• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
হেফাজতে সরব হচ্ছে ফয়জুল্লাহ গ্রুপ

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

হেফাজতে সরব হচ্ছে ফয়জুল্লাহ গ্রুপ

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ০১ মে ২০২১

সদ্যবিলুপ্ত হেফাজতের কমিটিতে পদপদবি না থাকায় এতদিন চুপ থাকলেও সম্প্রতি কমিটি বাতিল করায় আবার সরব হচ্ছেন মুফতি ফয়জুল্লাহ। আল্লামা শফির ছেলে আনাস মাদানীকে সামনে রেখে তিনি নতুন করে হেফাজতের কমিটি গঠনের জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। মাওলানা মইনুদ্দিন রুহী, মুফতি আমিনীর ছেলে হাসনাত আমিনীসহ অনেকেই আছেন তাদের সঙ্গে। এরা সরকারের একটি অংশের আনুকূল্য পাচ্ছেন বলেও প্রচার আছে।

যদিও কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতিতে জড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় কিছুটা বেকায়দায় আছেন ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। শুধু তাই নয়, লালবাগের জামিয়া কোরআনিয়া মাদরাসায় যেখানে তিনি অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত সেখান থেকেও তাকে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রাচীন এই কওমি মাদরাসায় মুফতি ফয়জুল্লাহর অবস্থান অনেকটা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

এসব বিষয়ে টেলিফোনে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বললে মুফতি ফয়জুল্লাহ জানান, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। শিগগিরই হেফাজতসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলবেন।

গত বৃহস্পতিবার রাতেই তাকে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ভার্চুয়াল টকশোতে অংশ নিতে দেখা গেছে। যেখানে বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতের সমালোচনাও করেছেন মুফতি ফয়জুল্লাহ।

হেফাজতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শাহ আহমদ শফি যখন আমির ছিলেন তখন বেশ প্রভাবশালী ছিলেন হেফাজতের তখনকার প্রচার সম্পাদক শফিপুত্র আনাস মাদানী, যুগ্ম-মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহী ও মুফতি ফয়জুল্লাহ ও ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি আবুল হাসনাত আমিনী। এই নেতারা সংগঠনের মধ্যে একটি বলয় তৈরি করায় বেশ আগে থেকেই বড় একটি পক্ষের মধ্যে অসন্তোষ ছিল।

হেফাজতে ইসলামের প্রভাবশালীদের একজন ছিলেন সংগঠনটির প্রথম কমিটির যুগ্ম -মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। নানা ইস্যুতে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে মাঠ গরম রাখতেন। নেতাকর্মীরাও বেশ উজ্জীবিত হতো তার বক্তব্যে। হেফাজতের অন্যদের মধ্যে সবমহলে তার পরিচিতিও ছিল বেশ। কিন্তু সংগঠনটির নেতৃত্ব প্রয়াত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফির হাত থেকে চলে যাওয়ার পর থেকে অনেকটা কোণঠাসা মুফতি ফয়জুল্লাহ। কোথাও কোনো কথা নেই, দেখা নেই।

এমনকি দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে থাকা অনেক সহকর্মী যখন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাচ্ছেন তখনো তার খোঁজ নেই। এসব নিয়ে কোনো বক্তব্যও নেই ফয়জুল্লাহর। ফলে প্রশ্ন উঠেছে- মুফতি ফয়জুল্লাহ কোথায়?

অন্যদিকে হেফাজতের সদ্য সাবেক কমিটির গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের যেসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে মুফতি ফয়জুল্লাহ সেসব মামলার অন্যতম আসামি। বিশেষ করে ২০১৩ সালের আলোচিত ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের সহিংসতার একাধিক মামলায় তিনিও আসামি।

সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনার পর হেফাজতের প্রথম থেকে শুরু করে নিচের দিকের নেতারাও যখন একে একে গ্রেপ্তার হচ্ছেন তখনো তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিষয়টি নিয়ে হেফাজত ছাড়াও রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা চলছে।

ফয়জুল্লাহ, আবুল হাসনাত আমিনী ও মঈনুদ্দীন রুহী প্রয়াত ফজলুল হক আমিনীর দল ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা। হাসনাত আমিনী বর্তমানে দলটির চেয়ারম্যান আর ফয়জুল্লাহ মহাসচিবের দায়িত্বে আছেন।

 

ইসলামী ঐক্যজোটের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত ‍মুফতি ফজলুল হক আমিনীর মৃত্যুর পর মুফতি ফয়জুল্লাহ ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি মহাসচিব পদে নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি বিএনপি ছাড়ার পর সেদিনেই অনুষ্ঠিত ত্রিবার্ষিক কনভেনশনে ফের মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি।

গুঞ্জন আছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার চেষ্টা করেছিলেন হাসনাত আমিনী, ফয়জুল্লাহ ও রুহী। তিনজনই চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় নির্বাচন করার স্বপ্ন পূরণ হয়নি।

কওমি মাদরাসানির্ভর হেফাজতে ইসলাম ২০১০ সালের ১৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে নারী নীতির বিরোধিতা করে এই সংগঠন এবং এর সাবেক আমির মাওলানা শাহ আহমদ শফি আলোচনায় আসেন। আর ২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠে হেফাজত। তারা ওই বছরের ৫ মে ঢাকার ছয়টি প্রবেশমুখে অবরোধ করে। পরে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। এ সময় হেফাজতের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে শত শত যানবাহন ভাঙচুর করে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এসব সহিংস ঘটনায় অনেকে নিহত হয়েছেন।

৫ মে তাণ্ডবের পর ঢাকাসহ সাত জেলায় ৮৩টি মামলা হয়। এসব মামলায় তিন হাজার ৪১৬ জনের নামসহ ৮৪ হাজার ৯৭৬ জনকে আসামি করা হয়। তবে হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফিকে কোনো মামলাতেই আসামি করা হয়নি।

সেসব মামলায় বিভিন্ন সময়ে জুনায়েদ বাবুনগরী, বিএনপি-জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ অন্তত ৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তারা সবাই জামিনে মুক্তি পান। মুফতি ফয়জুল্লাহ আলোচিত সেই মামলারও আসামি। তখনো নানা কৌশলে তিনি গ্রেপ্তার এড়ান।

জানা গেছে, সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের নেতাকর্মীদের তাণ্ডব নিয়ে কঠোর অবস্থানে সরকার। ফলে যাদের নেতৃত্বে থাকাকালীন এমন পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে তাদের সক্রিয় হওয়ার সুযোগ কম। তাই সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে মুফতি ফয়জুল্লাহসহ অন্যরা আপাতত স্বস্তির মধ্যে আছেন।

মুফতি ফয়জুল্লার কাছে প্রশ্ন ছিল-হেফাজতের অনেক নেতা কারাগারে, সংগঠন নাজুক অবস্থায় এরমধ্যে নতুন করে কমিটি করা হচ্ছে-সেটা কতদূর? জবাবে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘পর্যবেক্ষণ করতেছি। দেখি কী হয়। এখন বলার কিছু নেই। কয়টা দিন সময় দিন, সবকিছু নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলবো।’

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads