• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

সংক্রমণের ঝুঁকি পশুর হাটে!

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ১৫ জুলাই ২০২১

দেশের অর্থনীতি, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা এবং ধর্মীয় কারণে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে লকডাউন শিথিল করেছে সরকার। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে বাড়বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। যদিও রাজধানীসহ সারা দেশে কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে; কিন্তু এসব উদ্যোগের কতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। এজন্য পশুর হাটের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং হাট ইজারাদারদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোরবানির হাটের কারণে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। যারা গরু নিয়ে এসব হাটে আসবেন, তাদের মাধ্যমে যেমন ভাইরাস আসতে পারে, তেমনি যারা গরু কিনতে যাবেন, তাদের মাধ্যমেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেইসঙ্গে মাংস কাটা ও সংগ্রহ যারা করবেন, তাদের মাধ্যমেও বিস্তার ঘটতে পারে। আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন জোট ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন-গ্যাভি’র সদস্য এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. নিজামউদ্দিন আহমেদের মতে, ‘কোরবানির সঙ্গে ধর্মীয় অনুশাসনের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির বিরাট একটা যোগ রয়েছে। তাই সরকারের এমন সিদ্ধান্ত না নিয়ে উপায় ছিল না।’ তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘রোগটা সরকারের না, ব্যক্তির। তাই ব্যক্তি পর্যায় থেকে আমরা সচেতন না হলে সরকার যতই লকডাউন দিক কোনো ফল আসবে না। কিন্তু যেহেতু সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতার অভাব রয়েছে, তাই তাদের উদ্বুদ্ধ করতে পশু হাটগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং হাট ইজারাদারদে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবীদের পাশাশাশি বিএনসিসি এবং স্কাউটের মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে কাজে লাগানো দরকার। পাশাপাশি এনজিওগুলোকে এ ক্ষেত্রে কিছু দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।’

এদিকে ঢাকা দুই সিটির মেয়র বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানির পশুর হাট বসবে। হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় সচেতনতামূলক ব্যানার, পোস্টারের পাশাপাশি মাইকে প্রচারের ব্যবস্থাও থাকবে। ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘হাটগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটি হাটে ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক, পর্যাপ্ত সংখ্যক মাস্ক দেওয়া হবে। এছাড়া ইজারাদারদের পক্ষ থেকে সব হাটেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রীর সরবরাহ থাকবে।’

এছাড়া এ বছর হাটগুলোর প্রবেশ ও বাহির পথ আলাদা থাকতে হবে এবং নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা করা হবে। বরাবরের মতো এবারো প্রতিটি হাটে প্রয়োজনীয় সিসি ক্যামেরা থাকবে ব্যবস্থাও করা হবে বলে তিনি জানান।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির মাঝেও কোরবানি পশুর হাট বসানোর যৌক্তিতা তুলে ধরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর করোনা মহামারির মধ্যেও সরকার থেকে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। এ বছর করোনার প্রাদুর্ভাব বেশি থাকা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

মন্ত্রী ক্রেতা-বিক্রেতা প্রত্যেকের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র এবং হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত বেসিন, পানি এবং জীবাণুনাশক সাবান রাখার নির্দেশনা দেন। এছাড়া পশু কোরবানির পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করেন তিনি। এদিকে সংক্রমণ এড়াতে অনলাইনে কোরবানির পশু বেচাকেনায় উৎসাহ দিচ্ছে সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ জুলাই দেশব্যাপী উদ্বোধন করা হয় ‘ডিজিটাল হাট’। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ভার্চুয়ালি এ হাটের উদ্বোধন করেন।

সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগের কারণে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইনে পশু কেনাবেচা। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত সারা দেশে অনলাইনের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ৫৭ হাজার কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে। এর বাইরে ফেসবুকভিত্তিক আরো অসংখ্য হাটের মাধ্যমেও প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশু। যার সংখ্যাও নেহায়েত কম না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

ই-ক্যাব’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘ই-ক্যাবের তালিকাভুক্ত ১‘শোরও বেশি অনলাইন প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পশু বিক্রি করছে। ২৪২টি কোরবানি পশুর হাট অনলাইন প্লাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ক্রেতা বিক্রেতার যে-কোনো সমস্যার জন্য রাখা হয়েছে অভিযোগ সেন্টারও’।

অনলাইন ক্রয়-বিক্রয়ে আস্থা বাড়াতে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে সরকার। গত ৩০ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ডিজিটাল হাট-এর নীতিমালায় ক্রেতা যাতে ত্রুটিহীন পছন্দের কোরবানির পশুটি সময় মতো হাতে পান সেটি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ক্রেতাদের নিরাপদ পেমেন্টে নিশ্চিত করতে চালু করা হয়েছে ‘এসক্রো সার্ভিস’। সরকারের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন(এটুআই) প্রকল্প এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে পরিচালিত হবে এই সার্ভিস। যার মাধ্যমে, ক্রেতার অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা থাকবে। ক্রেতাকে পশু ডেলিভারি দেওয়ার পর পুরো অর্থ ছাড় করতে পারবে অনলাইন প্রতিষ্ঠান।  

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads