• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

পুঁজিবাজারের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হচ্ছে না

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

নতুন নতুন বিনিয়োগ পণ্য প্রবর্তন করে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নের সুযোগ থাকলেও তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামোর দুর্বলতার কারণে তা আটকে আছে। দেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোবাইল অ্যাপের অপ্রতুল সক্ষমতার কারণে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেই অ্যাপ থেকে আর লেনদেন করা যাচ্ছে না।

অ্যাপে ঢুকলেও ক্রয়-বিক্রয় আদেশ দ্রুত সম্পন্ন না হওয়ায় মুহূর্তেই দর পাল্টে যায়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ বিনিয়োগকারী। সম্প্রতি এক আলোচনায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পুঁজিবাজারের তথ্যপ্রযুক্তির সক্ষমতার অভাবের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ডিএসইতে অতিরিক্ত শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের চাপ এলে সার্ভার আর কাজ করতে পারে না। অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) এখনো এ ধরনের লোড নেওয়ার মতো ক্ষমতা অর্জন করেনি। ওএমএস হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনাবেচার আদেশ দিতে পারেন। তারপর সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষ্পত্তি হয়। ব্রোকারেজ হাউসগুলো ওএমএস ব্যবহার করে থাকে। এক্স-স্ট্রিম আইনেট নামে ব্যবহূত বর্তমান ওএমএসটি কিনতে ২০১৪ সালে নিউইয়র্কভিত্তিক কোম্পানি ফ্লেক্সট্রেড সিস্টেমসের সঙ্গে চুক্তি করে ডিএসই। সিস্টেমটি ২০১৬ সালে চালু হয়। এর আওতায় ডিএসই মোবাইল অ্যাপটিও পরিচালিত হচ্ছে। গুগল প্লে স্টোরে অ্যাপটির নিচে মন্তব্যগুলো পড়লে বোঝা যায়, এটি ব্যবহারে বিনিয়োগকারীরা কী ধরনের সমস্যার মুখে পড়ছেন। এমাদুল হক নামে এক বিনিয়োগকারী অ্যাপটি আপডেট করার অনুরোধ জানিয়ে লিখেছেন, যথাযথভাবে লেনদেন করা যায় না, অনেক ধীরগতির। লগ-ইন করতে প্রচুর সময় নেয়, কখনো কখনো পুরনো তথ্য দেয়, এমনকি কখনো কেনাবেচার আদেশ সময়মতো নেয় না বা প্রত্যাখ্যান করে। কেনাবেচা যথার্থভাবে সম্পন্ন করতে প্রতি সেকেন্ডই যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ, তাই অ্যাপটি দ্রুততর হওয়া উচিত।

শফিকুল ইসলাম সবুজ নামে একজন লিখেছেন, দৃশ্যত অ্যাপটি ভালোই কাজ করে। তবে একটাই সমস্যা, এটা মাঝে মাঝে দেখায়, ডেটাবেইজে ব্যবহারকারীর প্রবেশাধিকার নেই এবং ব্রোকারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। কিন্তু পরক্ষণে আবার স্বাভাবিক লগ-ইন হয়। মেরিনা পারভীন লিখেছেন, মাঝে মাঝে এটা খুবই স্লো হয়ে যায়। তখন আমার কাঙ্ক্ষিত দর হারিয়ে ফেলি। অনেক সময় এটা কেনা শেয়ার সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয়। এটাকে হালনাগাদ করতে হবে। বিজয় কুমার নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, একটা ক্রয় বা বিক্রয় আদেশ দিলে সেটা সম্পন্ন হতে এক মিনিট সময় লাগে। দেখা যায়, আমি যে দামে কিনতে চেয়েছি, এক মিনিটে সেই দাম আর থাকছে না। আবার আমি যে দামে বিক্রি করতে চেয়েছি, সেই দাম থাকছে না।

এ বিষয়ে ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) জিয়াউল করিম বলেন, কেনার সময় সফটওয়্যারটি এক লাখ ইউজার সাপোর্ট করার কথা ছিল। এর মধ্যে কিছু ইউজার শুধু পরিদর্শন, আর কিছু শুধু লেনদেন করতে পারবে। দেশে প্রায় ৫২ হাজার বিনিয়োগকারী মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করেন, এক হাজার ছাড়া বাকিরা সবাই সক্রিয় লেনদেনকারী। এদের ৫০ শতাংশ আবার নিয়মিত লেনদেন করেন। সকালে একসঙ্গে অনেকগুলো অর্ডার চলে এলে তখন সমস্যা হয়ে যায়। অ্যাপটি প্রতি সেকেন্ডে ২ হাজারের মতো লেনদেন সম্পন্ন করতে পারে বলে জানান জিয়াউল করিম।

তথ্যপ্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ১০ বছর আগে তিন হাজার কোটি টাকা লেনদেনেও কোনো সমস্যা হয়নি। এখন দুই হাজার কোটি টাকাতেই সমস্যা হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, আগে ক্রয় বা বিক্রয় আদেশ দেওয়ার সময় একটা একটা দেওয়া যেত না, মিনিমাম কোয়ান্টিটি আদেশ দিতে হত। এখন লাখ লাখ আদেশ একসঙ্গে আসে, তাই সমস্যা হয়।

ডিএসইর তথ্যপ্রযুক্তির সমস্যার সমাধানে ওএমএসের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ‘ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার’ স্থাপন ও ডেটা সেন্টারের সক্ষমতা বাড়ানোর কথাও আসছে। ডিএসই চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের লেনদেন দেড় হাজার ছাড়ালেই কিছু সমস্যা হয়। এজন্য মোবাইল অ্যাপে লেনদেনের সময় কমানো হয়েছে। তাতে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ক্ষমতা বাড়াতে ওএমএস সরবরাহকারী ফ্লেক্সট্রেড শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে। এখন যেই অ্যাপ চলছে, প্রথমে তার উন্নয়ন করা হবে। বছর দুয়েক পরে নতুন অ্যাপ তৈরি করা হবে।

ডিএসইর তথ্যপ্রযুক্তির সমস্যা সমাধানে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার তৈরির পরিকল্পনায় হাত দিয়েছি। এ বছর জুন মাসের আগে ডেটা সেন্টার হয়ে যাবে। ডিএসইর তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়নে পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ডিএসইর আইটি অবকাঠামো উন্নয়নে স্বাধীন তদন্ত হয়েছে। তদন্ত দল মতামত দিয়েছে, সে অনুযায়ী কাজ চলছে। চার থেকে পাঁচ মাস লাগবে সব কিছু ঠিক হতে। আর তথ্যপ্রযুক্তির স্ক্ষমতা বাড়াতে পারলে নতুন পণ্য পুঁজিবাজারে আনতে পারব। ডিএসইর তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন না হওয়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকারি বন্ড, এসএমই কোম্পানির শেয়ার, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড লেনদেন হেজ ফান্ড এবং দেশের বাইরে থেকে লেনদেনে সমস্যা হচ্ছে। ডিএসইর তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে সুপারিশ নিয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্তাধীন। এ নিয়ে এখন আমরা কথা বলতে পারব না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads