• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
পালিয়ে যাচ্ছে অর্থ পাচারকারীরা!

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

পালিয়ে যাচ্ছে অর্থ পাচারকারীরা!

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১

দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার পরও আইনের ফাঁক গলে বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছে অর্থ পাচারের দায়ে অভিযুক্তরা। বিভিন্ন সময়ে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগসহ নানা অপরাধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্নীতিবাজদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার অনুরোধ জানায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। কিন্তু বেশ কয়েকজন দুর্নীতিবাজ আইনের ফাঁক গলে নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটিয়ে নির্বিঘ্নে চলে গেছেন বিদেশে।

একবার পালিয়ে যাওয়ার পর সহজে এসব অর্থ পাচারকারীকে আর দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। ফলে ধরােঁছায়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছে এসব দুর্নীতিবাজ। ফিরিয়ে আনাও যাচ্ছে না পাচার করা অর্থ। পরে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হলেও সফলতা আসে খুবই কম। জানা যায়, অর্থ পাচার ও দুর্নীতির অভিযোগে এ পর্যন্ত ২৫ থেকে ৩০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অনুরোধ জানায় দুদুক। কিন্তু তাদের অনেকেই বিভিন্নভাবে আইনের ফাঁক গলে চলে গেছেন বিদেশে। বর্তমানে দুদক বিদেশে অর্থ পাচারকারী ২৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সুযোগ বুঝে তারাও বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম জানান, দুদক সরাসরি কারো বিদেশ যাওয়া বন্ধ করতে পারে না। আইনে সেটা কাভার করে না। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী (রাইট টু মুভমেন্ট/ফ্রিডম অব মুভমেন্ট) কারো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যায় না। আইনের কোথাও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা বলা নেই। তাই আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পুলিশ ও ইমিগ্রেশনকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দেশত্যাগে বাধা দেওয়ার কথা জানাই। কিন্তু এসব ব্যক্তি আদালতে রিট করে নিষেধাজ্ঞা বাতিল করান। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরও এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয় বলে জানান তিনি।

কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুদক তদন্তের আগেই গণমাধ্যমে দুর্নীতির খবর প্রকাশের পরও কারো দেশত্যাগের বিরুদ্ধে দুদক ব্যবস্থা নিতে পারে না উল্লেখ করে দুদকের এই আইনজীবী বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। হয়তো সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করা যায় মাত্র।

বর্তমানে ব্যাংকবহির্ভূত চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা অর্থ পাচারের দায়ে অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার বিদেশ পালিয়ে আছেন। তার পালিয়ে যাওয়ার পরই বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের দেশত্যাগের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে যখন আলোচনা শুরু হয় তখনই তিনি বিদেশে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পিকে হালদারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। পরে তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মাধ্যমে ইন্টারপোলে আবেদনও করে দুদক।

জানা যায়, পিকে হালদার প্রথমে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এবং পরে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন। এসব কাজে তাকে সব ধরনের সমর্থন ও সহায়তা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এই দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে পিকে হালদার। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পৃক্ত এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

একইভাবে সদ্য সংসদ সদস্যপদ বাতিল হওয়া লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুলের বিরুদ্ধেও মানিলন্ডারিংসহ মানব পাচারের অভিযোগ আলোচনায় আসার মধ্যেই তিনি পালিয়ে যান কুয়েতে।

এদিকে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানও জানান, কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যায় না। তবে তিনি প্রশ্ন করেন, দুদকের মামলা ও তার বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার পরও পিকে হালদার কীভাবে দেশ ছেড়ে পালালেন?

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ তিন বছর আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, বিদেশে পালিয়ে থাকা বড় দুর্নীতিবাজকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনা হবে। কিন্তু তার ওই ঘোষণার ৩ বছর পরও একজন দুর্নীতিবাজকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।

এদিকে বংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে তার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে বেররকারি পর্যায়ে থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, পাচার করা অর্থের পরিমাণ প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই)-এর প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে প্রায় ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালে পাচার হয় ৯১১ কোটি ডলার। ২০১৫ সালে পাচার হয় ৫০ হাজার কোটি টাকা। জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে ১৪৮টি উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশের অর্থ পাচারের তথ্য দেওয়া হয়েছিল। তাতে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয় চীন থেকে। এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৯তম। ২০১৫ সালেও অর্থ পাচারের দিক থেকে বাংলাদেশ ছিল ১৯তম। এরপর অর্থ পাচারের বিষয়ে এখনো আন্তর্জাতিক কোনো গবেষণা প্রতিবেদন বের হয়নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads