• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

জাতীয়

অ্যান্টিবডি টেস্ট কবে হবে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ মার্চ ২০২১

কারো শরীরে নির্দিষ্ট কোনো রোগের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে কি না তা স্বল্প সময়ে জানা যায় অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে। এ কারণে করোনা মহামারীর শুরু থেকেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অ্যান্টিবডি টেস্টের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় মহামারীর প্রায় ১০ মাস পর গত ২৪ জানুয়ারি অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বলা হয়, এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে এখন থেকেই এটা চালু হলো। কিন্তু এখনো এটা চালু হয়নি। আদৌ চালু হবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

এখন কেবল গবেষণা কাজের জন্য অ্যান্টিবডি টেস্ট করছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। যদিও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিসহ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা একাধিকবার বলেছিলেন, টিকা দেওয়ার আগে অ্যান্টিবডি টেস্ট চালু করা দরকার। এতে যাদের শরীরে আগেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে তাদের বাদ দিয়ে বাকিদের টিকা দেওয়া যেত। টিকার অপচয় হতো না। শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেছিলেন, টিকা কে আগে পাবে, সেটা ঠিক করতে শরীরে অ্যান্টিবডির মাত্রা দেখতে হবে।  ১৭ সেপ্টেম্বর পরামর্শক কমিটিও তাদের সভায় অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি টেস্টের ওপর গুরুত্বারোপ করে। কমিটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিল, পিসিআর টেস্টের মাধ্যমে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হচ্ছে, যার পরিমাণ কম। এজন্য জাতীয় পরামর্শক কমিটি অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি টেস্টের জন্য একাধিকবার পরামর্শ দেয়। তাদের মতে, তিন পদ্ধতিতে (পিসিআর, অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি টেস্ট) কোভিড-১৯ পরীক্ষা কার্যক্রম পাশাপাশি থাকলে তা মহামারী মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

কোভিড-১৯ ল্যাবরেটরি পরীক্ষা সম্প্রসারণ নীতিমালা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী  বলেন, মহামারীর সময় ইনফেকশন কতজনের হয়েছে, সেটা অ্যান্টিবডি টেস্ট ছাড়া বলা যায় না। কতজনের শরীরে অ্যান্টিবডি হওয়ার পর পোস্ট কোভিড সিনড্রোমে মারা গেছেন, সেটা জানতেও এই টেস্ট দরকার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, কেবল অনুমোদন দিলেই হয় না, এর জন্য প্রয়োজনীয় সব করতে হবে। সেসবের কোনো প্রস্তুতি নেই। সরকার অনুমোদন দেওয়ার পরও কেন সময় লাগছে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার অনুমোদন দিল কখন? স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মুখের কথা কী সরকারি অর্ডার? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো একটি অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটেরও অনুমোদন দেয়নি। বিভিন্ন দেশে যেসব কিট ব্যবহার হচ্ছে সেখান থেকে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী সরকার প্রাথমিকভাবে কিছু কিট কিনে পরীক্ষার জন্য দেবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, অ্যান্টিবডি টেস্টের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হবে না। সরকারি সব হাসপাতালেও এই টেস্ট হবে না। যেসব হাসপাতালে আরটি-পিসিআর টেস্ট হচ্ছে, যেগুলো কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল, কেবল সেগুলোকে অনুমতি দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে টেস্টের মূল্য কত হতে পারে জানতে চাইলে ডা. ফরিদ বলেন, মূল্য ও কোন কিটস ব্যবহার হবে,  সেসব ঠিক হলেই আমরা অনুমতি দেব। এখনো চূড়ান্ত কিছু বলতে পারছি না।

কমিটির আরেক সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সবকিছু নিয়ে এত ঢিলেমি করলে কাজ আগাবে না। অ্যান্টিবডি টেস্ট খুব দরকার। কারণ ভ্যাকসিনে কাজ হচ্ছে কি না, কতটুকু কাজ হচ্ছে সেসব দেখার জন্যও অ্যান্টিবডি টেস্ট দরকার। লাখ লাখ টিকা দেওয়া হয়ে গেল, অথচ অ্যান্টিবডি টেস্ট শুরু করতে পারলাম না। এই টেস্ট করে টিকা দেওয়া হলে যার দরকার নেই, তাকে বাদ রেখে যার দরকার তাকে দেওয়া যেত।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন বলেন, গত বছরের ২১ ও ২৩ জুন দুই দফায় বৈঠক করে সংশ্লিষ্টরা অ্যান্টিবডি টেস্ট নীতিমালা চূড়ান্ত করে। সেটা আমাদের ওয়েবসাইটেও দেওয়া আছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ জানুয়ারি সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, অনেক দিনের দাবি ছিল অ্যান্টিবডি টেস্টের। আজ আপনাদের যখন বললাম তখন থেকেই এটা চালু হয়ে গেল। কিন্তু এখনো টেস্ট শুরু করতে পারেনি অধিদপ্তর। অধিদপ্তর বলছে, শিগগিরই চালু করা হবে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সরকারি হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাতে সময় লাগবে বলেও জানান তিনি। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads