• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
তামাকে বছরে মৃত্যু সোয়া লাখ

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

তামাকে বছরে মৃত্যু সোয়া লাখ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৮ এপ্রিল ২০২১

করোনা নিয়ে সর্বত্র চলছে আতংক। দেশে প্রতিনিদনই বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যা। মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশে মৃত্যুবরণকারী মানুষের সংখ্যা ১১ হাজার ২২৮ জন। আর আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লাখ ৫১ হাজার ৬৫৯ জন। অথচ দেশে প্রতিবছর তামাকের প্রভাবে মারা যাচ্ছে ১ লাখ ২৮ হাজার। এছাড়া পঙ্গুত্ববরণ করেছে আরো কয়েক লাখ মানুষ। তা সত্ত্বেও বাড়ছে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা।

বর্তমানে দেশে প্রায় ৪ কোটি মানুষ সেবন করে-যারা সবচেয়ে বেশি করোনা ঝুঁকিতে রয়েছেন। দুটোর বিচারে করোনা চেয়ে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। গতকাল মঙ্গলবার তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্সের (আত্মা) যৌথ উদ্যোগে তামাক-কর ও দাম সংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এতে বলা হয়, বিশ্বের শীর্ষ তামাক সেবনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে ৩৫.৩ শতাংশ বা তিন কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করছেন। যার মধ্যে এক কোটি ৫০ লাখ মানুষ সিগারেট সেবন করে। ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান বিবেচনায় তামাকের প্রভাবে ১ লাখ ২৮ হাজার মানুষ মারা যায়। 

প্রজ্ঞার হেড অব টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রোগ্রাম হাসান শাহরিয়ার বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যান হিসাব করলে তামাক সেবনের হার প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। ২০০৯ সালে ছিল ১৪.২ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে তা ১৪ শতাংশ; বরং সংখ্যা হিসাব করলে ১৫ লাখ সিগারেট সেবন বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে যদি ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকের ব্যবহার কমিয়ে ৫ শতাংশ করতে হয়, তাহলে আমাদের প্রতিবছর ১.৫ শতাংশ কমাতে হবে। ২০০৯ সালে তামাকের ব্যবহার ছিল ৪৩ শতাংশ, যা ২০১৭ সালের হয়েছে ৩৫ শতাংশ। যে হারে কমছে তাহলে লক্ষ্য অর্জিত হবে না। ২০২১ সালের মধ্যে তামাকের ব্যবহার অন্তত ২৮ শতাংশ কমাতে হবে।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যায় ২০১৭-২০১৮ সালে তামাক খাতে রাজস্ব এসেছিল ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। একই বছরে তামাক সেবনজনিত অসুস্থতায় স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় হয়েছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বলতে পারি, এটি লোকসান। আর নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে পারি তামাকের প্রভাবে মৃত্যুহার অনেক বেশি। দেশে এত মানুষ করোনায়ও মৃত্যুবরণ করেনি। অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অনেক কাজ করতে হবে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্য সিগারেট সেবনের হার বাড়ছে, এটা অশনি সংকেত। এজন্য সচেতনতা বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া দরকার। সরকার সিগারেটের ওপর যে ১ শতাংশ সারচার্জ নেয়, তা আগামী বাজেটে বৃদ্ধি করে দেড় শতাংশ করতে পারে। আর ওই অর্থ সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে ব্যয় করা যেতে পারে।

ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, তামাকের কর নির্দিষ্টহারে প্রয়োগ করা উচিত, যাতে রাজস্ব আদায় বাড়ে। করোনাকে ঘিরে একটি নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।

 ধোঁয়াবিহীন তামাক কত ক্ষতিকর, এ বিষয়ে কোনো সতর্কতা নেই। নারীদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করে বলতে চাই, ধোঁয়াবিহীন তামাক বর্জন করা উচিত। এর সঙ্গে তামাকের মান নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। মান নিশ্চিত করতে পারলেও তামাকের দাম বাড়বে। ফলে ভোক্তাদের চাহিদা কমবে, সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে। আয় যে হারে বেড়েছে, সেই হারে তামাকের ওপর কর আরোপ বাড়েনি। তামাকবিরোধী সতর্কতার জন্য সভা ও সমাবেশসহ বিভিন্ন প্রচারণা কাজের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।

সভাপতির বক্তব্যে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, অতি গতিশীল সমাজে চিন্তায়-চেতনায় গতি থাকতে হবে। ধূমপান শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র কর বাড়িয়েই ধূমপান রোধ করতে পারব কি না, এটা ভেবে দেখার সময় এসেছে। বৃদ্ধি করা করের টাকা, স্বাস্থ্যখাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। ধূমপানে বিষপান সে বিষয়টিই কেন এখনো তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারি না, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। জনমত তৈরি করতে হবে। প্রাক-বাজেটের বেশির ভাগেই কর কমানো প্রস্তাব থাকে, কেবলমাত্র প্রজ্ঞা-আত্মার পক্ষ থেকে কর বৃদ্ধি প্রস্তাব সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে পারে।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads