• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

জাতীয়

দাম পাননি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৫ জুলাই ২০২১

সরকারের বেঁধে দেওয়া চামড়ার দামের সুফল পাননি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তবে আগের বছরের চেয়ে চামড়ার দাম এবার কিছুটা বেড়েছে। এই দাম বৃদ্ধি আশানুরূপ নয়, বলছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

গত বছর অপেক্ষাকৃত কম দামে চামড়া কেনাবেচা, বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দেওয়া কিংবা মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনা ঘটলেও এবার তেমনটি হয়নি। আড়তদাররা বলছেন, আগের বছরের চেয়ে এবার বেশি দামে চামড়া কেনা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিগত দুই বছরের তুলনায় এবারের বাজার ভালো ছিল।

এদিকে লবণের বাজার হঠাৎ করেই বেড়েছে। বস্তাপ্রতি লবণের দাম ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ বা ১০০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

রাজধানীর কাঁচা চামড়ার কয়েকটি আড়ত ঘুরে দেখা যায়, এবার গরুর চামড়া গড়ে বিক্রি হয়েছে ৪০০-৬০০ টাকা। বড় গরুর চামড়া ৭০০-৮০০ টাকা আর অপেক্ষাকৃত ছোট বা মাঝারি আকারের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩০০-৪০০ টাকা। খাসির চামড়ার দাম পাননি মৌসুমি ব্যবসায়ী বা এতিমখানার চামড়া সংগ্রহকারীরা। এবার খাসির চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০-৩০ টাকায়।

ঈদের দিন বিকালে ৫০ টাকা করে বিক্রি হলেও বেলা গড়ার পরপর দাম কমতে থাকে। স্থানীয়রা জানান, দাম না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকজন খাসির চামড়া ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব উদ্দিন দাবি করেন, সরকার দাম বৃদ্ধি করার কারণে এবার মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়া এবং এতিমখানা চামড়ার ভালো দাম পেয়েছে। বিগত দুই বছরের চেয়ে এবার চামড়ার বাজার ভালো। গরুর চামড়া আকারভেদে ৫০০-১১০০ টাকায় কেনা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি ও চাহিদা থাকায় চামড়ার দাম বাড়িয়ে নির্ধারণ করেছে সরকার। এবার প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া বাড়ানো হয়েছে ৫ টাকা। সেই হিসাবে আগের বছরের তুলনায় আড়তদারেরা প্রতিটি চামড়া ১০০-২০০ টাকা বেশি দামে কিনলেও, সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় কম। চট্টগ্রামের চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম জানান, একটি বড় আকারের গরুর চামড়া ৩৫-৪০ বর্গফুট, মাঝারি আকারের চামড়া গড়ে ২৫-৩০ ফুট আর ছোট আকারের গরুর চামড়া হয় ১৬-২০ ফুট। আড়তদারেরা জানান, একটি চামড়া সংরক্ষণ করতে ৮-১০ কেজি লবণ প্রয়োজন হয়। সেই হিসাবে প্রতিটি কাঁচা চামড়ায় সংরক্ষণে বাড়তি ২০০ টাকা খরচ হবে।

ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, একটি বড় গরুর চামড়া গড়ে ৩০ বর্গফুট ধরা হলে দাম পড়ে ১২০০-১৩৫০ টাকা। আর মাঝারি গরুর চামড়ার গড়ে ২৫ বর্গফুটে সর্বনিম্ন ১০০০-১১২৫ টাকা আর ছোট গরুর চামড়া গড়ে ২০ বর্গফুট ধরা হলে সর্বনিম্ন ৮০০-৯০০ টাকা দাম হয়। তবে রাজধানীর আড়তদাররা মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এই চামড়া গড়ে ৪০০-৬০০ টাকায় কিনেছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা চামড়া লবণজাত করে ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করবেন আড়তদাররা।

প্রতি বছর কোরবানির সময় চামড়া কিনে আড়তে বিক্রি করেন সেলিম মোল্লা। তিনি একজন মৌসুমি ব্যবসায়ী। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার সময় প্রায় অর্ধশতাধিক চামড়া নিয়ে আসেন পোস্তায়। ৮০০ টাকা করে চামড়া বিক্রির জন্য কয়েকটি আড়তে ঘুরলেও বিক্রি করতে পেরেছেন ৬০০ টাকা করে।

তিনি বলেন, এবার দাম ভালো পাবার আশা করেছিলাম কিন্তু আশানুরূপ পাইনি। আড়তদাররা কম দামে চামড়া কিনছেন।

রাজধানীতে কাঁচা চামড়ার প্রধান আড়ত লালবাগের পোস্তা। কোরবানির ঈদ আসলেই সরগরম হয় পুরান ঢাকার এই স্থানটি। ঈদের দিন দুপুর থেকেই কাঁচা চামড়া আসতে থাকায় জমজমাট হয়ে ওঠে পোস্তা। ঢাকার অলিগলি থেকে সংগৃহীত চামড়াবাহী রিকশা, ভ্যান ও ট্রাকের গন্তব্য পোস্তা। আর আড়তদাররাও এই চামড়া কিনে লবণ মাখিয়ে সংরক্ষণ করেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার পোস্তায় কাঁচা চামড়া এসেছে কম। এই বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, আগের বছরের চেয়ে এবার গরু কোরবানি কমেছে। এছাড়া গরম বেশি হওয়ায় যেখানে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে, সেখানেই সংরক্ষণ করতে বলায় কম এসেছে।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবমতে, ঢাকায় চামড়া সংগ্রহ হয় প্রায় পাঁচ লাখ। ঈদের দিন ও পরদিন মিলে প্রায় দুই লাখের মতো চামড়া পোস্তার আড়তদারদের হাতে আসে। শীতকালে এই চামড়া আসে প্রায় তিন লাখ।

এবার ঈদের তৃতীয় দিন মিলে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত রাজধানীর পোস্তায় কাঁচা চামড়া এসেছে প্রায় ১.৫০-১.৭০ লাখ। আশপাশে অবৈধভাবে অস্থায়ী আড়ত গড়ে ওঠায় চামড়া কম সংগ্রহ হয়েছে বলে মনে করছেন সংগঠনটির নেতারা।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, ঢাকার ভেতরে কাঁচা চামড়া সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তা অর্জিত হয়নি। এবার অন্তত ২০-২৫ শতাংশ কম হয়েছে। তবে এবার চামড়ার বাজার ভালো গেছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কিছুটা দাম পেয়েছে। প্রতিটি চামড়া আগের বছরের চেয়ে ১০০-২০০ টাকা বেশিতে কেনা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এবার কোরবানি কিছুটা কমেছে। তাই চাহিদা অনুযায়ী চামড়া আসেনি।

চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সেতু ভূষণ দাশ বলেন, প্রতিবার চট্টগ্রামে প্রায় পাঁচ লাখ পশু কোরবানি হলেও এবার হয়েছে সাড়ে চার লাখ, যা গতবছরের চেয়ে পাঁচ শতাংশের মতো কম। এর ফলে চামড়ার পরিমাণও কমেছে। আবার আড়তদারদের জোটবদ্ধ কারসাজির কারণে চামড়ার দর ছিল কম।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, চট্টগ্রামে এবার গত বছরের মতো সড়কে চামড়া ফেলে দেওয়ার পরিস্থিতি দেখা যায়নি। শুধু বৃহস্পতিবার ভোরে আতুরার ডিপো এলাকায় বিক্রি করতে না পেরে চামড়া ফেলে যাওয়ার খবর পেয়ে তা সংগ্রহ করে নগরের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদরাসা ও ষোলশহর মাদরাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত আড়তে আমরা দেড় লাখের কিছু বেশি চামড়া পেয়েছি। বিভিন্ন মাদরাসায় এবং অনেকে ব্যক্তিগতভাবে ৫০ হাজারের মতো চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করছেন। এছাড়া গ্রামে আরো লাখখানেক চামড়া আছে। সব মিলিয়ে আমরা এবার সাড়ে তিন লাখের মতো চামড়া সংগ্রহ করতে পারব বলে আশা করছি। কোরবানি কম হওয়ায় প্রায় ৫০ হাজার চামড়া সংগ্রহ কম হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads