• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

জাতীয়

ঢাকার ২ সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা

রাজধানীর জলাবদ্ধতার কারণ অকার্যকর যন্ত্র

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১১ জুন ২০২১

ঢাকা মহানগরীতে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা তো আছেই। পাশাপাশি ওয়াসা ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ যন্ত্রপাতি অকার্যকর। ফলে সময় মতো জলাবদ্ধতা নিরসন করাও সম্ভব হচ্ছে না।  

জানা গেছে—ঢাকা দক্ষিণের ৬টি পাম্পের মধ্যে বর্তমানে তিনটিই বিকল, ওয়াসার যন্ত্রপাতির ৮০ ভাগ বিকল, ৫৫টি স্লুইসগেটের মধ্যে ৩৭টি বিকল, অকার্যকর ড্রেনেজ লাইন এবং উন্মুক্ত স্থানের অভাব পুরোপুরি সুফল আনার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা।

দুই সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মতিঝিল, দিলকুশা, দৈনিক বাংলা, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, সেগুনবাগিচা, পল্টন, বেইলি রোড, সিদ্ধেশ্বরী, সার্কিট হাউজ রোড, রাজারবাগ, শান্তিবাগ, ফকিরেরপুল ও আরামবাগের পানি সেগুনবাগিচার বক্স কালভার্ট-কমলাপুর পাম্প-মানিক নগর খাল-জিরানি খাল ও মাণ্ডা খাল হয়ে বালু নদী ও বুড়িগঙ্গায় পতিত হয়। কিন্তু এ এলাকায়  ঢাকা দক্ষিণের একটি স্টেশনের ৩টি পাম্পের মধ্যে বর্তমানে দুটি বিকল হয়ে আছে। এখানকার প্রতিটি পাম্প প্রতি সেকেন্ডে ৫ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন করতে পারে। দুটি পাম্প বিকল থাকায়  অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে সমগ্র এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।

অপরদিকে কাপ্তান বাজার, লক্ষ্মীবাজার ও আগামসী লেনের পানি নিষ্কাশন করা হয় ইংলিশ রোড-ধোলাইখাল বক্স কালভার্ট হয়ে সূত্রাপুর পাম্প হাউসের মাধ্যমে।

এখানকার ৩টি পাম্পের মধ্যে একটি বর্তমানে বিকল অবস্থায় রয়েছে। সচল পাম্প দুটি প্রতি সেকেন্ডে ৭ হাজার করে ১৪ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন করতে পারে। অর্থাৎ বর্তমানে দুই পাম্প হাউসের সচল ৩টি পাম্প দিয়ে সেকেন্ডে ১৯ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হচ্ছে।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসার মালিকানাধীন ২৬টি খালের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়। খালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগের যন্ত্রপাতিগুলোও সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করেছে ঢাকা ওয়াসা। কিন্তু এসব যন্ত্রপাতির ৮০ শতাংশই বিকল বলে জানিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। এগুলো সচল করতে বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ করতে হচ্ছে সিটি করপোরেশনকে। এছাড়া জনবল দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো বাস্তবায়ন  হয়নি। তবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে খাল পরিষ্কারে কোমর বেঁধে মাঠে নামে দুই সিটি করপোরেশন। তবে দাপ্তরিকভাবে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব এখনো ঢাকা ওয়াসার।  প্রশাসনিক এই জটিলতার মাঝেই বৃষ্টির পানি নিরসনে কাজ করছে দুই সিটি করপোরেশন।

রাজধানীর চারদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-ডিএসসিসির এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫৫টি স্লুইসগেট রয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টি সম্পূর্ণ বিকল ও ১৩টি আংশিক সচল রয়েছে। এসব স্লুইসগেট সংস্কার করে সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করার জন্য পাউবোকে চিঠি দিয়েছে ডিএসসিসি। তবে হস্তান্তর কার্যক্রম এখনো শেষ না হলেও গেটগুলো পরিষ্কার ও সচল করতে এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে বলে জানায় ডিএসসিসি।

ঢাকা মহানগরীতে প্রায় ২ হাজার ৫শ কিলোমিটার ছোট ড্রেনেজ লাইন রয়েছে। কিন্তু শক্ত ইটপাথর আর প্লাস্টিকের বর্জ্য জমে এসব ড্রেনের বেশিরভাগই বিকল হয়ে আছে। ফলে জমে থাকা পানি ছোট ড্রেন থেকে বড় ড্রেন বা খাল পর্যন্ত যেতে পারছে না।

এবিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক, নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, শুধু খাল পরিষ্কার করলেই জলাবদ্ধতা নিরসন হবে না। এই চিন্তা থেকে সিটি করপোরেশনকে বেরিয়ে আসতে হবে। নগরীতে কংক্রিটের আস্তর বাদ দিয়ে উন্মুক্ত জায়গা সংরক্ষণ করতে হবে। প্রাকৃতিক পদ্ধতির সঙ্গে সমন্বয় করে পরিকল্পনা করতে হবে।

তিনি বলেন, জলাবদ্ধতার সমাধান চাইলে নগরীতে ২০-২৫ ভাগ সবুজায়ন থাকতে হবে। কমপক্ষে ৪০ ভাগ উন্মুক্ত এলাকা লাগবে। কিন্তু গত বছর পর্যন্ত আমাদের তা ছিল মাত্র ১৮ ভাগ। এর মধ্যে মূল শহরে উন্মুক্ত জায়গার পরিমাণ ১০ ভাগেরও কম। আজ  যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে, সেসব এলাকায় উন্মুক্ত জায়গা বা মাটির অস্তিত্ব নেই। মূলত বৃষ্টির পানি পড়ার পর কিছু অংশ মাটি শোষণ করবে, কিছু গাছপালা নেবে। বাকিগুলো খাল ও ড্রেন হয়ে নদীতে যাবে। কিন্তু আমাদের এসব ব্যবস্থা নেই বলেই জলাবদ্ধতা হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads