• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

নীরবে এগিয়ে চলছে কালশী ফ্লাইওভারের কাজ

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ১০ অক্টোবর ২০২১

নীরবে এগিয়ে চলছে কালশী ফ্লাইওভারের কাজ। মহামারি করোনাতেও নির্মাণকাজটি থামেনি। একই সাথে চলছে এই প্রকল্পের আওতাধীন সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নের কাজ।

ইসিবি চত্বর থেকে কালশী মোড় পর্যন্ত একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের পাশাপাশি মিরপুর, পল্লবী, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, উত্তরা, মহাখালী ও রামপুরার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করে সড়কে যানবাহনের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও যানজট কমাতে এই প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রায় এক  কিলোমিটার দীর্ঘ এই ফ্লাইওভার নির্মাণের পাশাপাশি সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এই প্রকল্পের মুখ্য উদ্দেশ্য।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারিতে ৬১২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। সেখানে দুই ক্যালেন্ডার বছর মেয়াদে অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা ছিল। পরে পরামর্শকের ড্রইং ও ডিজাইন অনুযায়ী নতুন করে অঙ্গ সংযোজন করা হয়েছে।

শুরুতে প্রকল্পের আওতায় কালশী রাস্তাটি ৩.৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৩১.৫০ মিটার প্রস্থে উন্নয়ন এবং কালশী ইন্টারসেকশনে ৮৪৪ দশমিক ১২ মিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার নির্মাণের সংস্থান ছিল। পরে নকশা পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়া হয়। নতুন নকশা অনুযায়ী ফ্লাইওভারের উত্তর দিকটি আগের পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা সংলগ্ন হয়ে সাগুফতা ক্যান্টিনের পার হয়ে শেষ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে ফ্লাইওভারটির দৈর্ঘ্য বেড়ে ৯৮৮ দশমিক ১২ মিটার করা হয়।

নতুন করে আকার বৃদ্ধির কারণে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। সেইসাথে এ ব্যয় ৪০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ১২ কোটি ১১ লাখ টাকা করা হয়। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন এলাকায় নরম মাাটি, নকশা পরিবর্তনসহ নানান কারণে পূর্বনির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি শেষ করা যায়নি। তবে বর্তমানে খুবই দ্রুতগতিতে চলছে এর কাজ। এমনকি করোনাতেও থেমে ছিল না প্রকল্পের কাজ।

সরকারি অর্থায়নে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যৌথভাবে কাজটি করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ইতোমধ্যে প্রকল্পের আওতাধীন বেশ কিছু জায়গায় ৪ লেনের সড়ক ৬ লেনে উন্নীত করা হয়েছে। বাকি সড়ক সম্প্রসারণের কাজও এগিয়ে চলছে।

জানা যায়, এই প্রকল্পের সড়কে থাকবে ফুটপাত, সাইকেল লেন, বাসবে, যাত্রী ছাউনিসহ অত্যাধুনিক অনেক সুযোগ-সুবিধা। এসবের কাজও এগিয়ে চলছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এই প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কালশী ক্রসিং এমন একটি সরু জায়গা যেখানে চারদিক থেকে চারটি রাস্তা এসে মিলিত হয়েছে। এ ছাড়া মিরপুরও একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে আছে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট, চিড়িয়াখানা, আধুনিক আবাসিক এলাকা, মিরপুর ডিওএইচএস, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক, জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামসহ অনেক কিছু। এখান থেকে হযরত শাহজারাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও খুব কাছে। মিরপুর থেকে বিমানবন্দর হয়ে উত্তরা থেকে টঙ্গী হয়ে উত্তর দিকে যাওয়ার জন্য কালশী হয়ে জিয়া কলোনি রাস্তা দিয়ে আগেই নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। পরে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ওপর দিয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়। এসব রাস্তা ও ফ্লাইওভার নির্মাণের পর মিরপুর এলাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য এসব রাস্তার ব্যবহার অনেক বেড়েছে।

প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার যানবাহন এসব রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। রাস্তার দুই পাশে আবাসিক ও বাণিজ্যক ভবন, হাসপাতাল-ক্লিনিক ও নতুন আবাসিক এলাকা গড়ে উঠছে। যখন এসবের নির্মাণকাজ শেষ হবে তখন এসব এলাকায় যানবাহনের চাপ আরো বাড়বে। এ ছাড়া মিরপুর থেকে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট শহর পূর্বাচলে যেতে কালশী ফ্লাইওভার ও নির্মাণাধীন এসব সড়ক হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

উল্লেখ্য, রাজধানীর যানজট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে একের পর এক ফ্লাইওভার নির্মাণ করে। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, কুড়িল বহুমুখী ফ্লাইওভার, বিমানবন্দর-মিরপুর রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার, মিরপুর-বনানী ফ্লাইওভার এবং বনানী ওভারপাস, বিজয় সরণি-তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল সংযোগ সড়ক ও রেলওয়ে ওভারপাস এবং তেজগাঁও-মগবাজার-মৌচাক-শান্তিগর ফ্লাইওভার প্রকল্প অন্যতম। ঢাকা সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অধীনে এসব ফ্লাইওভার প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এ ছাড়া আমিনবাজার-পলাশী ও শান্তিনগর-ঝিলমিল রুটে দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

এ ছাড়া রাজধানীর সড়ক ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজাতে নানামুখী উদ্যেগ নিয়েছে সরকার। চলতি বছরের শেষ দিকে পরীক্ষামূলক চালু হচ্ছে বাস রুট রেশনালাইজেশন। মূলত মাটির ওপর ও নিচ দিয়ে রেলপথ এবং আধুনিক সড়ক ব্যবস্থাপনা ও নদী-খাল সংস্কারের মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছে আধুনিক এসব যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা। দ্রুতগতিতে কাজ চলছে মেট্রোরেলের কাজ। রাজধানীর চারপাশে গড়ে তোলা হবে সার্কুলার ট্রেন। সবকটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রাজধানীবাসী অসহনীয় যানজট চিরতরে মুক্তি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে আধুনিক এক শহরের রূপ পাবে রাজধানী ঢাকা। তবে এসব মেগা প্রকল্পের পুরোপুরি সুফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরো ১০ বছর। যদিও এর আগেই পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হবে একেকটি প্রকল্প। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads