• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

মন্দা কাটছে না বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি গত মে মাসে হয়েছে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ; যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। জুন মাসে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গত বৃহস্পতিবার দেওয়া হালনাগাদ তথ্য থেকে জানা গেছে, জুলাইয়ে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি আরো একটু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এদিকে জুলাই মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অতি সামান্য বাড়লেও গত জুনের তুলনায় বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুন শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। গত জুলাই শেষে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ লাখ ৮৭ হাজার ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগের মাসের তুলনায় ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে এক হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা কম বিতরণ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আগের অর্থবছরের জুলাই শেষে বেসরকারি খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৯৫ হাজার ২০১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক হচ্ছে বেসরকারি ঋণ। সেই ঋণ যদি না বাড়ে, তাহলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে না। আর দেশি বিনিয়োগ না হলে, বিদেশি বিনিয়োগও আসবে না। আর বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান হবে না।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিনিয়োগ পরিবেশ না থাকায় ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে না। তবে মহামারির এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কেবল প্রণোদনার ঋণ নিয়েছেন। তিনি বলেন, বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি হলে তবেই ঋণ বিতরণ বাড়বে। তার মতে, ঋণ বিতরণের চেয়ে বড় উদ্বেগের হচ্ছে, যে বিশাল অঙ্কের প্রণোদনার ঋণ ব্যাংকগুলো দিয়েছে, তা যদি ঠিকমতো আদায় না হয়, তাহলে গোটা ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এদিকে ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, লকডাউন খুলে দেওয়ার পর ব্যবসায়ীদের অনেকেই ব্যাংকে যাওয়া শুরু করেছেন ঋণ নেওয়ার জন্য। গত আগস্ট ও চলতি সেপ্টেম্বরে এই হার আরো বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত এপ্রিলে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। তার আগের মাস মার্চে ছিল ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল, তার ওপর ভর করে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে দেশে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধিতে গতি এসেছিল। কিন্তু অক্টোবর থেকে তা আবার কমতে শুরু করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মহামারির ধাক্কায় গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। এরপর সরকারের প্রণোদনা ঋণে ভর করে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এই প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ হয়। আগস্টে তা আরো বেড়ে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশে এবং সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশে ওঠে। কিন্তু অক্টোবরে এই প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। নভেম্বরে তা আরো কমে ৮ দশমিক ২১ শতাংশ হয়। ডিসেম্বরে সামান্য বেড়ে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়।

২০২১ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৫১ ও ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads