• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
চেকপোস্ট ঠেকাতে পারেনি ঘরমুখো মানুষের স্রোত

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

চেকপোস্ট ঠেকাতে পারেনি ঘরমুখো মানুষের স্রোত

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ১২ মে ২০২১

করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা ঠেকাতে দূরপাল্লা বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু করোনার ভয়, সরকারের লকডাউন, যাত্রাপথের সীমাহীন কষ্ট কিংবা জীবনের ঝুঁকি কোনোটিই ঘরমুখো মানুষের স্রোতকে থামাতে পারেনি। সব বাধা আর ভয় উপেক্ষা করে প্রিয়জনদের সাথে ঈদ আনন্দই যেন মুখ্য এসব মানুষের কাছে।

গতকাল ছিল বেশিরভাগ বেসরকারি বিভিন্ন কল-কারখানা, অফিস আদালতের শেষ কর্মদিবস। একারণে অনেকেই অফিস শেষ করেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। কোথাও রিকশায়, কোথাও পায়ে হেঁটে, সিএনজি অটোরিকশা, পিকআপ, মোটরসাইকেলসহ যে যেভাবে পারছেন পাড়ি জমাচ্ছেন গন্তব্যে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সংযোগ পয়েন্টগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়েও এসব ঘরমুখো মানুষের স্রোত ঠেকাতে পারছেন না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় কয়েক গুণ ভাড়া বেশি দিয়ে রিকশা কিংবা পায়ে হেঁটে আমিনবাজার সেতু পার হয়ে ঘরমুখো যাত্রীরা চলে আসছে বিভিন্ন স্থানে। তারপর মাইক্রোবাস এমনকি অ্যাম্বুলেন্সযোগে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন।

গাবতলী এলাকায় দায়িত্বরত এক ট্রাফিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গ্রামের পথে ছুটে চলা মানুষ কোনো বাধাই মানছে না। এসব মানুষ যেভাবে রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্য থেকে কষ্ট করে ছুটে আসছে তাতে তাদের বাধা দিতেও সঙ্কোচবোধ হয়। কিন্তু আইনের প্রতিপালন করতে হবে। তাই যতটুকু সম্ভব ঠেকানোর চেষ্টা করছি।

মানুষকে সচেতন করতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসালেও পুলিশকে ফাঁকি দিতে চেকপোস্টের অংশটুকু পায়ে হেঁটে অতিক্রম করে ফের বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রামের পথ ধরেছেন মানুষ। এতে চরম দুর্ভোগও পোহাতে হচ্ছে ঘরমুখো মানুষকে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ আরো বেশি।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের অন্যতম বাহন লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় সড়কপথ এবং সামর্থ্যবানদের জন্য বিমানপথই এখন ভরসা। তবে বিমানযোগে খুবই সীমিত সংখ্যক মানুষের সুযোগ থাকায় সড়ক পথই একমাত্র ভরসা এই অঞ্চলের মানুষের। তবে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকায় ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিভিন্ন পরিবহনে করে সীমাহীন কষ্ট আর দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে তাদের। একারণে, গতকাল শিমুলিয়া, পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যাত্রীদের ঢল নামে। যাত্রীদের তীব্র জনস্রোত সামলাতে ঘাটগুলোতে দায়িত্বরত বিজিবিসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়।

বেলা বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে মানুষের চাপ। পরে আবারো ফেরি ছাড়তে হয়। গাদাগাড়ি করে ঝুঁকি নিয়ে উঠেন যাত্রীরা। করোনা সংক্রমণরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানার তোয়াক্কাই নেই। এখনও শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় হাজার হাজার যাত্রী পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছেন। পাটুরিয়া ফেরি ঘাটেও যাত্রীদের ভিড়। ফেরি ভিড়লেই ঝাঁপ দিয়ে উঠে পড়ছেন যাত্রীরা।

অন্যদিকে, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষেরও একমাত্র ভরসা সড়কপথ। দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকায় অনেককে পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ, ব্যক্তিগত গাড়ি, রেন্ট-এ কারসহ নানা উপায়ে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। 

অনেক ক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ঘরমুখো মানুষকে রাজধানী ছাড়তে দেখা গেছে। সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ কোনোভাবেই ঠেকাতে পারেনি বাড়িফেরার এই জনস্রোত। বরং, বিধিনিষেধের কারণে উল্টো স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে। দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ বন্ধ থাকায় ঘরমুখো মানুষকে বিভিন্ন পরিবহনে ঠাসাঠাসি করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। যেখানে নেই স্বাস্থ্যবিধি কিংবা নিরাপদ দূরত্বের বালাই। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলা দূরপাল্লার বাসগুলোকে সেতুর আগেই থামিয়ে দিচ্ছে পুলিশ।

এদিকে, মহামারির মাঝে সীমাহীন কষ্ট আর দুর্ভোগ উপেক্ষা করে ঈদযাত্রা নিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা করছেন। তারা সরকারের ঢিলেঢালা লকডাউনের পাশাপাশি ঘরমুখো মানুষের বিবেকবর্জিত সিদ্ধান্তে হতাশা জানিয়েছেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা দেলোয়ার জালালি তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে মানুষের ঈদযাত্রা নিয়ে ক্ষোভ জানান। তিনি বলেন, ‘অন্তত একটা ঈদ ছাড় দেওয়া যেতো। এভাবে বাড়ি যাওয়ার নামে নিজেও ঝুঁকিতে পড়ার পাশাপাশি গোটা দেশকেই ঝুঁকিতে ফেলছে তারা।’

কিন্তু ঘরমুখো এসব মানুষের কোনো দোষ দেখেন না রাজধানীর উত্তরার ইকবাল  হোসেন। তিনি বলেন, ‘এসব মানুষকে দোষ দিয়ে কিংবা উপহাস করে কোনো লাভ নেই। সবকিছুর মূলে আমাদের সিস্টেমের দুর্বলতা কিংবা সরকারের অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত। ’

সরকারের বিধিনিষেধকে প্রহসন আখ্যা দিয়ে অনেকেই বলছেন, সরকারকে লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, নয়তো সবই খুলে দিতে হবে। এভাবে সব খুলে দিয়ে শুধুমাত্র দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ রাখাকে লকডাউনের নামে প্রহসন বলে আখ্যা দেন অনেকে।

তবে শত কষ্ট আর দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে গ্রামে যাওয়া প্রসঙ্গে রাজধানী রামপুরার বাসিন্দা আলী হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘ঢাকা একা থাকি। কারণ, যে বেতন পাই তা দিয়ে পরিবার নিয়ে থাকার সামর্থ্য নেই। আমার একটি মেয়ে আছে। স্ত্রী এবং বা-মায়ের কথা না হয় বাদই দিলাম। একমাত্র মেয়ের আব্দার মেটাতে হাজারো কষ্ট হলেও আমাকে গ্রামে যেতে হয়। এই পরিস্থিতিতে যে পড়েনি সে বুঝবে না যে কেন আমার গ্রামে যাওয়া প্রয়োজন।’

আলী হোসেনের মতো এমন অনেকেই বাধ্য হয়েই প্রিয়জনদের সাথে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে শত বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করেই ছুটছেন গ্রামের পথে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads