• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

জাতীয়

করোনা মোকাবিলায় নেই সমন্বিত উদ্যোগ

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২৭ জুলাই ২০২১

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে রাজনৈতিক দলসহ জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সর্বদলীয় কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও কার্যত কোনো উদ্যোগ নেই। যদিও দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই বিভিন্ন সময়ে একসাথে কাজ করার কথা বলেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, করোনার প্রভাব যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি, তাই জনসম্পৃক্তার মাধ্যমে জনচেতনতা তৈরি ছাড়া ভয়াবহ এই মহামারি মোকাবিলা এককভাবে সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা বলছেন, জঙ্গিবাদ, এসিড সন্ত্রাস, বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক সমস্যাগুলো জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমেই মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছিল। ঠিক একইভাবে করোনাকেও মোকাবিলা করা সম্ভব, যদি জনসাধারণকে করোনা প্রতিরোধে সম্পৃক্ত করা যায়। আর এই কাজটি খুব সহজেই সম্ভব রাজনৈতিক দল, জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক সংগঠনগুলোর সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমেই।

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে করোনা মোকাবিলায় সর্বলীয় কমিটির মতো সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এমন কোনো কমিটি দীর্ঘ সময়েও গঠিত হয়নি। এ প্রসঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য, ক্ষমতাসীন সরকারি দলকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

সর্বশেষ জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও প্রতিটি পাড়ায় করোনা প্রতিরোধ কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। তাঁর মতে, এই কমিটি করোনা প্রতিরোধে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব অনেক বেশি উল্লেখ করে ফরহাদ হোসেন বলেন, জনগণকে সচেতন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় উদ্বুদ্ধ করতে জনপ্রতিনিধিদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। গত রোবাবর মেহেরপুর জেলা প্রশাসন আয়োজিত কোভিড-১৯ বিস্তার রোধে চলমান বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এক সময় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করতে পেরেছিলাম। ফলে জঙ্গিবাদ দমনে আমরা সফল হয়েছি। এছাড়া বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিংয়ের মতো সমস্যাগুলোও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। তেমনি কোভিড-১৯ মোকাবিলায়ও জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য সামাজিক আন্দোলন গড় তুলতে হবে।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, যেহেতু করোনা সংকটটি দীর্ঘদিন ধরে চলার সম্ভাবনা রয়েছে প্রতিটি পাড়ায় করোনা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে। তাই এই কমিটিকেও দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার প্রস্ততি রাখতে হবে। এই কমিটির মূল কাজ হবে, মাস্ক বিতরণ ও পরিধানে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা; কারো করোনা উপসর্গ দেখা দিলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া ও টেস্টের ব্যবস্থা করা এবং সকলকে ভ্যাকসিন গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা। পাশাপাশি এই কমিটি জনসমাগম হয় এরূপ স্থানে তদারকি জোরদার করবে, যাতে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। সবার আন্তরিক সহযোগিতার ফলেই দ্রুত করোনা সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় দলমত নির্বিশেষে সবাইকে করোনা মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। তিনি বলেছিলেন, মহামারির এই সময়ে অপরাজনীতি পরিহার করে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে করোনা মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

অন্যদিকে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ‘সর্বদলীয় কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমরা আবারো প্রস্তাব রাখছি, এখনো সময় আছে সর্বদলীয় কমিটি গঠন করে জনগণকে সম্পৃক্ত করুন। তাহলেই শুধুমাত্র এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে। একটা কথা আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, এটা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ যা জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।

তিনি আরো বলেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হলে আমরা যেটা এর আগেও বলেছি, রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি সব স্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মানুষকে করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে।

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরও বলেছেন একই কথা। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে সম্মিলিতভাবে করোনা মোকাবিলা করতে হবে। সব রাজনৈতিক দল, এনজিও এবং পেশাজীবীদের নিয়ে করোনা মোকাবিলা করতে হবে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সরকারকে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় আমরা সরকারের যে কোনো কর্মকাণ্ড সফল করতে আগ্রহী।

তবে এ ধরনের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সরকারি দলকেই উদ্যোগী হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, গত ১৩ এপ্রিল বাম জোট জাতীয় পরামর্শ সভার আয়োজন করেছিলাম। আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোট, বাম জোটসহ যুদ্ধাপরাধী ও মৌলবাদীদের দল ছাড়া আমরা কিন্তু সবাইকে আমন্ত্রণও জানিয়েছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিনিধি শেষ পর্যন্ত আসেনি। আমরা বলেছিলাম, জাতীয় দুর্যোগকে জাতীয়ভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। সেজন্য আমাদের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করব। সেখানে সরকারের দায়িত্ব ছিল সব বিরোধী দলকে আস্থায় নেওয়া। সবাইকে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সমন্বয় কমিটি করা যেত। একটা পরামর্শ কমিটি দাঁড় করাতে পারত। তাহলে মানুষের মধ্যে একটা বল বা ভরসার জায়গা আসত। এমনকি সরকারের দুর্বলতা ও সমন্বয়হীনতাও চিহ্নিত করা সম্ভব হতো। কিন্তু বাস্তবে সরকার একলা চলো নীতি অবলম্বন করল।

শুধুু রাজনৈতিক দলই নয়, সমন্বিত উদ্যোগের কথা উচ্চারিত হচ্ছে বিভিন্ন প্ল্যাটফরম থেকেও। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সভাকক্ষে এ বিষয়ে একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় উচ্চশক্ষাি ও গবেষণায় করোনা ভাইরাসের মতো যে কোনো বিপর্যয় মোকাবিলায় চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শক্রমে ভিডিও মিটিং-এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ গবেষণা ও অনলাইন প্ল্যাটফরমে শিক্ষাদান করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জনসচতেনতামূলক কার্যক্রম, হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির সহজ পদ্ধতি, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নিরাপত্তা বিষয়ে কিভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন সেসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

সভায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিডিরেন) এর ডাটা সেন্টারে স্থাপিত জুম এপ্লিকেশনটি ব্যবহার করা যেতে পারে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এর মাধ্যমে অনলাইনে দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসক/বিশেষজ্ঞগণকে দিয়ে ‘করোনা ভাইরাস’ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের দীক্ষিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads