায় আসে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা।

মিশরের প্রেসিডেন্ট আবুল ফাত্তাহ সিসিকে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি দুই পক্ষ মানছে কি না, তা পর্যবেক্ষণের জন্য মিশরীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ইসরাইল ও ফিলিস্তিন যাচ্ছেন। মিশরের পাশাপাশি কাতার এবং জাতিসংঘও দুই পক্ষকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর ভূমিকায় ছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি।

হামাসের শর্তের বেড়াজালে ইসরাইল : যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর ইসরাইলকে নতুন শর্তের বেড়াজালে ফেলেছে হামাস। গাজার ক্ষমতাসীন এই দলটি জানিয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তেলআবিব এটি মেনে চলবে ততক্ষণ পর্যন্ত হামাসও তা বাস্তবায়ন করবে।

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধানের গণমাধ্যমবিষয়ক উপদেষ্টা তাহের আল-নুনু গাজায় সাংবাদিকদের বলেন, গাজায় হামলা বন্ধের পাশাপাশি আল-আকসা মসজিদ ও শেখ জারাহ এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইসরাইল; এটা তেলআবিব যতক্ষণ পর্যন্ত মেনে চলবে ততক্ষণ পর্যন্ত হামাসও যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করবে।

এই শর্ত দেওয়ার মাধ্যমে হামাস মূলত বোঝাতে চেয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আগপর্যন্ত যুদ্ধে তারা শক্তিশালী অবস্থানে ছিল এবং ইসরাইল প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে তাকে পরিণতি ভোগ করতে হবে।

হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতা ওসামা হামদান লেবাননের আল-মায়াদিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ককে বলেন, ‘মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ আন্দোলন তথা হামাস এই নিশ্চিয়তা পেয়েছে যে, গাজার ওপর ইসরাইলের হামলা বন্ধ হবে।’

গাজা পুনর্গঠনে সহায়তা দেবে চীন : ফিলিস্তিনের বিধ্বস্ত গাজা ভূখণ্ড পুনর্গঠনে সহায়তা দেবে চীন। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা সিনহুয়া নিউজকে এই তথ্য জনিয়েছেন চীনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা কর্তৃপক্ষের (সিআইডিসিএ) মুখপাত্র তিয়ান লিন।

শুক্রবার সিনহুয়াকে তিয়ান লিন বলেন, ‘যুদ্ধে গাজা ভূখণ্ডের অবকাঠামোগত অবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানকার কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ প্রচুর সংখ্যক বাড়িঘর, আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা গুড়িয়ে গেছে। এই অবস্থায় চীন সরকারের সম্মতিক্রমেই সিআইডিসিএ ওই এলাকা পুনর্গঠনে সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিমান হামালা ও গোলাবর্ষণের কারণে যাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে, সবার আগে তাদের সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন আবাসন গড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সহায়তা করা হবে।’

গাজায় আল-জাজিরার প্রতিনিধি ইয়োমনা আল সাইদ জানিয়েছেন, ইসরাইলি বিমানবাহিনী হামলা শুরু করার পর গাজার বিপুল সংখ্যক মানুষ হামলা থেকে বাঁচতে সেখানে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া বেশিরভাগ মানুষের বর্তমানে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। কারণ বিমান হামলায় তাদের বসতবাড়িসহ প্রায় সর্বস্ব খুঁইয়ে গেছে এবং নতুন আবাসন করার মতো আর্থিক সামর্থ্য তাদের অধিকাংশেরই নেই।

গাজার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, অব্যাহত বিমান হামলায় সেখানে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিপুলসংখ্যক আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, অন্তত তিনটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গাজার বিশাল এলাকা এখনো বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছে।

বিদ্যুৎ না থাকায় সবচেয়ে বিপন্ন অবস্থায় আছেন গাজার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থাকা করোনা রোগীরা। জ্বালানি সংকট চলার কারণে হাসপাতালগুলো জেনারেটর চালু করতে পারছে না।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় গাজার এলাকার অধিকাংশ সড়ক ও মহাসড়ক ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানে স্থানে পড়ে আছে ধ্বংসস্তূপ। এ কারণে গাজার বেশিরভাগ এলাকায় জ্বালানি সরবরাহ বর্তমানে বন্ধ আছে, যেসব জায়গায় সরবরাহ চালু আছে তাও একেবারেই অনিয়মিত।

গাজা নামের নতুন ড্রোন উন্মোচন করলো ইরান : ইরান শুক্রবার বিশাল আকারের একটি নতুন ড্রোন উন্মোচন করেছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘গাজা’। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার নামে এটির নামকরণ করা হয়েছে। ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম পার্স টুডে এ খবর জানিয়েছে।

যুদ্ধবিরতি কার্যকরের দিনেই ইরান তাদের গাজা নামের এই নতুন ড্রোন উন্মোচন করলো। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি-র অ্যারোস্পেস ফোর্সের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলী হাজিজাদে বলেন, বড় আকৃতির কৌশলগত ড্রোন গাজা উন্মোচনের মধ্য দিয়ে দেশের ড্রোন শক্তি আরো অনেক বেড়ে গেছে।

আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই ড্রোনের কয়েকটি পরীক্ষা সম্পন্ন করে তা সামরিক বাহিনীতে যুক্ত করা হবে বলেও তিনি জানান।

পাকিস্তানে ফিলিস্তিনের পক্ষে মিছিলে বোমা, নিহত ৬ : পাকিস্তানে ফিলিস্তিনের পক্ষে একটি মিছিলে মোটরসাইকেল বোমা হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। দক্ষিণ পশ্চিমে আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী চমন নগরীতে শুক্রবার এ বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় পুলিশ প্রধান জাফর খান টেলিফোনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, পাকিস্তানের একটি কট্টর ধর্মীয় দল ফিলিস্তিনের পক্ষে ওই মিছিলের আয়োজন করেছিল। ওই দলের নেতার গাড়ি লক্ষ্য করে একটি মোটরসাইকেল চালিয়ে দেওয়া হয়, যেটিতে বোমা রাখা ছিল।

মিছিল শেষে লোকজন যখন ফিরে যাচ্ছিলেন তখনই বোমার বিস্ফোরণ ঘটে বলেও জানান তিনি।

নিউইয়র্কে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ : যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরীতে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। মার্কিন গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা এএনআই এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায়।

স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার নগরীর টাইমস স্কয়ারে দুই পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ফক্স নিউজ জানায়, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের হামাস সম্মত হয়েছে বলে ঘোষণা আসার কয়েক ঘণ্টার মাথায় টাইমস স্কয়ারে সংঘর্ষ হয়।

টাইমস স্কয়ারে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা তদন্ত করছে নিউইয়র্ক পুলিশ। এই ঘটনায় একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে নিউইয়র্ক পুলিশের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে এবারের সহিংসতায় ২৪০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। গাজায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ২৩২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০০ জনের বেশি নারী ও শিশু। আহত হয়েছে ১ হাজার ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি।

ইসরাইলের দাবি, গাজায় তাদের হামলায় কমপক্ষে ১৫০ জন ‘সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে। অবশ্য ইসরাইলি হামলায় সংগঠনের সদস্যদের প্রাণহানির বিষয়ে হামাস কোনো তথ্য দেয়নি। ইসরাইলের ভাষ্য, সংঘাতে গাজা থেকে প্রায় ৪ হাজার রকেট ছোঁড়া হয়েছে। রকেটে ২ শিশুসহ অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে। আর আহত হয়েছে অন্তত ৩৩০ জন।

ইসরাইল-ফিলিস্তিনের চলমান সংঘাতের সূত্রপাত মূলত গত ১৩ এপ্রিল। পবিত্র রমজান মাসের প্রথম রাতে জেরুজালেমে দামেস্ক গেট বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় সেদিন পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলি পুলিশের সঙ্গে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। এরপর থেকেই উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহ এলাকায় কয়েকটি ফিলিস্তিন পরিবারকে উৎখাতের মাধ্যমে।

২ মে শেখ জারাহ এলাকায় ইসরাইলি পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়। উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ জারাহ এলাকায় ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে উৎখাতের বিষয়ে ইসরাইলের সুপ্রিম কোর্ট ৯ মে শুনানি পিছিয়ে দেন। তবে এতে উত্তেজনা থামেনি। ১০ মে পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এরপর হামাস রকেট হামলা চালালে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন থেকে বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। হামাসও পাল্টা জবাব দিতে থাকে।

ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মধ্যে এবারের সংঘাতকে বলা হচ্ছে ২০১৪ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত। ২০১৪ সালের ওই সংঘাতে ২ হাজার ২৫১ ফিলিস্তিনি নিহত হন। ইসরাইলের পক্ষে প্রাণহানি ছিল ৭৪, যাদের অধিকাংশই সেনাসদস্য।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads