• মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪২৮

জাতীয়

গুজব রোধে সাইবার স্কোয়াড

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে গুজব, নাশকতা এবং কেন্দ্র পাহারায় আগে থেকেই পরিকল্পনা করছে ক্ষমতাসীন দলটি। ইতোমধ্যে অনলাইনে গুজব প্রতিরোধে সারা দেশে এক লাখ কর্মীর কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে। এদের সাইবার স্কোয়াড নামেও অভিহিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভোটের কেন্দ্র সুরক্ষা এবং নাশকতা প্রতিরোধে সারা দেশে ৪০ হাজার কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এক লাখ সদস্যের সাইবার স্কোয়াড : আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপকমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর বলেন, আগামী দিনে বাংলাদেশ যত উন্নত হতে থাকবে, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, তত বেশি গুজব, অপপ্রচার ছড়ানোর চেষ্টা করবে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব অপপ্রচার ছড়িয়ে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে। যেহেতু তারা রাজপথে পেরে উঠতে পারবে না, তাই তাদের একমাত্র হাতিয়ার গুজব ও অপপ্রচার। আমাদের আগামী দিনে এই গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে।

সম্প্রতি এক কর্মশালায় তিনি বলেন, আমরা সারা দেশে ইতোমধ্যে ৬৯টি কর্মশালা সম্পন্ন করেছি। আমাদের লক্ষ্য, জেলাপর্যায়ে ১০ হাজার মাস্টার ট্রেনার তৈরি করা। আর এই মাস্টার ট্রেনারদের দ্বারা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এক লাখ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তৈরি করা। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী যেন আগামী দিনে কোনো প্রকার গুজব ও অপপ্রচারের মাধ্যমে আমাদের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত না করতে পারে সেই লক্ষ্যে কাজ করবে এই অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা।

প্রশিক্ষণের কো-অর্ডিনেটর ইঞ্জিনিয়ার তন্ময় আহমেদ বলেন, সারা দেশে আমাদের এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা চলমান রয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদকদের নিয়ে কর্মশালা করা হয়। আগামীতে এই কর্মশালা ওয়ার্ডপর্যায়েও করা হবে। উপকমিটির চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর বলেন, দেশের উন্নয়নকে চলমান রাখতে সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ব্যাপকভাবে কাজ করতে হবে সঠিক তথ্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে।

জানা যায়, আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক গুজব ঠেকাতেই এ ধরনের কর্মশালার মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করা হবে অ্যাক্টিভিস্টদের, যাতে করে গুজব প্রতিরোধে তারা তাৎক্ষণিক পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারেন। 

নাশকতা ও কেন্দ্র পাহারায় ৪০ হাজার কমিটি : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ভোটকেন্দ্রভিত্তিক ‘ইউনিট কমিটি’ গঠন শুরু করেছে। প্রতিটি কমিটিতে সদস্য থাকবেন ন্যূনতম ১৫০ জন। এভাবে সারা দেশে মোট ৪০ হাজার ১৯৯টি কমিটি গঠন করা হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশে যতগুলো ভোটকেন্দ্র রয়েছে, প্রতি কেন্দ্রের জন্য একটি করে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এই কমিটির কাজ হবে নির্দিষ্ট কেন্দ্রের ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চাওয়া। সরকারের উন্নয়নসংবলিত লিফলেট বিতরণ করা। এছাড়া নাশকতা প্রতিরোধ এবং ভোটকেন্দ্র সুরক্ষা করার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করাও এই কমিটির দায়িত্ব।

দলীয় সূত্র জানায়, ইউনিট কমিটি গঠনে মূল ভূমিকা পালন করবে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য ও উপজেলা/থানা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের পরামর্শ গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গঠিত ইউনিট কমিটি জেলা/মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বরাবর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মাধ্যমে সংগঠনের দপ্তরে জমা দিতে হবে। এসব কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড, স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্য, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িতরা যেন কমিটিতে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যদি এসব ইউনিট কমিটি করার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার বিতর্কিত ব্যক্তি অনুপ্রবেশ করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়িত্ব নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। পাশাপাশি দলের ত্যাগী ও দুঃসময়ের নেতাকর্মী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং বিভিন্ন সামাজিক পেশায় প্রতিষ্ঠিত সমাজের গ্রহণযোগ্য প্রগতিশীল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে এসব কমিটি গঠনের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সারা দেশে ইউনিট কমিটি গঠন সম্পন্ন করার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। এলাকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষক, মাতব্বর, পল্লি চিকিৎসক, মুক্তিযোদ্ধা, হাজি, কেন্দ্রের নিকটবর্তী দলীয় নেতাকর্মী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ কমিটিতে স্থান পাবেন। নির্বাচনের আগমুহূর্ত থেকে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও নাশকতা প্রতিরোধে এই কমিটির সদস্যরা পাড়া-মহল্লায় টহল দেবেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করবেন।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক শক্তি জোরদারে ৬০ দিনের মধ্যে সব স্তরে ইউনিট কমিটি গঠন করবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ইউনিট কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার ২০০ ইউনিট কমিটি গঠনের ডেডলাইন দেওয়া হয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত টিমগুলোকে। সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ৬৪টি ওয়ার্ডে ইউনিট কমিটি গঠনের জন্য মহানগরের নেতা ও থানা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে যুক্ত করে ২৬টি টিম গঠন করা হয়েছে। আর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ৭৫টি ওয়ার্ডে কেন্দ্রভিত্তিক ইউনিট কমিটি গঠনের জন্য আসনভিত্তিক আটটি টিম কাজ করছে। কোনো থানা বা ওয়ার্ড নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটি গঠনে ব্যর্থ হলে ঐ থানা বা ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে সেখানে আহব্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৩৫ ধারার ১ উপধারা অনুযায়ী কমপক্ষে ১৫০ জন সদস্য কোনো ইউনিটে না থাকলে সেটি শাখা ইউনিটের মর্যাদাপ্রাপ্ত হবে না।

ভোটকেন্দ্রভিত্তিক ইউনিট কমিটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের নিয়ে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ৩০০ আসনের নির্বাচন পরিচালনা করবে এই কেন্দ্রভিত্তিক ইউনিট কমিটি। নির্বাচনি প্রস্তুতি থেকে শুরু করে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ, দলীয় নির্দেশনা বাস্তবায়নের কাজটিও তারাই করবে।

এদিকে অনলাইনে গুজব প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সক্রিয় রয়েছে। ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজমের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল আলম বলেন, আমরা অনলাইনে সার্বক্ষণিক নজরদারী করি। যাতে করে কেউ গুজব বা ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াতে না পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে অনলাইন কেন্দ্রিক কিছু অপপ্রচার গুজব ছড়ায়। আমরা সে ক্ষেত্রগুলো নিয়েও কাজ করছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads