• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

জাতীয়

তুলা পুনর্ব্যবহার

বছরে সাশ্রয় ৫০০ মিলিয়ন

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৮ জুন ২০২১

২০১৯ সালে বাংলাদেশ ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন তুলা আমদানি করে। এ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টন তুলার বর্জ্য উৎপাদিত হয়, যা পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব ছিল। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশের পোশাক শিল্প খাতে শুধু কারখানার পরিত্যক্ত তুলা পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমেই প্রায় অর্ধবিলিয়ন ডলার বার্ষিক ব্যয় বাঁচানো সম্ভব। আবর্জনা দূরীকরণ ও সম্পদ পুনর্ব্যবহারের লক্ষ্যে কাজ করা একটি সার্কুলার ইকোনমিক গ্রুপ গত বুধবার এই তথ্য জানায়। খবর রয়টার্সের।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন তুলা আমদানি করে। এ থেকে ২,৫০,০০০ টন তুলার বর্জ্য উৎপাদিত হয়, যা পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব ছিল। ফ্যাশন খাতে পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদানের ব্যবহারকে উৎসাহিত করে এমন একটি প্রজেক্ট ‘সার্কুলার ফ্যাশন পার্টনারশিপের (সিএফপি) করা বিশ্লেষণ থেকে এসব তথ্য উঠে আসে।

সিএফপির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, কাটিং ও ববিনের শেষাংশের কাটা সুতা-এগুলো ‘শতভাগ শুদ্ধ তুলার বর্জ্য’, যা পুনর্ব্যবহার করলে আমদানির হার ১৫ শতাংশ কমানো সম্ভব। এর ফলে এই খাতে অর্ধবিলিয়ন ব্যয় কমানো যাবে।

অলাভজনক গ্লোবাল ফ্যাশন এজেন্ডার (জিএফএ) সিইও ফেডেরিকা মার্চিওন্নি বলেন, প্রাপ্ত তথ্যাবলি থেকে বোঝা যায়, সার্কুলার ফ্যাশন প্রক্রিয়ায় শুধু যে পরিবেশের উপকার হয়, তা নয়; এটি একটি দেশের জন্যও লাভজনক।

বর্তমানে তুলার বর্জ্যগুলো স্থানীয়রা সংগ্রহ করে থাকেন। তারা এগুলো ম্যাট্রেসের ভেতরে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করেন কিংবা বিদেশে পাঠিয়ে দেন পুনর্ব্যবহারের জন্য। জিএফএ’র সিনিয়র সাসটেইনেবিলিটি ম্যানেজার হলি সিরেট জানান, উৎপাদনকারীরা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্যও তুলা পুড়িয়ে ফেলেন। কিন্তু বর্জ্যগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হয় না এবং অনেক সময় এগুলো কোথায় যাচ্ছে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না।

ই-মেইল কমেন্টের মাধ্যমে সিরেট বলেন, উৎপাদনস্থলেই বর্জ্য আলাদা করা ও এর ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা টেক্সটাইল খাতে এগুলোর সর্বোচ্চ উপযোগিতা বের করে আনতে পারব। ২০১৮ সালে বৈশ্বিক ফ্যাশন খাত থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ ছিল ২ বিলিয়ন টন। বৈশ্বিক জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যেই এটি অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে বলে জানায় জিএফএ।

উন্নত বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ যৎসামান্য। কিন্তু দেশটির অর্থনীতি গার্মেন্ট শিল্পের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশই পোশাক শিল্প থেকে আসে এবং দেশের ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ এই খাতে কাজ করে।

গত ফেব্রুয়ারিতে সিএফপি পোশাক ব্র্যান্ডসমূহ, পুনর্ব্যবহারকারী ও উৎপাদনকারীদের একসঙ্গে নিয়ে আসে-এমন কিছু উপায় উদ্ভাবনের জন্য, যেন বাংলাদেশ আরো টেকসই প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

সিএফপি জানায়, প্রিমার্ক ও বেনেটন এই উদ্যোগের সর্বশেষ সংযোজন। এইচ অ্যান্ড এম ও সি অ্যান্ড এ’র মতো বড় পর্যায়ের খুচরা বিক্রেতারা ইতোমধ্যেই এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে। সিএফপি’র একটি অংশীদার, রিভার্স রিসোর্সেসের ‘পুনর্ব্যবহার’ শাখার প্রধান নিন ক্যাসল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘অন্য যেকোনো পোশাক উৎপাদনকারী দেশের চেয়ে বাংলাদেশে পুনর্ব্যবহারযোগ্য টেক্সটাইল বর্জ্যের পরিমাণ বেশি।’

বাংলাদেশের প্রতি ক্যাসল আহ্বান জানান, পোশাক শিল্পে আরও লাভবান হতে ও কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে তারা যেন দেশে একটি যথাযথ ‘পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্প খাত’ গড়ে তোলে।

সিরেট মনে করেন, পুনর্ব্যবহারের জন্য আলাদা একটি খাত গড়ে তুললে এখানে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হবে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান জানান, সার্কুলার অর্থনীতি তৈরিতে কারখানাগুলো আগ্রহী ছিল। তবে এই উদ্যোগ আসলেই উৎপাদনকারীদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার এবং সমাধানগুলো ভালোভাবে বোঝার আগ পর্যন্ত সতর্ক থাকা উচিত বলে তারা মনে করছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads