• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
মানহীন খাবারের লাগামহীন দাম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার খাবারের দোকান

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

মানহীন খাবারের লাগামহীন দাম

  • শাহিনুর রহমান শাহিন, জাবি
  • প্রকাশিত ০৫ এপ্রিল ২০১৯

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার খাবারের দোকানগুলোয় থামছে না মানহীন খাবার পরিবেশনের প্রবণতা। একাধিক দোকানদারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত দাম আদায়ের অভিযোগও রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির হাজারো শিক্ষার্থীর। তাদের দাবি, মানহীন খাবারের দাম নিয়ে রীতিমতো ডাকাতি চলছে এখানে। এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার পদক্ষেপ নিলেও তোয়াক্কা করছেন না দোকানদাররা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক হলগুলোর ডাইনিং এবং ক্যান্টিনের খাবারের মান অনেক নিম্নমানের হওয়ায় শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসা বটতলার খাবারের দোকানগুলো। পুরো বটতলায় প্রায় ৬০টি খাবারের দোকান রয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন সকাল, দুপুর ও রাতে খাওয়া-দাওয়া করেন। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকবার বটতলাস্থ খাবারের দোকানগুলোর মূল্য তালিকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দোকান-মালিকরা প্রথম দিকে খাবারের মূল্য তালিকা মেনে দাম রাখলেও কয়েক দিন যেতে না যেতেই প্রশাসনের টানানো মূল্য তালিকা সরিয়ে ফেলে দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির অজুহাত তুলে মানহীন খাবার পরিবেশন করে অতিরিক্ত দাম আদায় শুরু করেন। দোকান-মালিকদের এমন কর্মকাণ্ডে রীতিমতো বিব্রত সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিচু বটতলার “বাংলার স্বাদ কনফেকশনারী অ্যান্ড রেস্তোরাঁ, নূরজাহান রেস্টুরেন্ট এবং জান্নাতুল” ও উঁচু বটতলার সালাম, নানার দোকানসহ একাধিক দোকানে ভাতের প্লেট ৮ টাকা যা তালিকা অনুযায়ী ৬টা দাম রাখার কথা। ভাজি ১৫ টাকা যা তালিকা অনুযায়ী ১০ টাকা। এছাড়া খাসির মাংস বিক্রি করা হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা, যা তালিকা অনুযায়ী ৬০ টাকা। অন্যদিকে গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে ৮০ টাকা, যা মূল্য তালিকায় ৬৫ টাকা  রয়েছে।

উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষার্থী দাবি করে বলেন, ১ টুকরো গরু, খাসি বা ব্রয়লার মুরগির মাংস ৮০, ৯০, ৪০ টাকা করে দোকানদাররা নিচ্ছে। তাছাড়া খাবারের রান্না ও পরিবেশ অনেক নিম্নমানের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মিরাজ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, নূরজাহান রেস্টুরেন্টের খাবারের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। খোলা পাম অয়েল, নিম্নমানের মসলা, লবণ দিয়ে তরকারি রান্না করেন। যা খেয়ে রীতিমতো পেটে গ্যাসসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলার স্বাদ অ্যান্ড কনফেশনারি রেস্তোরাঁর রান্নার জায়গা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তাছাড়া যারা রান্না করেন তারাও পরিষ্কার থাকেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, গরু ও মুরগির মাংস ৮০ টাকা রাখছে দোকানদাররা। কিন্তু তা প্রশাসনের নির্দেশিত তালিকা অনুযায়ী গরু ৬৫ টাকা এবং মুরগির মাংস ৪০ টাকা দামে রাখার নিয়ম রয়েছে।

নূরজাহান রেস্টুরেন্টের দোকান মালিক ফরমান আলীর কাছে খাবারের মূল্য বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাছ, মুরগি, গরুর মাংসসহ সব পণ্যদ্রব্যের দাম বেশি। তাই একটু দাম বেশি করে রাখছি। বাড়তি দাম আদায়ের মূল্য তালিকা দেখতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

এদিকে অনেক দোকানে গরুর মাংসের পরিবর্তে মহিষের মাংস ‘গরুর মাংস’ বলে বিক্রি করছে এমন অভিযোগও উঠেছে কয়েকজন দোকানদারের বিরুদ্ধে।

শুধু যে খাবারের মান বা দামের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তা নয় একাধিক দোকানে বাসি খাবার রাখার অভিযোগও করেছেন তারা। শিক্ষার্থীরা দিনের পর দিন বাসি খাবার পরিবেশনের জন্য দোকানদারদের নিষেধ করলেও অবস্থার কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এ বিষয়ে বটতলার খাবারের দোকানগুলোর তদারকির দায়িত্বে থাকা আ.ফ.ম কামালউদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ ফিরোজ উল হাসান এবং বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ ফরিদ আহমেদ বলেন, প্রশাসন থেকে খাবারের নির্দিষ্ট মূল্য তালিকা দেওয়া হয়েছে। মূল্য তালিকা না মেনে কেউ অতিরিক্ত দাম নিলে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে বটতলার দোকানগুলোর খাবারের মান ও দাম নিয়ে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে। নিম্নমান এবং বাসি খাবার বিক্রি বটতলায় পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কেউ নিম্নমানের বাসি খাবার বিক্রি করলে তার জরিমানাসহ দোকান বরাদ্দ বাতিল করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads