• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

কর্মসংস্থান ৫ লাখ তরুণের

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

জেলা থেকে বিভাগ। আবার বিভাগ থেকেই ৬৪টি জেলা। বলছি শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টারের কথা। তরুণদের মানবসম্পদে তৈরি করতে প্রথমে এক জেলা থেকেই শুরু হয়েছিল। বর্তমানে সারা দেশে গড়ে তোলা হচ্ছে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টার। দেশের তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আইটিতে দক্ষ এবং নিজেদের আত্মকর্মসংস্থানের তৈরিতে বিশাল ভূমিকা পালন করবে। বলা হচ্ছে আগামি ২০৪১ সাল নাগাদ সারা দেশে এ ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ কাজ শেষ হলে প্রতি বছর ১০ লাখ তরুণ ট্রেনিংয়ের আওতায় আসবে। আর ৫ লাখ তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।

জানা যায়, নাটোরের পুরনো জেলখানা মেরামত করে সেখানে গড়ে তোলা হয় তথ্য প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেখান থেকে ধারণা নেওয়া হয়, এরকম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আরো গড়ে তোলা হবে। হাতে নেওয়া হলো পরিকল্পনা। পাস হলো প্রকল্প। সেই থেকে শুরু। প্রকল্পের এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নাম রাখা হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের নামে।

এরপর সারা দেশে গড়ে উঠছে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার। ইতোমধ্যে দেশের আটটি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে আটটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে ১৯টি জেলায় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬৪জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার গড়ে তোলার কাজ শেষ হবে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার প্রকল্পটি মূলত ডিজিটাল বাংলাদেশের আর্কিটেক্ট সজীব ওয়াজেদ জয়ের মস্তিষ্কপ্রসূত। তিনি ২০১৬ সালে এসএসসি, এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। ইতোমধ্যে আমরা বাংলাদেশের আটটি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ কাজ চলমান রেখেছি। ২০২১ সালের মধ্যে আটটির সম্পূর্ণ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।’ 

পলক আরো বলেন, ‘গত মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক বৈঠকে আরও নতুন শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। ফলে ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা ১৯টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কাজ শেষ করতে পারবো।’

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০৪১ সাল নাগাদ ৬৪টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টার থেকে ১০ লাখ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষার্থীর কর্মসংস্থান সেন্টারগুলো থেকে নিশ্চিত করতে পারবো বলে আশা করছি। এসব সেন্টার থেকে ইমেজ প্রসেসিং, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল অ্যাপস ও ডেভেলপমেন্ট, ফটোশপ, ডিজিটাল মার্কেটিং, ডাটা এন্ট্রি, কল সেন্টার এজেন্ট তৈরির মতো প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বর্তমানে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার সেবা খাতের যে প্রয়োজনীয় লোকবল দরকার সেটা মাথায় রেখেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। ছয় মাস ব্যাপী সার্টিফিকেট কোর্স এবং ১২ থেকে ২৪ মাস মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স কারিকুলাম ডিজাইন করা হচ্ছে। এসব সেন্টারে একদিকে যেমন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে, অন্যদিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ইনকিউবেশনের সুযোগ থাকবে। আইটি ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য এসব সেন্টারে ছোট ছোট কিছু ওয়ার্কিং স্পেস থাকবে।

পরিত্যক্ত জেলখানা এখন আইটি ট্রেনিং সেন্টার : নাটোরের বড় হরিশপুরে পুরনো জেলখানা মেরামত ও আধুনিকায়ন করে বেশ কিছুদিন ধরে তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত সুবিধা দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিষয় যেমন- গ্রাফিকস ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং ট্রাবলশ্যুট, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন,কন্ডাকন্টিং ই-কমার্স ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বেসিকের ওপর ৪৮০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, প্রায় ৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নাটোরে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। যদিও পুরনো জেলখানার ভবনগুলো সংস্কার করে এতদিন প্রশিক্ষণের কাজ চলছিল। নতুন ভবন উদ্বোধনের ফলে প্রশিক্ষণার্থীরা এখন থেকে ইনকিউবেশনের সুবিধাও পাবেন। এ বিষয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রশিক্ষণার্থীরা এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে অর্থ উপার্জন শুরু করেছেন। ভবিষ্যতে নাটোর হবে প্রযুক্তির উত্তরাঞ্চলীয় হাব। শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের সমপ্রসারণে ৪৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে।’

জানা যায়, আরো ১১টি আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে পরিকল্পনা কমিশনে ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ স্থাপন বিষয়ক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়। এটি বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। গত ২৫ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হলে তা অনুমোদন পায়। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, জয়পুরহাটের কালাই, দিনাজপুর সদর, মানিকগঞ্জের শিবালয়, কিশোরগঞ্জ সদর, নারায়ণগঞ্জ সদর, চাঁদপুরের মতলব, বান্দরবানের বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ভোলা সদর, কুষ্টিয়া সদর ও মেহেরপুর সদরে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন হবে। এসব সেন্টার প্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা করবে।

রাজশাহীতে শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেটর তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন। ভবনে এরই মধ্যে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে হাই-টেক পার্ক সূত্রে জানা গেছে।

এছাড়া, খুলনায় আইটি ইনকিউবেটর কাম ট্রেনিং সেন্টার তৈরি হচ্ছে। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টারের ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। গত জুন মাসের মধ্যে ভবনটির ৮৫ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। নভেম্বর মাসের মধ্যে এ ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানা গেছে।

হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত জুন মাস পর্যন্ত শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার গড়ে তোলার কারযক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এর মধ্যে মাগুরায় সেন্টার নির্মাণ কাজের ৮২ শতাংশ, বরিশালে ভবন নির্মাণ কাজের ৮১ শতাংশ, সিলেটে ভবন নির্মাণ কাজের ৭৫ শতাংশ, কুমিল্লায় ভবন নির্মাণ কাজের ৭২ শতাংশ, নাটোরে ভবন নির্মাণ কাজের ৫২ শতাংশ, নেত্রকোণায় ভবন নির্মাণ কাজের ৩৭ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। চট্টগ্রাম ও রংপুরের পীরগঞ্জে কাজের জন্য চুক্তি সম্পন্ন ও কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সব জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টার করা হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম। গত মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে আয়োজিত এক চুক্তি সই অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

সচিব বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীনে গৃহীত একটি প্রকল্পের আওতায় দেশের আটটি জেলায় এবং অপর একটি প্রকল্পের আওতায় ১১টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে।

এ চুক্তির মাধ্যমে আরো ৩২টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের লক্ষ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই) করা হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এন এম জিয়াউল আলম বলেন, প্রতিযোগিতার এ যুগে আমাদের তরুণদের টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তি শিক্ষার বিকল্প নেই। আর এ জন্যই আমরা একটি প্রযুক্তিনির্ভর জাতি গড়ে তুলতে চাই। শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার থেকে ট্রেনিং নিয়ে তরুণ-তরুণীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে, অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এখন থেকে আর চাকরির পেছনে ছুটতে হবে না। নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে মানুষকে চাকরি দিবে।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্রেইন চাইল্ড এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে একদিকে যেমন-বেকারত্ব দূর হবে, একইসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ইতিহাস সৃষ্টি হবে।

শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পের পক্ষে প্রকল্প পরিচালক ও উপসচিব জোহরা বেগম জানান, প্রকল্পের আওতায় ৪৮৯ দশমিক ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ৩২ জেলায় প্রাপ্ত জমি সরেজমিনে জরিপ এবং এ বিষয়ে বিশদ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রকল্পের উপযোগিতা নির্ধারণ করা হবে।

জেলাগুলো হলো-গাজীপুর, শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, নরসিংদী, চট্টগ্রাম (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, রাঙামাটি, লক্ষীপুর, রাজশাহী, বগুড়া, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ, জামালপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম।

চুক্তিতে ‘দেশের ৩২ জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই’ প্রকল্পের পক্ষে প্রকল্প পরিচালক জোহরা বেগম এবং সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান শেলটেক প্রাইভেটের পক্ষে ভাইস চেয়ারম্যান এস কে বশির আহমেদ সই করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads