• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
চলতি মাসে করোনায় ১৭ চিকিৎসকের মৃত্যু

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

চলতি মাসে করোনায় ১৭ চিকিৎসকের মৃত্যু

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৮ এপ্রিল ২০২১

করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকদের মৃত্যু ফের বাড়ছে। দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসকরা। চলতি মাসেই করোনায় মারা গেছেন ১৭ জন চিকিৎসক।

দেশে প্রথম করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী চিকিৎসক ডা. মঈন উদ্দীন আহমেদ। সে থেকে আজ পর্যন্ত করোনা এবং এর লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১৫১ জন চিকিৎসক। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এ তথ্য জানিয়েছে।

দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী হয়। তবে মার্চের শুরু থেকে   ফের ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়। এটাকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বলছেন অনেকে। তবে চিকিৎসকরা অভিহিত করছেন করোনার সুনামি নামে। বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবারের সংক্রমণ তীব্র। আর এই সুনামিতে চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। গত বছরে করোনার প্রার্দুভাবের পর থেকেই চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থকর্মীরা আক্রান্ত হতে শুরু করেন। তবে সেটা কিছুটা কমে আসে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে।

বিএমএ জানায়, এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আট হাজার ২৯৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী। তাদের মধ্যে চিকিৎসক দুই হাজার ৯১১ জন, নার্স দুই হাজার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন তিন হাজার ২৯৬ জন। গত ২৫ এপ্রিল একদিনে করোনায় প্রাণ হারান দুই চিকিৎসক। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন কিশোরগঞ্জের আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবির মুকুল এবং টঙ্গীর আহসান উল্লাহ জেনারেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. আশীস কুমার বণিক। তার আগের দিন ২৪ এপ্রিল মারা যান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান।

বিএমএর তথ্যমতে গত বছরের জুন-জুলাই এবং আগস্ট মাসে করোনা সংক্রমণ যখন তীব্রতা ধারণ করে সে সময়ে সবচেয়ে বেশি চিকিৎসকের মৃত্যু হয়। ৪৫ জন চিকিৎসক মারা যান কেবল জুন মাসেই। এরপর ধীরে ধীরে সেটা কমে আসে। চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে মারা যান আট চিকিৎসক। কিন্তু এপ্রিলেই চিকিৎসকদের মৃত্যু ফের বাড়তে শুরু করেছে। করোনার এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সংক্রমিত ও জটিল ভ্যারিয়েন্ট হলো সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট। দেশে বর্তমানে এই ভ্যারিয়েন্টের আধিপত্য রয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআরবি। দেশে রয়েছে ইউকে ভ্যারিয়েন্টও।

চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালগুলোতে তাদের রোগীদের ক্লোজ কন্টাক্টে যেতে হয়। একইসঙ্গে অনেক হাসপাতালেই এখন ট্রায়াজ পদ্ধতি মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না। রোগীরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর লুকিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে আসছেন। আবার অন্য অসুখে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসে পরীক্ষা করে রোগী করোনায় আক্রান্ত বলেও শনাক্ত হচ্ছেন। এসব কারণে বর্তমানে চিকিৎসকদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। এরওপর নতুন ভ্যারিয়েন্টের তীব্র সংক্রমণের ঝুঁকিও রয়েছে।

এবিষয়ে বিএমএর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, যত বেশি মানুষ আক্রান্ত হবে চিকিৎসকদের আক্রান্ত হওয়ার হারও তত বাড়বে। আর যত বেশি আক্রান্ত হবে তত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বেই। সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট খুব দ্রুত সংক্রমণ করে। ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে দেয় খুব কম সময়ের মধ্যে। এর আগে কিন্তু কোনো পরিবারে একজন সংক্রমিত হলেও অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার  হার কম ছিল। কিন্তু এবারের ভ্যারিয়েন্টে একজন আক্রান্ত হওয়া মানেই সে পুরো পরিবার আক্রান্ত হওয়া।

এটা হলো বেশি ছোঁয়াচে। আর কম সময়ের মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে ফুসফুসকে। আগের ভ্যারিয়েন্টে সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার দ্বিতীয় সপ্তাহে ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করতো। এবারে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম সপ্তাহে, এমনকী প্রথম দিনেই ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে। আর ফুসফুস বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বেঁচে ফেরত আসার চান্স কমে যায়। যেহেতু এখন রোগী সংখ্যা বাড়ছে, তাই রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকসহ অন্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন। সুতরাং রোগীর সংখ্যা যত বাড়বে, চিকিৎসক আক্রান্তের হার ততোই বাড়বে। আর আক্রান্তের সংখ্যা যত বাড়বে, মৃত্যুর হারও তত বাড়বে। এটা একটা ফর্মূলার মতো।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, রোগী বাড়লে হাসপাতালে চাপ বাড়ে, চিকিৎসকরা এক্সপোজড হন বেশি। আক্রান্ত হলে মৃত্যু বাড়বে-এটাই স্বাভাবিক।

 

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads