• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস আজ

মাদক তালিকায় নেই তামাকপণ্য

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ৩১ মে ২০২১

প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫৪ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় ধূমপানের কারণে। দিনের পর দিন ভুগতে হয় ফুসফুসের ক্যানসারসহ নানাবিধ রোগে। তারপরও বিড়ি, সিগারেট কিংবা তামাকপণ্যকে মাদকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি কেবল ব্যবসায়িক কিংবা অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায়।

গবেষণায় দেখা গেছে,  মৃত্য ছাড়াও ধূমপানের কারণে চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত মানব শরীরের এমন কোনো অংশ নেই যা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এছাড়া ফুসফুসের ক্যানসারসহ উচ্চ রক্তচাপ এমনকি স্থায়ীভাবে অন্ধত্বের শিকারও হতে পারেন ধূমপায়ী। বিড়ি, সিগারেট ছাড়াও যারা জর্দাসেবী, তারাও মারাত্মকভাবে শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। কেবল একটিমাত্র তামাক পাতায় ক্যানসরের ১৯টি উপাদান থাকে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। এতসব ক্ষতি ও ঝুঁকি সত্বেও আজ অবধি বিড়ি, সিগারেট কিংবা তামাকপণ্যকে মাদকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি কেবল ব্যবসায়িক কিংবা অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায়।

কারণ প্রতিবছর তামাকপণ্য ও সিগারেট থেকে প্রতিবছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেয়ে থাকে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে সিগারেটের কর বৃদ্ধির কারণে  চলতি অর্থবছরে (২০২০-২০২১) কেবল সিগারেট খাত থেকে প্রায় ২৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে। যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। সিগারেটের খুচরা মূল্য থেকে সরকার সর্বোচ্চ ৮১ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্ব পেয়ে থাকে। এছাড়া, তামাক এবং তামাকপণ্য জর্দা ও গুল থেকেও বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আদায় হওয়ায় এই খাত থেকে সরকার কতটা লাভবান হচ্ছে তা দৃশ্যমান। কিন্তু বিড়ি, সিগারেট ও তামাকপণ্যের কারণে  প্রতিবছর চিকিৎসা ব্যয়ের পেছনে সরকার এবং সাধারণ মানুষকে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। কিন্তু এসব ব্যয় দৃশ্যমান না হওয়ায় তা নিয়ে কারোরই মাথাব্যথা নেই।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বাংলাদেশে খবরকে বলেন, ‘বিড়ি-সিগারেট ও তামাকপণ্যের অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। কিন্তু এগুলোকে মাদকের তালিকায় নিয়ে আসার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। ব্যবসায়িক কারণেই এটি হয়তো করা হচ্ছেনা। তবে সিগারেটের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা সব ধরনের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিটি সিগারেটের প্যাকেটে সতর্কমূলক বিজ্ঞাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’

অথচ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ বলছে, তামাকসেবীদের মধ্যে তিনটি শ্রেণি রয়েছে- ধূমপান, ধোঁয়াবিহীন ও ধোঁয়াযুক্ত তামাক। ধোঁয়াযুক্ত তামাকের মধ্যে রয়েছে বিড়ি, সিগারেট ও ই-সিগারেট। ধোঁয়াহীন তামাকের মধ্যে তামাক, জর্দা এবং এই উভয় ধরন একসঙ্গে। তামাকসেবীদের মধ্যে ধূমপান করে পুরুষদের ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ। নারীর সংখ্যা ১ শতাংশের কম। শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। অবশ্য ধূমপানে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও ধোঁয়াবিহীন তামাকে পুরুষদের তুলনায় বেশি নারীরা। ধোঁয়াবিহীন তামাকসেবী নারীর সংখ্যা ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ। যেখানে পুরুষের সংখ্যা ১৬ দশমিক ২ শতাংশ।

বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের উপদেষ্টা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডাক্তার প্রাণ গোপাল দত্ত জানান, ধূমপানের ফলে ২০৩০ সাল নাগাদ পৃথিবীজুড়ে এক কোটি ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে। তিনি বলেন, ‘পাবলিক প্লেসে একজনের ধূমপানের ফলে অন্যরা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন এটা এমন প্রমাণিত। কিশোর-তরুণদের ধূমপান আসক্তির দায় তাদের পরিবারের সদস্যদের উদাসীনতার ওপরও বর্তায়। শুধু একদিন ধূমপান না করলে হার্ট এটাকের আশঙ্কা কমে যাবে।’

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান ডাক্তার এস কাদির পাটোয়ারি বলেন, ‘তামাকের ব্যাপারে কিছু ভুল ধারণা এবং পারিবারিক ও মানসিক নানা ধরনের হতাশার কারণে কিশোর তরুণেরা অল্প বয়সেই জড়িয়ে পড়ছে ধূমপানে। আর ধূমপান থেকেই আসলে সব রকম নেশার দিকে যাত্রা শুরু হয়।’

তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো সরকারের কাছে বিভিন্ন সময় সিগারেটসহ বিভিন্ন  তামাকপণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে কর ও মূল্যবৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছে। সরকার তাদের দাবি অনুযায়ী গত কয়েকটি বাজেটে ভ্যাট আরোপ করেছে। ফলে গত চার থেকে ৫ বছরে সিগারেটের মূল্য দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু সংগঠনগুলো বলছে, আরো কর ও দাম বাড়ানোর জন্য। তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা ও আত্মা গতবছর সরকারের কাছে এমন প্রস্তাব তুলে ধরে জানায়, সরকার বেশি করে করারোপ করলে অতিরিক্ত রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে প্রায় ছয় লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো। নইলে ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক তামাক ব্যবহারকারী ও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার ৪ কোটি ১০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নজিরবিহীন স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়বে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুসারে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ নিয়মিত তামাকে আসক্ত। সংখ্যায় যা তিন  কোটি ৭৮ লাখ। বিভিন্ন ধরনের তামাকসেবীর মধ্যে ১৮ শতাংশ, অর্থাৎ এক কোটি ৯২ লাখ ধূমপানে অভ্যস্ত। আবার ধূমপান হিসেবে সিগারেটের ব্যবহারই বেশি। দেড় কোটি প্রাপ্তবয়স্ক সিগারেট পান করে থাকেন। শতাংশে এই হার দেশের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ।

অন্যদিকে আশঙ্কার কথা হচ্ছে, দেশে তামাকের প্রতি আসক্ত নারীর সংখ্যা উল্লেখজনক হারে বাড়ছে। আর্থসামাজিক অবস্থান, বৈশ্বিক সংস্কৃতির প্রভাবসহ বিভিন্ন কারণে নারীদের মধ্যে তামাকের প্রতি আসক্তির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads