• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

জাতীয়

এবার কুরিয়ার সার্ভিসের লেনদেন হবে ব্যাংকে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২০ জুন ২০২১

দেশের প্রায় চারশ কুরিয়ার সার্ভিসের মধ্যে তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানই লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্সের আওতায় আনতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। লাইসেন্স ছাড়া কুরিয়ার সার্ভিসগুলো ‘কন্ডিশন ডেলিভারি’র টাকা হাতিয়ে নিতে পারে। এ অবস্থায় ব্যাংকের মাধ্যমে কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর লেনদেনের বাধ্যবাধকতা চালু করেছে সরকার। লাইসেন্স ছাড়া কোনো কুরিয়ার সার্ভিস ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এ বিষয়ে নির্দেশনাও জারি করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, কুরিয়ার সার্ভিসের বেলায় এতো দিন যা চলে আসছিল তা আর চলতে দেওয়া হবে না। এখন তাদের কার্যক্রম এতো বেড়েছে যে সাধারণভাবে দেখার সুযোগ নেই। তাই এগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনা হচ্ছে। শুধু কুরিয়ার সার্ভিস নয়, ডাক বিভাগের সেবাও এর আওতায় আসতে। সেবা প্রদান ব্যবস্থা ডিজিটাল হবে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে মনিটর করা যাবে। বুকিং দেওয়া পণ্য কোথায় আছে, কবে ডেলিভারি হবে এ সবও জানা যাবে।

লাইসেন্সপ্রাপ্ত কুরিয়ার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পারসেল বিতরণ হতে প্রাপ্ত (যা কন্ডিশন ডেলিভারি নামে বেশি পরিচিত) নগদ টাকা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে নেওয়ার জন্য গত ৬ মে একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।  বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. মেজবাউল হক স্বাক্ষরিত ওই সার্কুলারে বলা হয়, দেশে কার্যত কুরিয়ার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও অনলাইন ক্রয়-বিক্রয় প্লাটফর্মে বিক্রয়কৃত পণ্য ক্যাশ অন ডেলিভারি (সিওডি) ব্যবস্থায় ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।

কুরিয়ার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মাশুলের বিনিময়ে ক্রেতাকে পণ্য বিতরণপূর্বক আদায়কৃত পণ্যমূল্য বিক্রেতার কাছে পৌঁছানোর যে কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত তা ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালনার জন্য এবং এ ধরনের একটি নীতি কাঠামোর আওতায় আনার লক্ষ্যে কুরিয়ার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মূল্য ঘোষিত পণ্য হতে পাওয়া অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন পদ্ধতি শীর্ষক গাইডলাইন তৈরি হয়েছে। কুরিয়ার সার্ভিস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এর বাইরে অন্য কোনো আর্থিক সেবা দিতে পারবে না বলেও জানানো হয় ওই সার্কুলারে।

এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে ক্যাশ অন ডেলিভারি বা কন্ডিশন বুকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতার কাছ থেকে পণ্যমূল্য বাবদ সংগৃহীত নগদ অর্থ ব্যাংকে সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট পরিচালনার মাধ্যমে বিক্রেতার কাছে পৌঁছাবে। এতে লেনদেনে স্বচ্ছতাও আসবে। আবার লাইসেন্স নিতে গেলে কুরিয়ার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে মোটা অংকের ‘সিকিউরিটি মানি’ জমা রাখতে হয়। এটাও গ্রাহকদের জন্য এক ধরনের নিরাপত্তা-চাদরের কাজ করে।

আবার ব্যাংকে সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলতে কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে এবং কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হতে হবে। লাইসেন্সবিহীন কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করাও এ উদ্যোগের একটি উদ্দেশ্য বলে জানা গেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এতে  সাধারণ মানুষের আস্থা আরো বাড়বে। কোনো কুরিয়ার সার্ভিস গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারবে না।

এ বিষয়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান সেলেক্সট্রা ডট কম ডট বিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিব আরাফাত বলেন, ‘এটা শুভ উদ্যোগ। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের আস্থাও বাড়বে।’

কুরিয়ার ও লজিস্টিকস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইকুরিয়ারের প্রধান নির্বাহী বিপ্লব ঘোষ রাহুল বলেন, আমরা আমাদের ক্লায়েন্টদের অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করি। আমরা এখন সপ্তাহে তিনদিন উদ্যোক্তাদের পাওনা অর্থ ব্যাংকে জমা দিই। তিনি মনে করেন, এই পদ্ধতিতে অর্থ পরিশোধ করা করা হলে কোনো প্রতিষ্ঠান বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে সটকে পড়তে পারবে না। কারণ নবায়ন করা লাইসেন্স ছাড়া তো ব্যাংকে হিসাব খোলা যাবে না। ফলে লাইসেন্সধারীকে সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads