• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘটে ভোগান্তিতে ব্যবসায়ীরা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

চট্টগ্রাম বন্দরে ডেলিভারি কার্যক্রম বন্ধ

পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘটে ভোগান্তিতে ব্যবসায়ীরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

দেশব্যাপী চলছে ৭২ ঘণ্টার পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘট। একারণে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে বন্ধ রয়েছে ডেলিভারি কার্যক্রম। ফলে বন্দরের ভেতরে পণ্যজটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরের সল্টঘোলা ক্রসিং, ফকিরহাট ও বন্দরের আশপাশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত পিকেটিং করেছে ধর্মঘট আহ্বানকারীরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পিকেটারদের সরিয়ে দেয়।

গতকাল মঙ্গলবার ১৫ দফা দাবিতে ভোর ৬টা থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়। চলবে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত। এই ধর্মঘট ডেকেছে বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান-ট্রাক, প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশন। ধর্মঘটের ফলে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সড়কে কমে যায় পণ্যবাহী যান চলাচল। এ কারণে দেশের প্রায় ৯২ ভাগ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক চট্টগ্রাম বন্দরে ভোর ৬টা থেকে বন্ধ রয়েছে ডেলিভারি কার্যক্রম। এসময়ের মধ্যে বন্দরে পণ্যবাহী কোনো যান প্রবেশ কিংবা বের হয়নি। এতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে জড়িত ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ধর্মঘটের কারণে বন্দরে পণ্য ডেলিভারি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে স্বাভাবিক রয়েছে বন্দরের বাকি কার্যক্রম। জাহাজে মালামাল লোড-আনলোড স্বাভাবিক রয়েছে। আশাকরি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে বিষয়টি সমাধান হলে ডেলিভারি কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, সিঙ্গাপুর-কলম্বোসহ ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোর অচলাবস্থা সত্ত্বেও পরিকল্পিত পদক্ষেপে এ বছরের মধ্যে আগস্ট মাসেই চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম সবচেয়ে বেশি সচল ছিল। এ মাসে প্রায় অর্ধেকের মতো জাহাজ দিনে দিনে হ্যান্ডলিং করেছে বন্দর। এছাড়াও বাকি জাহাজ এক-দুইদিনের মধ্যে হ্যান্ডলিং করা হয়। দ্রুত ধর্মঘট সমাধান না হলে বন্দরের এমন গতিতে ছন্দপতন হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খুলনায় গতকাল কোনো পণ্য পরিবহনে দূরপাল্লার উদ্দেশে যাত্রা করেনি। নগরীর বার্মাশীল রোড, জিরো পয়েন্ট, নূরনগর ও সাত নাম্বার ঘাট এলাকায় শতাধিক পণ্যবাহী গাড়ি রয়েছে। এ কারণে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে যানজটের সৃষ্টি হয়। চালকরাও অলস সময় কাটাচ্ছেন। পণ্য পরিবহনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ব্যবসায়ীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

খুলনা ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল আলম বিপ্লব জানান, মঙ্গলবার থেকে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এ ধর্মঘট। সরকার মালিক শ্রমিকদের স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবায়ন করছে। তারা এর পুনর্বিবেচনার দাবিও জানিয়েছেন। সরকার যদি এ তিনদিনের মধ্যে না মেনে নেয় তাহলে খুলনা থেকে বৃহত্তর আন্দেলনের ডাক দেওয়া হবে।

নারায়ণগঞ্জে ধর্মঘটের কথা জানে না অনেক পণ্য পরিবহনের চালকরা। গতকাল তাদের নিতাইগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে ট্রাকে পণ্য আনা-নেওয়া করতে দেখা গেছে। ট্রাকচালকরা বলছেন, সকালে এসে শুনেছেন ধর্মঘট। কিন্তু কারা কী কারণে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন, তারা কিছুই জানেন না। তাদের সংগঠনের নেতারা এ বিষয়ে তাদের কিছুই জানায়নি বলে দাবি করেন।

অন্যদিকে বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি এ কে এম আতিকুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দীন গাজী জানান, ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়ে বেনাপোল বন্দর এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেছে বেনাপোল ট্রাক ও ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতি।

বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান ও প্রাইমমুভার পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুকবুল আহমেদ ও মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহমেদ জানান, এর আগে এসব দাবি নিয়ে সরকারপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। তবে সেখান থেকে সাড়া না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে দাবি আদায়ে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে।

১৫ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, মোটরযান মালিকদের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর বা বর্ধিত আয়কর অবিলম্বে বাতিল করতে হবে; ইতোমধ্যে আদায় করা বর্ধিত কর স্ব স্ব মালিককে ফেরত দিতে হবে; পুলিশের ঘুষ বাণিজ্যসহ সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে; গাড়ির কাগজপত্র চেকিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করতে হবে; যেসব চালক ভারী মোটরযান চালাচ্ছে তাদের সহজশর্তে ও সরকারি ফি-র বিনিময়ে অবিলম্বে ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে; সব শ্রেণির মোটরযানে নিয়োজিত সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মতো রেশনিং সুবিধার আওতায় আনতে হবে; চট্টগ্রামে অবস্থিত ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মনোনীত প্রতিনিধি এবং সব ড্রাইভার ও সহকারীকে চট্টগ্রাম বন্দরে হয়রানিমুক্ত প্রবেশের সুবিধার্থে বাৎসরিক নবায়নযোগ্য বায়োমেট্রিক স্মার্টকার্ড দিতে হবে; প্রতি ৫০ কিলোমিটার পরপর পণ্যপরিবহন শ্রমিকদের জন্য দেশের সড়ক-মহাসড়কের নিরাপদ দূরত্বে বিশ্রামাগার ও কার্ভাডভ্যান-ট্রাক-প্রাইমমুভার টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে; সারা দেশের জন্য একই পরিমাণ ওজন নির্ধারণ করে অতিরিক্ত (ওভারলোড) পণ্য পরিবহন বন্ধে লোডিং পয়েন্ট তথা পণ্যপরিবহনের উৎসস্থলে সরকার নির্ধারিত ওজন নিশ্চিত করে পণ্যবাহী গাড়িগুলোতে মালামাল লোড করতে হবে এবং লোড করা গাড়িগুলোকে উৎসস্থলে পণ্যের ওজনস্লিপ দিতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads