• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

একসাথে কাজ করবে বাংলাদেশ-চীন

আঞ্চলিক নিরাপত্তায় সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা হবে

  • রবিউল হক
  • প্রকাশিত ২৯ এপ্রিল ২০২১

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সামরিক সহযোগিতার ইতিহাস দীর্ঘ। এখনো বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জামের প্রায় ৮০ ভাগ চীন থেকে আমদানি করা। তবে সাম্প্রতিক ইন্দো-প্যাসিফিক জোট এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলের নিরাপত্তার বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ লক্ষ্যে আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা কীভাবে কাজে আসতে পারে সে লক্ষ্যে যৌথভাবে কাজ করতে একমত দুদেশ। 

চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গহির সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরকালে সামরিক সহযোগিতার বিষয়টি আরো সামনে চলে আসে। তিনি বলেন, যৌথভাবে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে রক্ষা করতে দুই দেশেরই উচিত এ অঞ্চলের বাইরের শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশীয় একটি সামরিক জোট গঠন করা এবং আধিপত্যবাদীদের বিরুদ্ধে যৌথভাবে প্রচেষ্টা চালানো। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সহযোগিতা আরো বিস্তৃত হচ্ছে। দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে উচ্চ পর্যায়ে সফর আরো বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। এ ছাড়া প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম, বিশেষায়িত ক্ষেত্রে ব্যাপক বিনিময় এবং সামরিক সম্পর্ককে আরো ঘনিষ্ঠ করতে সহযোগিতাকে আরো গভীর করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

বাংলাদেশ সফরকালে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠককালে আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে সেফগার্ড হিসেবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বানে একমত চীন। সাক্ষাতে ওয়েই ফেঙ্গহি বলেন, প্রাচীনকাল থেকে চীন এবং বাংলাদেশ বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের এক দীর্ঘ ইতিহাস আছে এই দুটি দেশের মধ্যে। উভয় দেশই জাতীয় নবজাগরণ এবং উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অবস্থান করছে এবং উন্নয়ন কৌশল ও সহযোগিতার বিস্তৃত এক সম্ভাবনার মধ্যে সমন্বয় উপভোগ করছে। তিনি আরো বলেন,  উন্নয়নের জন্য সহযোগিতার দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত বিষয়ে দুই দেশের নেতাদের মধ্যে যে গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে তা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী চীন। সফরকালে ওয়েই ফিঙ্গহি বাংলাদেশের সেনাপ্রধান মেজর আজিজ আহমেদের সঙ্গেও সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় তারা আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন।

চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ বাংলাদেশের খবরকে জানান, চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গহির সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তিনি চীন সরকারের বিশেষ দূত হিসেবেই এখানে এসেছিলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তার স্বার্থে চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের সঙ্গে চার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত নিরাপত্তায় যেমন দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা দরকার, প্রতিরক্ষা নিরাপত্তার স্বার্থে চীনের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দরকার। এই দুটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের নিরাপত্তা সহযোগিতাও দীর্ঘদিনের। তবে ভূ-রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এই মুহূর্তে করোনা ভাইরাসের মতো মহামারী নিয়ন্ত্রণে আঞ্চলিক জোট গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে। কেননা করোনা পরিস্থিতি যৌথভাবে মোকাবিলা না করলে এই অঞ্চল ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। তবে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই সফরে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৬ দেশ নিয়ে জোট গঠনে যে ঐকমত্য হয়েছে তা ইতিবাচক। কারণ এই মুহূর্তে করোনা মহামারী মোকাবেলায় যৌথ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ৮০ ভাগই চীনের সহযোগিতা রয়েছে। এ ছাড়া ভারত, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রেরও কিছু সহযোগিতা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ শুধু উন্নয়নের লক্ষ্যে সামরিক সহযোগিতায় বিশ্বাসী। এই নীতিতে থাকলে প্রতিরক্ষা নিয়ে কোনো দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের বিরোধ থাকবে না।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাকটিক্যাল সহযোগিতা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখবে দুই দেশের সেনাবাহিনী। এর মধ্য দিয়ে তাদের সম্পর্কের আরো অগ্রগতি হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা খাতে চীনের শক্তিশালী সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ সময়ে উভয় পক্ষ দ্বিপক্ষীয় সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে একমত হন। সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, বাংলাদেশ এবং চীন সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু এবং কৌশলগত নির্ভরশীল সহযোগী অংশীদার। একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি খুব গুরুত্ব দেয় বাংলাদেশ এবং চীনের মৌলিক স্বার্থকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads