• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি: বিশ্বব্যাংক

ফাইল ছবি

জাতীয়

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি: বিশ্বব্যাংক

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৪ এপ্রিল ২০২১

রপ্তানি আয়, শক্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ ও চলমান টিকাদান কর্মসূচিতে ভর করে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রাথমিক লক্ষণগুলোও দৃশ্যমান বলে এক পর্যবেক্ষণে বলেছে বিশ্বব্যাংক। গতকাল সোমবার বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট-মুভিং ফরওয়ার্ড : কানেক্টিভিটি অ্যান্ড লজিস্টিকস টু স্ট্রেংদেন কমপিটিটিভনেস’ শিরোনামের এ প্রতিবেদনে এসব বলা হয়। 

এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এখনো ব্যাপক অনিশ্চয়তা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে দুর্বল লজিস্টিক ব্যবস্থা ও এ খাতের ব্যয়াধিক্যের কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে- যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৬ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি মাঝারি থাকতে পারে। তবে তা নির্ভর করছে চলমান টিকা কার্যক্রম কতটা কার্যকর থাকে, চলাচলের বিধিনিষেধ কত দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে এবং বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কত দ্রুত উন্নতি হয় তার ওপর। একই সঙ্গে করোনা নিয়ে নতুন অনিশ্চয়তা, বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ এবং সরকারের রাজস্ব আহরণে দুর্বল অবস্থা অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

করোনা মহামারীর কারণে প্রবৃদ্ধির গতি কমে গিয়েছিল। একই সঙ্গে দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো দেশের দারিদ্র্য হ্রাসের প্রবণতাও বিপরীত হয়েছে। তবে অর্থনীতি ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম দিকে কলকারখানা আবার চালু হয়েছে, রপ্তানিও আবার শুরু হয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামে শ্রমবাজারে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ধীরে ধীরে দরিদ্র ও বস্তি অঞ্চলে খাদ্য সুরক্ষা উন্নত হচ্ছে। তবে চলমান করোনা মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতিতে উচ্চঝুঁকি এখনো রয়েছে।

মার্সি টেম্বন বলেন, করোনায় অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা ইতিবাচক। তবে পুনরুদ্ধারের গতি নির্ভর করছে কত দ্রুত গণহারে টিকার ব্যবস্থা করা যায় তার ওপর। বিশ্বব্যাংক স্থিতিশীল পুনরুদ্ধারে সমর্থন জোগাবে। তবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দায় তৈরি পেশাক পণ্য চাহিদা কমে যেতে পারে। একই সঙ্গে অভিবাসী শ্রমিকদের কাজের সুযোগ সীমিত হতে পারে। চলমান মহামারী আর্থিক খাতের ঝুঁকিকে তীব্রতর করেছে। এ ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ, ব্যাংক ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা অন্যতম। তবে সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় (লজিস্টিক) উন্নতির মাধ্যমে পুনরুদ্ধারের গতি বাড়ানো এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। প্রতিযোগিতা সূচকে বাংলাদেশ ১৪১ দেশের মধ্যে এখনো ১০৫তম। লজিস্টিক খাতে বেশি ব্যয় করেও অপর্যাপ্ত সুবিধা পাওয়া দেশেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। লজিস্টিক দক্ষতায়ও ১৬০ দেশের মধ্যে ১০০তম। সরবরাহ বা লজিস্টিক ব্যয় ২৫ শতাংশ কমলে দেশের ২০ শতাংশ রপ্তানি আয় বাড়বে। লজিস্টিক ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকীকরণে মান, সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়াতে নীতি ও কৌশল প্রণয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন অপরিহার্য।

প্রতিবেদনের সহ-লেখক বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ বার্নার্ড হ্যাভেন বলেন, কোভিড মহামারী বৈশ্বিক মন্দা নিয়ে এসেছে। মহামারী দ্বারা আক্রান্ত পরিবারগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া জরুরি। আবার কাঠামোগত সংস্কার পুনরুদ্ধার কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করতে পারে।

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হওয়া টিকা কার্যক্রম অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ভারত থেকে ৭০ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে। আরো আড়াই কোটি ডোজ কেনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস বা সংক্ষেপে কোভ্যাক্স কোভিড টিকার সমবণ্টনের একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ, যার পেছনে আছে ইউনিসেফ, গ্যাভি, ডব্লিউএইচও। এ উদ্যোগ কোভ্যাক্সের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকও রয়েছে। বিশ্বের সব দেশকে তাদের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ টিকা বিনা মূল্যে সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে কোভ্যাক্স। সে হিসাবে বাংলাদেশও ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাবে। এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে এ টিকা পাওয়ার কথা থাকলেও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে শুরু করে ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় চাপের কারণে কোভ্যাক্সের টিকা মে মাসের মধ্যে পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিয়ে বৈশ্বিকভাবে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বাংলাদেশ কোভ্যাক্স থেকে ভ্যাকসিন খুব শিগগিরই পাবে। বাংলাদেশ সরকারের ভ্যাকসিন কিনতে অর্থের কোনো সমস্যা নেই। বিশ্বব্যাংকও ৫০ কোটি ডলার দিতে যাচ্ছে, যা দিয়ে দেশের তিন ভাগ মানুষের জন্য ভ্যাকসিন কেনা যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads