• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

বিবিধ

সাফল্য আসে না, ছিনিয়ে আনতে হয়

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০৮ মে ২০২১

সাফল্য আসে না, ছিনিয়ে আনতে হয়। লক্ষ্যে অবিচল থেকে একাগ্রচিত্তে অবিরাম সাধনায় সাফল্য মেলে।- কথাগুলো বলছিলেন সময়ের সফল ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঞা। তিনি একাধারে একজন শিক্ষক, গীতিকবি, লেখক ও দক্ষ ব্যবসায় সংগঠক।

তিনি শিক্ষকতা করছেন রাজধানীর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট গার্লস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে। নিজের প্রতিষ্ঠান রিজ ট্যুরিজম প্রা. লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। গান লিখছেন অডিও ইন্ডাস্ট্রির জন্য। মাধ্যমিক সৃজনশীল হিসাববিজ্ঞান, মাধ্যমিক ক্যারিয়ার শিক্ষা, এনসিটিবির শিক্ষক কারিকুলাম গাইড-এর সহলেখকও তিনি। এছাড়া নিয়মিত লিখছেন বিভিন্ন পত্রিকার শিক্ষাপাতায়।

সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয়েছিলো এই গুণী ব্যক্তিত্বের। কথায় কথায় জানালেন কিভাবে এক হাতে এতোকিছু সামলান। তাঁর সাথে আলাপচারিতার কিছু অংশ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-

- আপনি শিক্ষকতা করছেন, কাব্যচর্চা করছেন, লেখালেখি করছেন আবার ব্যবসাও দেখছেন। কোন কাজটি বেশি উপভোগ করেন?

- ভালোলাগা থেকেই একে একে সবগুলো কাজের সাথে জড়িয়েছি। কর্মজীবনের শুরু হয়েছিলো শিক্ষকতা দিয়ে। অল্প দিনেই কাজটা খুব উপভোগ্য হয়ে ওঠে। সেই ভালোলাগা নিয়ে এখনো আছি এই পেশাতেই। কাজেই শিক্ষকতাই বেশি উপভোগ করি।

- শিক্ষকতায় সাফল্য লাভের উপায় কী?

- প্রথম কথা হলো কাজটি ভালো লাগতে হবে। শিক্ষার্থীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক স্থাপন করে আস্থা ও নির্ভরতার জায়গা তৈরি করতে হবে। বিষয়জ্ঞান, আগ্রহ, আন্তরিকতা, সততা, নিরপেক্ষতা, সংবেদনশীলতা ও পরিশ্রম অপরিহার্য। শিক্ষার উদ্দেশ্য অর্জনে এবং দেশের জন্য সৎ, দক্ষ ও আদর্শবান সুনাগরিক তৈরির কাজে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারাই শিক্ষকতার সাফল্য।

- আপনি একজন গীতিকবি। আপনার লেখা বেশ কিছু গান শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে। গান নিয়ে নতুন কী করছেন?

- গান লেখা আমার শখের কাজ। ছাত্রাবস্থায় অনেক গানের কবিতা লিখেছি। সেগুলো আসলে গান হয়ে উঠেনি। পরে বরেণ্য গীতিকার মিল্টন খন্দকারের সাহচর্যে এসে পুনরায় গীতিকাব্য রচনায় মনোনিবেশ করি। আমার লেখা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন বেলাল খান, কাজী শুভ, প্রতীক হাসান, ইমন খান, পূর্ণ চন্দ্র রায়, উপমা, বৃষ্টিসহ আরো অনেকে। আমার লেখা ও সুরে উপমার গাওয়া 'আদরে আদরে' শিরোনামের গানটির অডিও মুক্তির অপেক্ষায় আছে। এছাড়া 'জীবন নদী' শিরোনামের আরেকটি গানে সুরারোপ করা হয়েছে। গুণী শিল্পী ফাহমিদা নবীকে দিয়ে এই গানটি করানোর ইচ্ছা আছে।

- মিউজিক ভিডিও নিয়ে কিছু বলুন। আপনার কাছ থেকে জানতে চাই- গান শোনার বিষয় নাকি দেখার বিষয়?

- গান শোনার বিষয় আবার দেখারও। প্রথমত গান শোনার বিষয়। আশির দশক পর্যন্ত এদেশের গানের শ্রোতারা রেডিও নির্ভর ছিল। সহজ কথার যে সব গান রেডিওতে বার বার বাজানো হতো, মানুষের সুখ-দুঃখের অনুভূতিকে ছুঁয়ে যাওয়া সে সব গানই জনপ্রিয় হয়েছিলো। এক পর্যায়ে অডিওতে গান শোনার ব্যবস্থা চালু হলে বাণিজ্যিক এলবামের অনেক গান শ্রোতাপ্রিয়তা পায়।বিভিন্ন সামাজিক উৎসব আয়োজনে মাইক বাজানো হতো যা একসাথে বহুজনকে গান শুনাতো। দেখার তেমন ভালো ব্যবস্থা না থাকায় গান শুনতেই হতো।

- এবার আসা যাক গান দেখার বিষয় কি না?

- হ্যাঁ! গান দেখারও বিষয়। একথা পুরনো আমলের অনেকেই মানতে চাইবেন না। তবে এটাও সত্য যে এদেশের জনপ্রিয় প্রায় সব গানই সিনেমার গান। সিনেমায় গানের সঠিক চিত্রায়ন দর্শকের সুখ-দুঃখের অনুভূতিকে নাড়িয়ে দিতো। তাছাড়া একথা সবাই জানি - শুধু শোনার চেয়ে 'শোনা এবং দেখা' অধিক কার্যকর। প্রযুক্তি জ্ঞানে অগ্রজ পশ্চিমা বিশ্বে যুগপৎ ভাবে গান দেখা ও শোনার ট্রাডিশন বহু পুরনো। সে সব দেশে সেরা গান নির্বাচনে গানের ভিডিওকেও মূল্যায়নে আনা হয়। সে ধারায় এদেশে থ্রি জি চালু হলে আমূল বদলে যায় আমাদের গানের বাজার। গান শুনতে রেডিও, টেলিভিশন, সিনেমার পরিবর্তে মানুষ বেছে নেয় স্মার্ট ফোন। ভিডিও না করলে এখন গান চলে না। এই বাস্তবতা না মেনে উপায় কী।

- অনেকেই বলে থাকেন এখনকার গান বেশি দিন টিকবে না। আপনার মতামত কী?

- আমি বলি এর প্রয়োজন আছে কী? দেড় যুগের ব্যবধানে কার্ডফোন পদ্ধতি থেকে সেল ফোন, টুজি, থ্রিজি হয়ে ফোরজিতে পৌঁছে গেছি আমরা। যে যুগে ইউটিউবে সার্চ করলে পৃথিবীর তাবৎ গান সামনে এসে হাজির হয় সেখানে একটি গান কেন মানুষ যুগ যুগ ধরে শুনবে! এসব সনাতনী ধারণা এখন অচল। একটি সুন্দর গোলাপ সাত দিনে ফোটে তিন দিন মোহিত করে এবং পরের দিন ঝরে যায় আরেক নতুনকে স্থান করে দিতে। তার যেমন চিরস্থায়ী হবার প্রয়োজন নেই তেমনি একটি গানেরও। নতুন একটি গান হবে, ভিডিও হবে, বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। দেশ বিদেশের কোটি মানুষ তা দেখবে -শুনবে, কাড়াকাড়ি -মাতামাতি হবে, পুঁজি উঠবে, মুনাফা হবে ব্যাস। আবার নতুন কিছু হবে।

- শোনা যায় এখন যে সব গান হচ্ছে সেগুলো শুদ্ধ নয়। শ্রোতারা কোনটা চায়, শুদ্ধ গান নাকি ভালো গান?

- শুদ্ধতার চিরস্থায়ী কোন মানদণ্ড নেই। সময়ে সময়ে মানুষ শুদ্ধতার মানদণ্ড ঠিক করে দেয়। একথা ভুলে গেলে চলে কি করে যে, পথ পথিক বানায় না বরং পথিকই পথ বানায়। ১১০০ শতকে শুরু হওয়া বাংলা গানের পথচলায় দিক বদলেছে বার বার। ১৯০০ শতকে এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা গানের একটি কাঠামো ঠিক করে দেন। (আস্থায়ী, অন্তরা, সঞ্চারী, আভোগ)। তার অনুজ কাজী নজরুল ইসলাম সে ধারাবাহিকতায় গানের কথা লিখে গেছেন। মূলত পঞ্চকবিদের অন্তর্ধানের পর খুব দ্রুত সে কাঠামোতে পরিবর্তন আসে। (আস্থায়ী, ১ম অন্তরা,২য় অন্তরা)। ভাষা বৈচিত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। গানে সাধু ভাষার ব্যবহার কমতে কমতে একসময় বন্ধ হয়ে যায়। প্রকাশ ভঙ্গি বদলায়। গান রচনায় ছন্দের চেয়ে বক্তব্য (গল্প) উপস্থাপনার মুন্সিয়ানাই প্রধান বিবেচ্য হয়ে উঠে।একবিংশ শতকের এই পর্যায়ে এসে গানের কাঠামোকে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে ফেলা হয়েছে। অন্তরার সংখ্যা কম বেশি করা হচ্ছে প্রয়োজনানুযায়ী। এখন গানে ব্রিজ লাইন ব্যবহার করাও আবশ্যক কর্ম বলে মনে করা হয় না। সুশিক্ষিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিটোল ছন্দের রবীন্দ্র সংগীত যেমন স্বার্থক হয়েছে তেমনি স্বশিক্ষিত লালনের লালনগীতি ও ইতিহাসের অপরিহার্য অংশ হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে আছে।সুতরাং আমি বলি ভালো গান চাই।

- বিভিন্ন পত্রিকার শিক্ষাপাতায় আপনার লেখা আসে নিয়মিত। লেখালেখিতে সময় দেন কিভাবে?

- শিক্ষকতা পেশায় আছি বলে লেখাপড়ার সাথেই থাকি সবসময়।বই আমার প্রাণ। বইয়ের সাথেই বসবাস। পাঠের বিষয়গুলো ই আমার লেখালেখির প্রধান উপজীব্য। বিভিন্ন সময়ে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক সমকাল পত্রিকায় লিখেছি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের মাধ্যমিক হিসাববিজ্ঞান বইয়ের পরিমার্জন করেছি। শিক্ষক কারিকুলাম গাইড (টিসিজি)'র সহলেখক হিসাবে কাজ করেছি। এছাড়াও আমার রচিত মাধ্যমিক পর্যায়ের একাধিক সহায়ক পুস্তক রয়েছে।

- সামনে কোন বই আসছে?

- সামনে একটি ছড়ার বই প্রকাশের ইচ্ছে আছে। পাণ্ডুলিপি তৈরির কাজ প্রায় শেষ। আগামী বই মেলায় পাওয়া যাবে ইনশা আল্লাহ।

- এতো কিছু সামলে ব্যবসা দেখেন কখন?

- লোকজন যাকে ১ দিন বলে আমি তাকে ২৪ ঘণ্টা বলি। প্রতিটা সেকেন্ড আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি পূর্ণ ব্যস্ত থাকার মতো কাজই নেই আমার হাতে। কাজকে আমি উপভোগ করি।কাজের মধ্যে থাকাটাই আমার কাছে আনন্দের।

- আপনার ট্রাভেল ব্যবসায় নিয়ে কিছু বলুন।

- আমি ভ্রমণ করতে ভালোবাসি। দলবল নিয়ে ঘুরতে পছন্দ করি। সেই ভালোলাগা থেকেই আমার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান 'রিজ ট্যুরিজম প্রা. লিমিটেড' গড়ি। দেশে বিদেশের অনেকগুলো প্যাকেজ বিক্রি করি আমি। এছাড়া ভ্রমণ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সেবা যেমন - টিকেটিং, হোটেল বুকিং, ট্রান্সপোর্টেসন, ভিসা প্রসেস এর মতো কাজগুলোও করে থাকি।

- আপনার অনলাইন টিকেটিং পোর্টাল আছে। দেশে অনলাইন টিকেটিং এর ব্যবসা কেমন?

- 'ইজি টিকেট বিডি ডট কম' আমার অনলাইন টিকেটিং পোর্টাল। এটা থেকে দেশের সব বড় শহরে যাতায়াতের জন্য বাসের টিকেট কাটা যায়।এদেশে বাসের টিকেট অনলাইনে কাটার ব্যাপারটা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। ভবিষ্যতে এর ভালো সম্ভাবনা আছে। এখন পর্যন্ত দেশের মোট বাসের টিকেটের ৫ ভাগের কম অনলাইনে কাটা হয়।

- তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে কিছু বলুন।

- কিছু করার আগে কী করবো, কেনো করবো এবং কীভাবে করবো এই তিন প্রশ্নের উত্তর ঠিক করে নিতে হবে। যে কোন ব্যবসায়ে টাকা খরচ করা খুব সহজ, বিনিয়োগকৃত টাকা তুলে আনার কাজটাই কঠিন। পণ্য বা সেবা সংগ্রহ বা উৎপাদন করা যত সহজ সেগুলো ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা ততো সহজ কাজ নয়। এইসব চ্যালেঞ্জ জেনেই নতুন ব্যবসায়ে আসা উচিৎ।

- আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

- ধন্যবাদ আপনাকেও।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads