• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

জাতীয়

শিক্ষাঙ্গনে ফিরেছে প্র্রাণচাঞ্চল্য

ডেঙ্গুও এখন উদ্বেগের কারণ : শিক্ষামন্ত্রী

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

শিক্ষার্থীদের পদচারণায় আবারো মুখরিত হয়ে উঠেছে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষক, শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের মাঝে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস আর আন্দন্দে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে স্কুল-কলেজগুলোতে। প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ায় যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন সবাই। আনন্দ উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ দেখে মনে হয়েছে এ যেন দীর্ঘদিন অন্ধকার  প্রকোষ্ঠ থেকে মুক্তির পর উন্মুক্ত আকাশের নিচে নিঃশ্বাস নেওয়ার আনন্দ। শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের বরণ করেছেন অনেকটা নবীন-বরণের মতো করে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ক্লাস করেছেন শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকেই অভিভাবকদের সঙ্গে স্কুলে এসেছে ছাত্রছাত্রীরা। দীর্ঘদিন পর সহপাঠী ও শিক্ষকদের একসাথে পেয়ে খুশি সবাই। স্কুলের প্রধান ফটক খোলার আগে বাইরে সবাইকে কুশল বিনিময় করতে দেখা গেছে। স্কুলের গেটে তাপমাত্রা মেপে আর হাতে স্যানিটাইজার ছিটিয়ে তারপর যেতে হয়েছে শ্রেণিকক্ষে। দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীদের পেয়ে খুশি শিক্ষকরাও।

রাজধানীর বাড্ডা আলাতুন্নেসা স্কুলের শিক্ষার্থী নাজিম উদ্দিন জানান,  ‘স্কুলে এসে খুব ভালো লাগছে। ক্লাসে ফিরতে পেরে খুব খুশি আমরা।’ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি খুশি অভিভাবকরাও। এক অভিভাবক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘এতদিন খুবই টেনশনে ছিলাম কবে স্কুল খুলবে। বাচ্চারা সারাক্ষণ বাসায় থাকতে থাকতে মানসিক সমস্যা হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।  মোবাইল কম্পিউটারে আসক্তি বেড়ে গিয়েছে। ওদের জীবন থেকে যে মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়াই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।’ দশম শ্রেণির ছাত্রী নাফিসা জানান, অনলাইনের চেয়ে ক্লাস রুমেই বেশি সহজ লাগছে তাদের। পুরনো বন্ধুদের পেয়ে ঘরবন্দি জীবনের একঘেয়েমিও কেটেছে অনেকটা।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় গতবছর মার্চে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সংক্রমণের হার কিছুটা কমায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাস শুরু হলো গতকাল থেকে। তবে শুরুতেই সব শ্রেণির ক্লাস একসঙ্গে শুরু হচ্ছে না। কোন শ্রেণির ক্লাস কবে হবে, তার আলাদা রুটিনও করে দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের সামনে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা, সাতটি শৌচাগার আধুনিকায়ন ও পৃথক ড্রেসিং রুম করে দেওয়া হয়েছে কিছু স্কুলে। এছাড়া সব শিক্ষার্থীকে সরবরাহের জন্য মাস্কের ব্যবস্থা আছে। এদিকে, অভিভাবকদের কেউ কেউ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত হলেও বেশিরভাগই স্কুল কলেজ খুলে দেওয়ায় সন্তোষ জানিয়েছেন। রাজধানীর রামপুরার একটি স্কুলের সামনে অপেক্ষমাণ অভিভাবক নাজির হোসেন বলেন, ‘স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় বাচ্চাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। তাদের মানসিক বিকাশ থমকে গেছে। তাদের শেখার আগ্রহ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এছাড়া, স্কুল না থাকলে সারাক্ষণ বাসায় আটকে রাখা সম্ভব না। বাসা থেকে বের হয়ে বাজে ছেলেদের সাথে মিলে বখে যাওয়ার একটা ভয় সবসময় কাজ করতো। এখন সেই ভয়ের অবসান হয়েছে।’

করোনা সংক্রমণের বিষয়ে অভিভাবক আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা সচেতন থাকলে বাচ্চাদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ হওয়া কঠিন। তাই আমি মনে করি স্কুল কলেজ খোলা রাখা উচিত এবং সেটা আরো আগেই খুলে দেওয়া উচিত ছিল।’ আরেক অভিভাবক নাসিমা খানম বলেন,  ‘ডিসেম্বরে পরীক্ষা হবে। ছেলেমেয়েদের মানসিক অবস্থা যা হয়েছে তাতে এর আগে সব সিলেবাস শেষ করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।’

এদিকে, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপুমনি দেড় বছর পর স্কুল-কলেজ খোলায় দেশব্যাপী করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি গতকাল রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুল পরিদর্শনকালে এমন উদ্বেগের কথা জানান। মন্ত্রী বলেন, ‘ক্লাসে ফিরতে পারায় সবার মাঝে উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। তবে, কেবল করোনা ভাইরাসই নয়, ডেঙ্গুও এখন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডেঙ্গু ছড়ায় দিনের বেলা। শিক্ষার্থীরা এসময় স্কুলে থাকায় অভিভাবকরা চিন্তিত। শিক্ষার্থীদের উচিত হবে ফুলহাতা জামা ও মোজা পরা।’ দীপু মনি আরো বলেন, ‘আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদের ড্রেস কোডের বিষয়ে নমনীয় হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি কেননা, অনেক শিক্ষার্থীর ইউনিফর্মই হয়তো ছোট হয়ে গেছে। নতুন পোশাকের ব্যবস্থা করতে সময়ের প্রয়োজন হতে পারে।’

শিক্ষামন্ত্রী আরো জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে মন্ত্রণালয় প্রদত্ত প্রতিদিনের চেকলিস্ট প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। অভিভাবকদের স্কুলের সামনে জড়ো না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আরো সতর্ক হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

অন্যদিকে, শিক্ষামন্ত্রী পরিদর্শনের সময় একটি কক্ষ অপরিষ্কার থাকায় কলেজের অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের। মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক এ বিষয়ে জানান, ‘একটি কক্ষ অপরিষ্কার পাওয়ায় অধ্যক্ষকে আমরা প্রথমে শোকজ করব, কিছু করতে হলে তো আগে শোকজ করতে হয়।’

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ হাসিবুর রহমান জানান, ‘মন্ত্রী যখন পরিদর্শনে আসেন, তখন তিনি আমদের কলেজের একটি স্টোর রুমে গিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমি তখন বলতে পারিনি যে এটা স্টোর রুম।

মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরাসরি ক্লাস নেওয়ার বিষয়েও জোর দিচ্ছে সরকার। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সেজন্য ১৯ দফা নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। তাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশ পথে নিয়মিত তাপমাত্রা মাপা, ভিড় এড়াতে প্রতিষ্ঠানের সব প্রবেশমুখ ব্যবহার করা, একটি প্রবেশমুখ থাকলে একাধিক প্রবেশমুখের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads