• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

দুর্ভোগে বিদেশফেরত যাত্রীরা

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ০৪ অক্টোবর ২০২১

করোনা বিপর্যয় এখনো কাটেনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। দিন দিন করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বিমানবন্দরের দুই টার্মিনালের একটি এখনো বন্ধ রাখা হয়েছে। দুই টার্মিনালের একটি বন্ধ রাখার কারণে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন দেশে আসা হাজারো যাত্রী।

এদিকে এক টার্মিনালের ওপর চাপ বাড়ার কারণে অনেক যাত্রী তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র, লাগেজ হারিয়ে ফেলছেন। আবার যাত্রীর ভিড়ে সুযোগ নিচ্ছে অসাধু কিছু ব্যক্তি। অনেকের লাগেজ কেটে জিনিসপত্র বের করে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। তবে শাহজালাল কর্তৃপক্ষ বলছে-পরিস্থিতির উন্নতি ও যাত্রী চাপ বাড়লে সাধারণ যাত্রীদের জন্য টার্মিনাল ১ খুলে দেওয়া হবে।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, করোনাকালীন সময়ে সিভিল এভিয়েশন টিকিট কেটে ক্যানোপিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে একই সময়ে আইসোলেশনে যাওয়া যাত্রীদের জন্য শুধু টার্মিনাল ১ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তের কারণে টার্মিনাল ১ দিয়ে সাধারণ যাত্রীদের বাইর হওয়া নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তবে দেশে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আগের সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে। সরেজিমনে দেখা যায়, টার্মিনাল ১ বন্ধ থাকায় টার্মিনাল ২ এ যাত্রী ও স্বজনদের ভিড়। শত শত লোক টার্মিনাল ২ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া দেশে আসা প্রবাসীদের নিতে গাড়িগুলোও দীর্ঘ সারিতে রয়েছে। এ কারণে অনেক সময় লোকজনের ভিড়ে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা তাদের স্বজনদেরও খুঁজে পেতে সমস্যা হয়। নোয়াখালীর আকরাম হোসেন বলেন, তার ছেলে কাতার থেকে দেশে আসছে। এ কারণে তিনি এসেছেন। লোকজনের ভিড় থাকায় তিনি টার্মিনালে  যেতে পারছেন না। তিনি অভিযোগ করেন, দুটি টার্মিনাল চালু থাকলে লোকজন ভাগ হয়ে যেত। তাতে ভোগান্তি ছাড়াই যাত্রী বের হতে পারত। তিনি আরো বলেন, প্রচণ্ড গরমে লোকজন বাইরে অপেক্ষা করছে অনেকের সমস্যা থাকতে পারে। আগে টিকিট কেটে ভেতরে লোকজন ক্যানোপিতে বসে থাকতে পারতো। বর্তমানে সেটাও নেই।

তিনি বলেন, এখন দেশে তো করোনার অনেকেই টিকা নিয়েছেন। আবার যারা দেশের বাইরে থেকে আসছেন তারাও তো টিকা নিয়েছেন। তাহলে টার্মিনাল ১ খুলতে সমস্যা কোথায়  কিংবা ভেতরে যেতেও  সমস্যা কোথায়।  

এরশাদ নামের আরেক ব্যক্তি জানান, এক টার্মিনালে এত লোকজন দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত নাই। এগুলো সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় নেওয়া উচিৎ। শুধু আমাদের দেশের লোকজনই তো আসছে না বিদেশিরাও তো আসছেন। সেখানে বিমানবন্দরেই যদি তাদের এতো বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাহলে তো আমাদের সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব থাকবে।

তিনি বলেন, রোদের মধ্যে দুই ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। বসারও কোনো জায়গা নেই। বিমানবন্দরের ভোগান্তি কবে কাটবে এমন প্রশ্ন তার।

সৌদি থেকে আসা যাত্রী ইকবাল হোসেন বলেন, ফ্লাইট নামার পর ইমিগ্রেশন শেষে ট্রলির জন্য দৌড়াদৌড়ি করলাম। তিনি বলেন, প্রথমে ১ নম্বর টার্মিনালেই গেছিলাম ফাঁকা দেখে। পরে ওইটা বন্ধ দেখে ২ নম্বর দিয়ে আসলাম।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি আগের চেয়ে এখন অনেক উন্নত হয়েছে। টার্মিনাল ১ খুলে দিলে যে বড় কোনো সমস্যা হবে তাতো নয়। এই যে ভিড়ের মধ্যে বের হওয়া এতেতো ভোগান্তি বাড়ে।

জানা যায়, বর্তমানে ৩২ ফ্লাইটে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ হাজার করে যাত্রী দেশে ফিরছেন। করোনার আগে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজারের বেশি যাত্রী আসত। টার্মিনাল ১ বন্ধের কারণে বর্তমান সময়ে যাত্রীদের ভিড়, হুড়াহুড়ির কারণে অনেক সময় তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র, ব্যাগ ফেলে চলে যাচ্ছেন। আবার অনেক সময় ব্যাগ কেটে মূল্যবান জিনিসপত্র হারানোর ঘটনাও ঘটছে। একগেটে বিপুল সংখ্যক যাত্রীদের চাপ থাকায় পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশও।

বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন বলছে, এক গেট দিয়ে যাত্রী যাতায়াত করায় তাদের ওপর চাপ বেড়েছে। অনেক সময় তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। যাত্রীর অভিভাবকরা ক্যানোপিতে ঢুকে পড়ছে।

সূত্র জানায়,  অনেক সময় অভিভাবকদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের কথাকাটাকাটি পর্যন্ত হচ্ছে। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।

বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক পলাশ বলেন, আমরা পরিস্থিতি মানিয়ে চলার চেষ্টা করছি। যাত্রীর চাপ থাকায় অনেক সময় আমাদের বিব্রত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একসময় ব্যাগ হারানো বা ব্যাগ কাটার ঘটনার জিরো পর্যায়ে চলে আসছিল। কিন্তু ইদানিং এই অভিযোগ আমরা পাচ্ছি। সর্বোপরি আমরা চেষ্টা করছি পরিস্থিতি স্বাভাকি রাখতে। তিনি বলেন, গেট খোলা কিংবা গেট লাগানো বিষয়টি সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের। এটা আমরা দেখিনা।

এ বিষয়ে শাহজালালের বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এএইচএম তৌহিদ-উল-আহসান বলেন, যাত্রীর চাপ বাড়লে ১ নম্বর টার্মিনালও খুলে দেওয়া হবে। আইসোলেশনে যাওয়া যাত্রীর জন্য ওই গেট খোলা হয়। তিনি বলেন, বর্তমানে যাত্রী কম আছে এ কারণে টার্মিনাল ২ চালু রয়েছে। যাত্রী বাড়লে টার্মিনাল ১ খুলে দেওয়া হবে পাশাপাশি কিছু নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে এ কারণে মূলত বন্ধ রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যতদিন করোনা থাকবে ততদিন ক্যানোপিতে দর্শনার্থী প্রবেশ করবে না। সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখার জন্য ক্যানোপিতে দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads