• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
করোনায় ম্লান ঈদ উৎসব

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

করোনায় ম্লান ঈদ উৎসব

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ১৭ মে ২০২১

ঈদ আসে খুশির বার্তা নিয়ে, আসে আনন্দ নিয়ে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত বছর থেকে মলিন ঈদ উদযাপন করছে সারা বিশ্বের মুসলমান জাতি। ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশও। গত শুক্রবার দেশেজুড়ে ঈদুল ফিতর উদযাপন হয়েছে সীমিত পরিসরে। গত বছর ঈদুল ফিতরের আনন্দোৎসব ম্লান হয়েছিল কোভিড-১৯-এর প্রথম ঢেউয়ে। আর এবার সেই ঈদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভাটা পড়েছে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে।  

বাংলাদেশে করোনার ঊর্ধগতির কারণে ৫ এপ্রিল থেকে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে লকডাউন। ঈদের কয়েকদিন আগ থেকে সব জেলার মধ্যে গণপরিবহন চলেছে সীমিত আকারে। কিন্তু দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। একদিকে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে অসংখ্য মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামের ছুটেছেন। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বজায় ও স্বাস্থ্যবিধি মানায় শহর-গ্রাম কোথায় এবার ঘটা করে ঈদ উৎসব উদযাপিত হয়নি। সবমিলিয়ে ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে উদযাপিত হয়েছে এবারের ঈদুল ফিতর।

করোনার কারণে এবারো জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদগুলোতেই নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজে অংশ নেন সর্বস্তরের মানুষ। এ মসজিদে প্রবেশে ছিল পুলিশি কড়াকড়ি। মাস্ক পরা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে জীবাণুনাশক নিশ্চিত করে মুসল্লিদের প্রবেশ করানো হয় মসজিদে। নামাজের জন্য মুসল্লিদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে বসতে দেখা যায়। প্রত্যেকেই নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসেন। তবে শিশু ও বৃদ্ধসহ অসুস্থ ব্যক্তি বা অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা জামাতে অংশ নেননি। ঈদগাহের পরিবর্তে জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হওয়া এই ঈদ জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। সব ভেদাভেদ ভুলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মুসুল্লিরা ঈদের এই জামাতে নামাজ আদায় করেছেন। খুতবা শেষে মোনাজাতে দেশ ও বিশ্ব মুসলমানের শান্তি, সমৃদ্ধি, করোনা মহামারী থেকে পরিত্রাণের কামনা ও দোয়া করা হয়।

করোনা মধ্যে ঈদুল ফিতরে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা কেমন ছিল, জানতে চাইলে হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, আমরা আগে থেকেই মসজিদে আসা সবাইকে সতর্ক করেছিলাম, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং সরকারি বিধিবিধান মেনে জামাতে অংশ নিতে। তারা সেটা মেনেই ঈদের জামাতে অংশ নিয়েছেন। আসলে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল, কিন্তু সেটা আগের মতো নয়। পরিস্থিতিটা তো আসলে স্বাভাবিক নয়। তবে সবাই ধর্মীয় বিধিবিধান মেনেই ঈদুল ফিতর পালন করেছেন। আমরা যেন সামনের সময়ে উৎসবগুলো সবাই মিলে উদযাপন করতে পারি আল্লাহর কাছে সেই দোয়াই করেছি।

রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বঙ্গভবনে ঈদের নামাজ আদায় করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ঈদুল ফিতরের মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে সবাইকে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার আমরা এক সংকটময় সময়ে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছি। করোনাভাইরাস সমগ্র বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। আমাদের সরকার এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরা জনগণকে সব সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।

অন্যদিকে কঠিন বাস্তবতার মধ্যে এবারের ঈদে কর্মস্থলেই ছিলেন ফ্রন্টলাইন যোদ্ধারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আগেই ছুটি বাতিল করা হয়। ফলে তারা কর্মস্থলে থেকেছেন। কোভিড পরিস্থিতির কারণে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অধিকাংশই হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন।

এবারো অম্লমধুর ঈদ উদযাপন করেছেন চিকিৎসকরা। করোনা মহামারীর মধ্যেই পবিত্র ঈদ উল ফিতরের আমেজে মেতেছে সবাই। সব আপদ ভুলে পরিবারের সঙ্গে সময় পার করছেন। কিন্তু চিকিৎসকরা কিছু মানুষ জীবন বাঁচাতে রয়ে গেছেন কর্মস্থলে। চিকিৎসাই যাদের পরম ধর্ম। এই সংকটকালে প্রাণ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন নিরলস।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ঈদে প্রায় চল্লিশ শতাংশের বেশি চিকিৎসক কর্মস্থলে সেবা দেন। তবে কভিড-১৯ মহামারীর জন্য এবার কোনো কোনো চিকিৎসকই ছুটি পাননি। সবাই রয়েছেন কর্মস্থলে।

করোনা মহামারীতে গত এক সপ্তাহ ধরে দেশে রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। মৃত্যুহারও কমেছে, তবে শঙ্কা কাটেনি। আগের তুলনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু কমলেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ঈদের দিনেও হাসপাতালে এসেছে করোনা রোগী।

 

ঈদের দিন সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় অন্য  দিনের মতো একটা দিন। এসময় কথা হয় নার্স আমেনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মহামারীর আগে আমরা ডিউটি ভাগ করে নিতাম। বেশির ভাগ ঈদে অমুসলিমরা দায়িত্বে থাকতেন। কিন্তু মহামারীতে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। এখন এই ক্রান্তিলগ্নে আমার বাড়ি যাই কি করে। পরিবারের সঙ্গে ঈদের খুশিটা পেলেন না এতে খুব কষ্ট হয় কিনা জনতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে এই দিনে যারা আসেন তারা কেউ বিপদে না পড়লে আসতে চান না। তাদের কষ্ট ভাবলে নিজের জন্য কষ্ট হয় না।

বগুরা শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এস এম  এম সালেহ ভূঁইয়া বলেন, গত বছর তিনি ও হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সবাই কর্মস্থলে ছিলেন। গতকাল দুপুরে প্রতিবেদকের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার সময় তিনি তখন চিকিৎসকদের সঙ্গে হাসপাতালে ঘুরে-ঘুরে রোগী দেখছিলেন। হাসি দিয়েই জানালেন, রোগীদের চিকিৎসা দেওয়াই তার প্রথম কাজ। এতে তিনি সত্যিকার জীবনের আনন্দ পান। ঢাকায় পরিবারের কাছে নেই তিনি। আনন্দ-বেদনার মিশেলে তিনি বলেন, পরিবারের সঙ্গে থাকতে না পারার কষ্ট আবার রোগীর সেবা দেওয়ার আনন্দ। এ এক অম্লমধুর অনুভূতি। তার মতে সব চিকিৎসকই রোগীদের জন্য সবোর্চ্চটুকু চেষ্টা করেন। কমতি রাখেন না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, দেশে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সবাইকে কর্মস্থলে থাকতে বলা হয়েছে। কেউ ছুটি পাননি। আমাদের চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্টাফরা কাজ করছেন। তাদের প্রতি আমরা ঋণী। পিপিই পড়ে এখন যে চিকিৎসকরা কাজ করছেন তাদের ঋণ কখনো শোধ হবে না। এই কষ্ট দাম দিয়ে কেনা যায় না। তারপরও আমরা চাই সবাই চিকিৎসা পাক। আমাদের সেবা থেকে কেউ বঞ্চিত না হোক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads