• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

মাত্র ১৩০ টাকায় চাকরি 

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

দেশের ৬৪ জেলায় তিন হাজার শূন্যপদের বিপরীতে নেওয়া হবে ট্রেইনি পুলিশ কনস্টেবল। এজন্য চাকরি প্রার্থীদের খরচ হবে মাত্র ১৩০ টাকা। চলবে না কোনো ঘুষ বাণিজ্য বা তদ্বির। প্রার্থী যোগ্যতাই হবে একমাত্র বিবেচ্য। আবেদনের সময় ৩০ টাকা আর লিখিত পরীক্ষার ১০০ টাকা ফি ছাড়া এই চাকরিতে আর কোনো টাকা দিতে হবে না বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

যেখানে সরকারি চাকরি মানেই সোনার হরিণ। আর সেই সোনার হরিণ ধরতে কখনো ব্যয় করতে হয় লাখ লাখ টাকা। সেখানে মাত্র ১৩০ টাকা ব্যয়ে পুলিশের চাকরি পাওয়ার সুযোগ লুফে নিতে সাড়া পড়েছে যুবকদের মধ্যে। মাত্র ৬ দিনেই লক্ষাধিক আবেদন জমা পড়েছে অনলাইনে।

গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ট্রেইনি পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় বাংলাদেশ পুলিশ। আবেদন করা যাবে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত। তবে নিয়োগ ঘোষণার শুরুতেই সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে, নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো আর্থিক লেনদেনে জড়িত হলে গ্রেপ্তার ও নিয়োগ বাতিল করা হবে। এছাড়া কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি করা হবে বাছাই প্রক্রিয়ার প্রতিটি ক্ষেত্রে। আবেদনের সময় প্রায় এক মাস হলেও ইতোমধ্যে কনস্টেবল পদে চাকরির আবেদনের হিড়িক পড়েছে। গত ৬ দিনে এই পদে আবেদন জমা হয়েছে মোট ১ লাখ ১০ হাজার। পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, এবার কনস্টেবল নিয়োগের আবেদন সম্পূর্ণ অনলাইনে করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত মোট ১ লাখ ১০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ জমা পড়েছে চট্টগ্রামে। ৬ দিনে ৫ হাজার ৫০৪ জন আবেদন করেছেন এই জেলায়। চট্টগ্রাম থেকে ১৩৫ জন পুরুষ ও ২৪ জন নারী কনস্টেবল নিয়োগ দেবে পুলিশ। এছাড়াও টাঙ্গাইল থেকে ৪ হাজার ৩০৮, ময়মনসিংহে ৪ হাজার ১৪২, সিরাজগঞ্জে ৩ হাজার ৯২৯, ঢাকায় ৩ হাজার ৭৭২, বরিশালে ৩ হাজার ৭১৭, রংপুরে ৩ হাজার ৫২৬, কুমিল্লায় ৩ হাজার ২৯০, রাজশাহীতে ৩ হাজার ২৭৫, পাবনায় ৩ হাজার ৫৯ ও নওগাঁয় ২ হাজার ৬৯৪টি আবেদন হয়েছে।

এবার পুলিশের নিয়োগে স্বচ্ছতা আনার বিষয়টি নতুন নীতিমালায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, আগে হাতে লিখিত ও স্থানীয়ভাবে যাচাই বাছাই হওয়ার কারণে হয়ত অনিয়মের সুযোগ থাকত। কিন্তু এখন অনলাইনে প্রাথমিক যাচাই হয়ে যাওয়ায় কেউ সেখানে পছন্দের প্রার্থী আনার সুযোগ পাবেন না। আবার পুরো প্রক্রিয়াটি সদর দপ্তর থেকে মনিটরিং করায় অনিয়মের সুযোগ কম হবে। বিশেষ করে বাছাই করার পর প্রশিক্ষণের আগে আরেকবার সদর দপ্তরের টিম যাচাই করবে। ফলে সেখানেও কোনো অযোগ্য প্রার্থী বা অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকবে। ফলে অনিয়ম এবং দুর্নীতির সুযোগগুলো কমে যাবে।

মূলত-পুলিশের চাকরি পেতে ঘুষ অনিবার্য, প্রচলিত এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসতেই এবার সম্পূর্ণ নতুন নিয়মে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে ট্রেইনি পুলিশ কনস্টেবল। নতুন নিয়মে পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেতে হলে পার করতে হবে সাতটি ধাপ। ধাপগুলো হলো প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং, শারীরিক মাপ ও ফিজিক্যাল এন্ডুরেন্স টেস্ট, লিখিত পরীক্ষা, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা, প্রাথমিক নির্বাচন, পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্তকরণ। এই সাতটি ধাপের কোনো একটিতে অযোগ্য বিবেচিত হলে তিনি আর পুলিশে নিয়োগ পাবেন না। তবে এখনেই শেষ না, নীতিমালা অনুযায়ী নির্বাচিতদের ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে দুই বছরের জন্য শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করতে হবে কনস্টেবল বা এসআই/সার্জেন্টদের। দুই বছর সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পর তাদের চাকরি স্থায়ী হবে।

দুর্নীতির ছায়া যাতে না লাগে সেজন্যই নিয়োগে এই ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে ঘুষ নিয়েও এখন আর কেউ পুলিশে চাকরি দিতে পারবেন না। তদ্বিরেও কাজ হবে না। দুর্নীতি থাকবে না। যোগ্যরাই পুলিশে নিয়োগ পাবেন।

কনস্টেবল পদে অধিক যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থী নির্বাচনের জন্য আসন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় বিভিন্ন ইভেন্টের মাধ্যমে তাদের শারীরিক সহনশীলতা পরীক্ষা (ফিজিক্যাল এন্ডুরেন্স টেস্ট) নেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে নারী ও পুরুষ আবেদনকারীদের জন্য ২০০ মিটার দৌড়, ১০০০ মিটার দৌড়, ১৬০০ মিটার দৌড়, লং জাম্প, হাই জাম্প, পুশ-আপ, রোপ ক্লাইম্বিং এবং ড্র্যাগিং পরীক্ষা।

জানা যায়, কোনো দালাল কিংবা প্রতারকচক্র যাতে চাকুরি প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিতে না পারে, সেজন্য জেলা পুলিশ কঠোর মনিটরিং-এর ব্যবস্থা করবে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দালাল প্রতারক কিংবা অসদুপায় অবলম্বনকারীচক্রের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ পূর্বক কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দালাল, প্রতারক, অসদুপায় অবলম্বনকারীসহ তদ্বিরবাজ কিংবা অন্য যে কেউ যাতে চাকুরি প্রার্থীদের প্রতারিত করতে না পারে সেজন্য জেলা পুলিশের একাধিক টিমসহ গোয়েন্দা টিম সার্বক্ষণিক তথ্য সংগ্রহ ও মনিটরিং-এর দায়িত্বে থাকবেন। প্রতারকদের বিরুদ্ধে তথ্য পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চাকুরি প্রার্থীদের পরিবারের অস্বাভাবিক ব্যাংক লেনদেন, জমি-জমা ও মূল্যবান সম্পদ বিক্রয়, অর্থ লেনদেন ও ধার-কর্জ করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হবে। অনেক অভিভাবক চাকুরি প্রার্থীদের সাথে মেয়েকে বিবাহ বন্ধনের প্রতিশ্রুতিতে যৌতুক হিসেবে টাকা-পয়সা প্রদান করে থাকেন যা প্রচলিত আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। এই বিষয়টিও পুলিশি নজরদারির মধ্যে রাখা হবে। পুলিশ নিয়োগ সংক্রান্তে অবৈধ লেনদেন কিংবা প্রতারকচক্রকে ধরার জন্য জেলা পুলিশের বিশেষ টিমও সাদা পোশাকে জেলার বিভিন্ন স্থানে নজরদারি করবে। পুলিশ নিয়োগ সংক্রান্তে যে কোনো ধরনের অসাধু তৎপরতাকে প্রতিহত করার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা নেওয়া হবে এবং প্রযুক্তিগত মনিটরিং করা হবে। জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত তদ্বিরবাজ/দালালদের গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে এনে তাদের গতিবিধি নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হবে। পরীক্ষার্থীরা ভালোভাবে জেনে সাত ধাপের অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

জানা যায়, এতদিন ধরে বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগ প্রক্রিয়া পুলিশ রেগুলেশন ১৯৪৩ অনুযায়ী করা হতো। কিন্তু গত বছর থেকে সেই নিয়মকানুন আধুনিক করার উদ্যোগ নেয়া হয়। সেখানে ট্রেইনি রিক্রুটিং কনস্টেবল, উপ-পরিদর্শক (এসআই), সার্জেন্ট ও এএসপি নিয়োগের নীতিমালায় কিছু সংশোধন আনা হয়েছে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে নতুন নীতিমালা প্রসঙ্গে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, পুলিশের নিয়োগ স্বচ্ছতার বিকল্প নেই। সামনে পুলিশের যেসব নিয়োগ হবে, সেগুলো অতীতের তুলনায় কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। পুলিশে সদস্যদের নিয়োগগুলো পুলিশ সদর দপ্তর নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করবে। যেমন এতদিন যাবত কনস্টেবল, এসআই ও সার্জেন্ট নিযোগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর নির্ধারিত তারিখে সবাই সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ লাইনে হাজির হয়ে শারীরিক পরীক্ষা দিতেন। সেখানে উত্তীর্ণ হলে তাদের লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হতো। কিন্তু নতুন নীতিমালা অনুসারে, তাদের আগে উচ্চতা, শারীরিক বর্ণনা ও যোগ্যতার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। সেই সময় শুধুমাত্র টেলিটক ব্যবহার করে ৩০ টাকা ফি জমা দিতে হবে। সেখানে যাচাই বাছাই শেষে যারা নিয়োগের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন, তাদেরকেই শুধুমাত্র শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষার জন্য মোবাইল নম্বরে এসএমএস করা হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশে দুই লাখ ১০ হাজারের মতো ফোর্স রয়েছে। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধাপে ধাপে আরো ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগের নির্দেশনা দেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads