• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
শ্রমিক মুক্তির দিন

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

শ্রমিক মুক্তির দিন

  • রায়হান উল্লাহ
  • প্রকাশিত ০১ মে ২০২১

আজ পহেলা মে—আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস, যা মে দিবস হিসেবে পরিচতি। ১৯৮৬ সালের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা দৈনিক ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের ঘিরে রেখেছিল সশস্ত্র পুলিশ। শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল আন্দোলন। আচমকা পুলিশের উদ্দেশ্যে বোমা ছুঁড়ে কোনো এক অজ্ঞাতনামা। জবাবে নিরস্ত্র শ্রমিকদের ওপর বর্বর হামলা চালায় পুলিশ। আন্দোলন দমাতে তারা গুলি করলে ১১ জন শ্রমিক নিহত হন; আহত ও গ্রেপ্তার হন বহু শ্রমিক। পরে গ্রেপ্তার ৬ শ্রমিককে প্রহসনের বিচারে ফাঁসিও দেওয়া হয়। এতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিশ্বে। অবশেষে দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

পরে ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রথম কংগ্রেস। সেখানে পরের বছর থেকে শিকাগো ঘটনার বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব রাখেন রেমন্ড লাভিনে। ১৮৯১ সালে দ্বিতীয় কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয় এই প্রস্তাব।

অবশ্য ১৮৯৪ সালের মে দিবসে ঘটে দাঙ্গা। এরপর ১৯০৪ সালে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত হয় একটি প্রস্তাব। দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মদিবস নির্ধারণের দাবি আদায় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতি বছর পহেলা মে বিশ্বজুড়ে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজন করতে সব সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং ট্রেড ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানানো হয় ওই প্রস্তাবে।

ওই সম্মেলনে শ্রমিকদের হতাহতের আশঙ্কা না থাকলে বিশ্বজুড়ে সব শ্রমিক সংগঠন ১ মে ‘বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না-করার’ সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক দেশ এ দিনটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালনের দাবি জানায়; সেটি কার্যকরও করা হয় কয়েকটি দেশে।

বাংলাদেশসহ প্রায় ৮০টি দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় মে দিবস পালিত হয়ে আসছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ‘শ্রম দিবস’ পালিত হয় সেপ্টেম্বর মাসে। সেখানকার কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং শ্রমের নাইট এই দিন পালনের উদ্যোক্তা।

হে মার্কেটের হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড ধারণা করেছিলেন, পহেলা মে’র যেকোনো আয়োজন সংঘাতে রূপ নিতে পারে। সে কারণে ১৮৮৭ সালে তিনি নাইটের সমর্থিত শ্রম দিবস পালনের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। সেই প্রথা কিংবা রেওয়াজ এখনো চলে আসছে।

দিনটি একইসঙ্গে শোক ও আনন্দের। কারণ এ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু শ্রমিকের রক্ত, ক্ষোভ ও বিষ্ফোরণের ফসল ভোগ করছেন সারা বিশ্বের অসংখ্য শ্রমিক। আগামীর শ্রমিকরাও ভোগ করবেন; অজানা সময় পর্যন্ত।

দিনটি জাতীয় ছুটির দিন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠন রাজপথে সংঘবদ্ধ মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন করে। শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণার উৎস এই দিবসটি মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠারও দিন। শ্রমিকদের শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটারও দিন এটি। 

তবে ২০২০ সাল থেকে অন্য রকম মে দিবসের দেখা পাচ্ছে পৃথিবী। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) থাবায় অধিকাংশ কল-কারখানাই দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। শ্রমিকরা কাটাচ্ছেন ঘরবন্দি জীবন। পৃথিবীর নানা প্রান্তের শ্রমিকদের মনে এরইমধ্যে বাসা বেঁধেছে চাকরি হারানোর ভয়। সাম্প্রতিক অনেক পরিসংখ্যান বলছে কোটি কোটি শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঠিক এই মুহূর্তে মহান মে দিবস আজ।

গত ২৭ এপ্রিল ফ্রান্সের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সদর দপ্তর থেকে ‘অনুমান, প্রস্তুতি এবং সংকটে সাড়া : পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় বিনিয়োগ’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে শ্রম ও শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠনটি জানায়, বাংলাদেশে কোভিডকালে অপ্রত্যাশিত চাকরিচ্যুতি এবং লকডাউনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে আত্মহত্যার উদাহরণ তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশে আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিআইনেন বলেন, ‘পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এবং জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ কোভিড সে বিষয়ে খুব পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে। সব শিল্প কারখানায় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা অবশ্যই জাতীয় অগ্রাধিকারে থাকতে হবে। তিনি বলেন, গোটা বাংলাদেশে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ বাড়ছে। সমাজকে আর্থিকভাবে কার্যকর রাখতে লাখো শ্রমিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন।’

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে কবে মুক্তি মিলবে তার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে দেশ ও বিশ্বের প্রতিটি মানুষ। তবে একদিন না একদিন চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা নামের অতিক্ষুদ্র ভাইরাস থেকে সারা বিশ্ব মুক্ত হবে; আসবে আবার নতুন প্রভাত। আমরা পালন করব ভিন্ন মে দিবস। মুষ্টিবদ্ধ হাত ওপরে উঠবে। শ্রম দিবসের লড়াইও সার্থক হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads