• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
রোগী সামলাতে প্রস্তুত রাখতে হবে হাসপাতাল

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, নতুন মৃত্যু ৩০, আক্রান্ত ২৮০৯

রোগী সামলাতে প্রস্তুত রাখতে হবে হাসপাতাল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৩ মার্চ ২০২১

দেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের হার প্রতিদিনই বাড়ছে। শীতের সময়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা থাকলেও শনাক্তের হার ছিল নিম্নমুখী। গত ৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক শনাক্তের হার ছিল দুই দশমিক ৯২ শতাংশ। ১৮ ফেব্রুয়ারি ছিল দুই দশমিক ৬৮ শতাংশ, ১৯ ফেব্রুয়ারি ছিল দুই দশমিক ৮৫ শতাংশ। শীতের শেষে ফের বাড়তে শুরু করেছে রোগী। ১ মার্চ থেকে শনাক্তের হার চার শতাংশের ওপরে যায়। করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৮০৯। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। যে হারে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে হাসপাতালগুলোকে রোগীর ভিড় সামলানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে করোনা রোগীদের জন্য সাধারণ শয্যা রয়েছে ১০ হাজার ৪৩৭টি। এ মুহূর্তে ভর্তি আছে দুই হাজার ৫২২ জন। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র রয়েছে ৫৫৮টি। রোগী ভর্তি আছেন ২৮৫ জন। তবে রাজধানী ঢাকার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ১০টি সরকারি হাসপাতালের দুই হাজার ৩৮১টি শয্যার মধ্যে রোগী এক হাজার ৫৪২ জন। শয্যা ফাঁকা রয়েছে ৮৩৯টি। এই হাসপাতালগুলোর ১১৭টি আইসিইউর মধ্যে রোগী আছেন ৮৫ জন। অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত নয়টি বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণ শয্যা রয়েছে ৮৬৩টি, যার মধ্যে রোগী ৩৬৮ জন। আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৬৪টি আর রোগী আছেন ১২০ জন। করোনা ডেডিকেটেড একাধিক হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, গত কয়েক দিনে রোগী বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। এবারকার রোগীদের জটিলতা বেশি এবং দ্রুত তাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর পান্থপথের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক বলেন, জানুয়ারির শেষের দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভেবেছিল করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ওয়ার্ডটি আর রাখা হবে না। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রোগী বাড়তে শুরু করে। সংক্রমণ কমে আসতে থাকায় সরকার ডেডিকেটেড হাসপাতালের সংখ্যাও কমিয়ে আনে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল বলে কিছু রাখা ঠিক নয়, তাতে নন-করোনা আক্রান্ত রোগীদের ভোগান্তি হয়।

রোগী খুবই আগ্রাসীভাবে বাড়ছে বললেন সিলেটের একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দীন আহমেদ হাসপাতালের প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক। তার মতে, এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে তাদের হাসপাতালে ভীষণ চাপ পড়বে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জন ভর্তি হয়েছেন। ১২ শয্যার আইসিইউতে ১২ জন রোগী। ওয়েটিং লিস্ট বাড়ছে। হাসপাতালের জনবল যা ছিল, সেটা কিছুদিন আগেও বেশি মনে হচ্ছিল। রোগী কমে যাবে-এ ধারণা থেকে চিকিৎসকদের অনেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলিও হয়েছেন। সেখান থেকে তাদের আবার আনা কঠিন, কিন্তু রোগী তো বাড়ছেই। হাসপাতালে চিকিৎসকদের রোস্টার নিয়েও রীতিমতো অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, বলেন তিনি।

ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ঢাকার ভেতর কেবল পরিপূর্ণভাবে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল করোনা ডেডিকেটেড। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড দুই রোগীরই চিকিৎসা হয়। কিন্তু এখনই দেখা উচিত, সামনে যে ঢেউ আসছে তা সামলানোর মতো যথেষ্ট প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে কি না! কুর্মিটোলাতে যে পরিমাণ নার্সিং স্টাফ নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তাদের অনেককে এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া টিকাদান কার্যক্রমের জন্য এই দুই হাসপাতালেই একটা বড় সংখ্যক জনবল নিয়োজিত। এসবের কারণেও রোগী ম্যানেজমেন্ট কঠিন হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল ব্যবস্থার প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, রোগী বাড়ছে এবং আরো বাড়বে। এখনই হাসপাতালের সাধারণ শয্যা ও আইসিইউ বাড়াতে হবে। প্রতিটি হাসপাতালে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, অক্সিজেনসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়াতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল বলেন, হাসপাতালের প্রস্তুতি আগের তুলনায় ভালো থাকার কথা। তবে গত বছরে যেসব কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোকে আবার একই পর্যায়ে নিয়ে আসা উচিত।

রোগী বাড়ছে, তাই হাসপাতালের প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. ফরিদ উদ্দিন মিঞা বলেন, তাদের শয্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে কী পরিকল্পনা রয়েছে জানতে চাইলে বলেন, শুধু কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালেই রোগী ভর্তি রয়েছে। অন্যান্য হাসপাতালে বেড ফাঁকা। রোগী বাড়লে ঢামেক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, মিটফোর্ড হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরো ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে আট হাজার ৭২০ জনের। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৮০৯ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার ৩৭৮ জনে। গতকাল সোমবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ঢাকা সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ও বাড়িতে উপসর্গবিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৭৫৪ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন পাঁচ লাখ ২৪ হাজার ১৫৯ জন। সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২১৯টি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে আরটি-পিসিআর ল্যাব ১১৮টি, জিন-এক্সপার্ট ২৯টি, র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন ৭২টি। এসব ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ২৬ হাজার ১টি। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৫ হাজার ১১১টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার ২৩০টি।

গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৩৭ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৫২ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৩০ জনের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ, পাঁচজন নারী। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে চারজন। এ ছাড়া খুলনা ও সিলেট বিভাগে একজন করে রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ২৯ জন, বাড়িতে একজন।

মৃতদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরে ঊর্ধ্বে ২০ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে সাতজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে একজন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে একজন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন ১৫৪ জন ও আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৯১ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে এসেছেন এক লাখ দুই হাজার ৪১৯ জন। আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ৯২ হাজার ৩০৩ জন। এখন আইসোলেশনে আছেন ১০ হাজার ১১৬ জন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads