• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
কোয়ারেন্টাইনেও হয়রানির শিকার বাংলাদেশিরা

সংগৃহীত ছবি

মধ্যপ্রাচ্য

কোয়ারেন্টাইনেও হয়রানির শিকার বাংলাদেশিরা

  • রবিউল হক
  • প্রকাশিত ৩০ মে ২০২১

সৌদি আরবের নতুন নিয়ম অনুযায়ী সেখানে পৌঁছেই ৭ দিনের জন্য হোটেলে বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এতে প্রবাসীদের জন্য বাড়তি খরচের বোঝা হলেও সেখানে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। পৌঁছানোর পর কোয়ারেন্টাইনসহ দুই দফায় তাদের করোনা পরীক্ষাও করাতে হচ্ছে। দুবার নেগেটিভ এলে সপ্তম দিনে হোটেল ছাড়া যাবে। কিন্তু কোয়ারেন্টাইন শেষ হওয়ার পরও দেখা দিয়েছে নতুন বিপদ। কোনো কোনো হোটেল সাত দিন পার হলেও করোনা পরীক্ষা করাচ্ছে না সৌদি কর্তৃপক্ষ। আবার কোথাও নমুনা নিলেও রিপোর্ট ছাড়াই হোটেল থেকে বের করে দিচ্ছে কর্মীদের। ফলে দ্বিতীয় দফার টেস্ট রিপোর্ট পাওয়া নিয়ে বিপদে আছেন প্রবাসী কর্মীরা। রিপোর্ট ছাড়া হোটেল থেকে বের হলে সৌদি সরকারের জরিমানা বা শাস্তির আতঙ্কে রয়েছেন তারা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি সৌদি আরবের পাবলিক প্রসিকিউশন নতুন করে নিয়ম করে যদি কেউ করোনাভাইরাস ছড়ায়, তাকে ৫ বছরের জেল এবং সর্বোচ্চ ৫ লাখ সৌদি রিয়াল জরিমানা করা হবে। যদি সেই ব্যক্তি প্রবাসী হয়, তবে তাকে শাস্তি দেওয়ার পর সৌদি আরব থেকে বিতাড়িত করা হবে। ওই ব্যক্তি কোনো দিন সৌদি আরবে আসতে পারবেন না। এ ছাড়া কোনো প্রবাসী সৌদি প্রবেশ করলে প্রথমে তাকে ৭ দিন নিজ খরচে হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে; যার খরচ ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকা। নতুন নিয়ম অনুযায়ী সৌদিতে প্রবেশের আগে হোটেল বুকিং আর ইনস্যুরেন্স ছাড়া কিছুতেই সৌদিগামী ফ্লাইটের বোর্ডিং পাস পাওয়া যাবে না।

প্রবাসী কর্মীদের অভিযোগ, হোটেলের মান অনুযায়ী খাবার ও সেবা দেওয়া হচ্ছে না বাংলাদেশি কর্মীদের। সিঙ্গেল রুম বুক করলেও হোটলে গিয়ে রুম শেয়ার করতে হচ্ছে অন্যদের সঙ্গে। আবার দ্বিতীয় দফায় করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া নিয়েও বিপদে আছেন তারা। এসব সমস্যা সমাধানে দূতাবাসের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রবাসীরা। 

জনশক্তি রপ্তানিকারক সংগঠন ‘বায়রা’র সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, সৌদি আরবের নতুন নিয়মের কারণে বাংলাদেশি কর্মীরা এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, আমরা এটা জানতাম। সৌদি সরকারের এই নিয়ম প্রবাসী কর্মীদের জন্য বাড়তি বোঝা। এই বোঝা বহনের ক্ষমতা আমাদের কর্মীদের নেই। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বাড়তি ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়ে পথে বসেছেন। এই নিয়ম বাতিল অথবা কোয়ারান্টাইন খরচ নিয়োগদাতাকে দেওয়ার জন্য কূটনৈতিক আলোচনা চালানোর পরামর্শ দেন তিনি। তাতে কাজ না হলে ফিলিপাইনের মতো কর্মী পাঠানো আপাতত বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে জানান তিনি। ফিলিপাইনের মতো আমরাও এই নিয়মের বিরুদ্ধে কর্মী পাঠানো এক মাস বন্ধ রাখলে তাদের সার্ভিস সেক্টরে কোনো লোক পাবে না। তখন এই নিয়ম প্রত্যাহার করতে বাধ্য হবে নিশ্চিত। এ ক্ষেত্রে আমাদের মনোভাব পাল্টাতে হবে। 

জানা গেছে, ফিলিপাইন সৌদি আরবের এই নতুন নিয়মের প্রতিবাদে কর্মী পাঠানো বন্ধ রেখেছে। ফিলিপাইনের শ্রম ও কর্মসংস্থান গত বৃহষ্পতিবার এক নোটিশে জানিয়েছে, সৌদি সরকারের নতুন নিয়ম প্রত্যাহার না করলে সে দেশে সব ধরনের কর্মী পাঠানো অস্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলো। কারণ, সৌদি আরবে কর্মী প্রেরণের চুক্তিতে নিয়োগকারী কোম্পানি কর্মীর স্বাস্থ্য ও করোনায় সুরক্ষাসংক্রান্ত ইনস্যুরেন্স ব্যয় বহন করবে। কিন্তু সৌদি সরকার কোয়ারেন্টাইন ব্যয় কর্মীর ঘাড়ে ফেলার বিষয়টি সুরাহা আগে হতে হবে। এ বিষয়ে সৌদি সরকারের পরিষ্কার ঘোষণা না আসা পর্যন্ত ফিলিপাইন থেকে সৌদি আরবে সব ধরনের কর্মী পাঠানো বন্ধ থাকবে।

এদিকে সৌদি প্রবাসী রমিজ মোহাম্মদ কাজ করেন দাম্মামে। ২৩ মে তিনি জেদ্দায় পৌঁছান। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম অবতরণের স্থান হিসেবে তিনি কোয়ারেন্টাইনে আছেন জেদ্দা পার্ক হোটেলে। সেখানে সাত দিন কোয়ারেন্টাইন শেষে যাবেন দাম্মামে।

গত শুক্রবার রমিজ মোহাম্মদ বলেন, এই হোটেলে মিসরীয় নাগরিকরাও আছেন। কিন্তু তাদের খাবারের মান ও আমাদের মানে অনেক তফাত। সবাই সমান টাকা দিচ্ছি। তারপরও বৈষম্য। এই হোটেলে আমাদের প্রতি রুমে দুজন করে দিয়েছে। আজ রাতে (শুক্রবার) আমার কোয়ারেন্টাইন শেষ হবে। কিন্তু এখনো আমার করোনা পরীক্ষা হয়নি। কে কোয়ারেন্টিনের ছাড়পত্র দেবে, কিছুই বুঝতে পারছি না।

একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন হাবিব মজুমদার। তিনি বলেন, ‘যে হোটেলে উঠেছি তার খাবার খাওয়ার মতো নয়। আমার অ্যাপে কোয়ারেন্টাইনের সময় আরো ১১ ঘণ্টা দেখাচ্ছে। অথচ হোটেলের লোকজন বলছে, আমি এখন যেতে পারব। হোটেল প্যাকেজের মধ্যেই ছিল ট্রান্সপোর্ট, খাবার ও দুবার করোনা টেস্ট। এর জন্য খরচ হয়েছে ৬৫ হাজার ৬০০ টাকা। অথচ করোনা টেস্টের জন্য নমুনা নিয়ে কোনো রিপোর্ট ছাড়াই বের করে দিচ্ছে হোটেল থেকে। আবার আমার কোম্পানি বলে দিয়েছে, করোনার রিপোর্ট ছাড়া তারা আমাকে গ্রহণ করবে না।’

জানা গেছে, সৌদি এয়ারলাইন্স জেদ্দার জন্য ন্যূনতম ৫৫ হাজার এবং রিয়াদের জন্য ৬৫ হাজার টাকা খরচ হিসাবে নিচ্ছে। সাত দিন হোটেলে থাকার পাশাপাশি এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে যাওয়ার গাড়ি, খাবার, করোনা পরীক্ষার খরচ সেখানে অন্তর্ভুক্ত। সৌদি সরকারের নতুন নিয়ম মানতে হলে সে দেশের বিভিন্ন মানের হোটেল, সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট বাবদ খরচ নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে রিয়াদের জন্য ৮৮৯টি, জেদ্দার জন্য ৫৪১টি, দাম্মামের জন্য ৩৭৬টি, মদিনার জন্য ৩৫৩টি, তাবুকের জন্য ৭২টি, আল কাশিমের জন্য ৯৯টি, তাইফের জন্য ২২৮টি হোটেল ও সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট  নির্ধারণ করেছে। মান অনুযায়ী সেগুলোর ভাড়াও বিভিন্ন রকমের। কোনো কোনো হোটেলে রুম শেয়ার করার সুযোগও আছে। ৭ দিন থাকার জন্য তিন তারকা মানের হোটেলে থাকা-খাওয়া, দুবার করোনা টেস্ট করাসহ খরচ পড়বে প্রায় ২ হাজার ৪২৫ সৌদি রিয়াল, যা বাংলাদেশি ৫৪ হাজার ৮৩৯ টাকার সমান। চার তারকা মানের হোটেলে থাকা-খাওয়া, দুবার করোনা টেস্ট করাসহ খরচ পড়বে প্রায় ৩ হাজার ১০ রিয়াল, যা বাংলাদেশি ৬৮ হাজার ৬৮ টাকার সমান। পাঁচ তারকা মানের হোটেলে থাকা-খাওয়া, দুবার করোনা টেস্ট করাসহ খরচ সাড়ে চার হাজার রিয়াল থেকে শুরু। সৌদি আরবে বেশির ভাগ হোটেলে বুকিংয়ের টাকা নন রিফান্ডেবল। ফলে কোনো কারণে কেউ সৌদি আরব যেতে না পারলে হোটেলের জন্য বুকিং করা টাকা ফেরত পাবেন না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads