• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

জাতীয়

অকার্যকর ৫০ লাখ অবৈধ ফোনসেট

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৪ অক্টোবর ২০২১

চোরাইপথে দেশের বাজারে আসা ৫০ লাখেরও বেশি মোবাইল ফোনসেট এখন অকার্যকর। ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার-এনইআইআর সিস্টেম চালুর পর এসব সেট অবৈধ হয়ে যায়। এদিকে আরো ৪ লাখ ফোন সেট বন্ধের প্রক্রিয়ায় আছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব হ্যান্ডসেট ফেরত বা বদলে দিতে কার্যক্রম শুরু করেছে বিটিআরসি।

অন্যদিকে এনইআইআর সিস্টেম চালুর পর বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিক্রেতারা অবৈধ হ্যান্ডসেট আর বিক্রি করছেন না। ফলে বৈধ হ্যান্ডসেটের বিক্রি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বিটিআরসির সূত্রে জানা গেছে, এনইআইআর সিস্টেমটি বাংলাদেশ ছাড়াও তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইনসহ অনেক দেশেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই সিস্টেম চালুর পর শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দেশে আনা ৫৫ হ্যান্ডসেট এখন অকেজো হয়ে গেছে। এসব সেটে সিম প্রবেশ করালেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে এসব ফোনসেট আর বিক্রি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এসব হ্যান্ডসেট চোরাইপথে, লাগেজের মাধ্যমে বা বিভিন্ন কৌশলে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দেশে আনা হয়েছিল।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ৫৫ লাখ অবৈধ মোবাইল ফোন বাজারে  আছে বলে আমরা জেনেছি। এগুলোর কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এখন চোরাইপথে মোবাইল ফোন আসা বন্ধ হয়েছে। আমরা এটাই চেয়েছিলাম। এনইআইআর  সিস্টেম বাস্তবায়ন করার ফলে এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে। সবকিছু একটা নিয়মের মধ্যে থাকতে হবে।

এদিকে নতুন নিয়মের ফলে গত ১ অক্টোবর থেকে অবৈধ মোবাইল ফোন চালু করা হলে তা ‘অবৈধ চিহ্নিত’ হয়ে বন্ধ হওয়ার প্রহর গুণছে। অবৈধ ফোন হলেও তা নেটওয়ার্কে চালু করার সময় ফোনটি ‘অবৈধ’ বলে ফোনসেটে মেসেজ পাঠাচ্ছে বিটিআরসি। অর্থাৎ ফোনটি যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যাবে। এনইআইআর সিস্টেমের অধীনে গত ৯ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১০ লাখ ৯০ হাজার হ্যান্ডসেট নিয়ন্ত্রণে এসেছে বিটিআরসির। যার মধ্যে ৭ লাখ ১০ হাজার বৈধ, বাকি ৩ লাখ ৮০ হাজার হ্যান্ডসেট অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অবৈধ এসব হ্যান্ডসেটে ব্যবহূত সিমে ইতোমধ্যেই বৈধ কাগজের মাধ্যমে নিবন্ধন করার বার্তা পাঠানো হয়েছে বলেও জানা গেছে।

বিটিআরসির কমিশনার ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম শহীদুজ্জামান বলেন, আমরা আইডেন্টিফাই করেছি এ সেটগুলো বৈধ নয়। এগুলো যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিছু কিছু হ্যান্ডসেট র‍্যানডমলি বন্ধ করা শুরু করেছি, যেন গ্রাহকরা সচেতন হন যে, অবৈধ সেট কেনা যাবে না। গ্রাহকরা যেন অসুবিধায় না পড়েন তাই সব সেট একসঙ্গে বন্ধ করছি না। তাদের সময় দিচ্ছি তারা যেন হ্যান্ডসেটটি দোকান থেকে পরিবর্তন করে আনতে পারেন। নতুবা টাকা ফেরত নিয়ে আসতে পারেন। কোনোভাবেই আমরা গ্রাহকের ভোগান্তি চাই না।

এখন এসব ফোনসেট ফের বা বদলে দিতে ব্যবসায়ীদেরও তাগাদা দিচ্ছে বিটিআরসি। তারা এটা না করলে বিটিআরসির কাছে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে ক্রেতাদের।

বিটিআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির কর্মকর্তারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে রাজধানীর কয়েকটি শপিংমলের মোবাইল ফোনের দোকানে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা অনিবন্ধিত ফোন ফেরত নেওয়ার জন্য চিঠি বিতরণ করেছেন। ওই চিঠি হাতে পেয়ে মোবাইল ব্যবসায়ীরা তা মানবে বলে সম্মতিও দিয়েছে বলেও জানিয়েছে বিটিআরসির। অবৈধ মেসেজ যাওয়া ফোন যদি কোনো মোবাইল বিক্রেতা ফেরত না নেন, বদলে না দেন বা টাকা ফেরত না দেন তবে বিটিআরসির কল সেন্টার, ১০০ নম্বরে ফোন দিয়ে জানাতে পারেন। বিটিআরসি এই বিষয়ে গ্রাহককে আইনগত সহায়তা দিচ্ছে।

জানা যায়, গ্রাহকের ভোগান্তি কমাতে এখন চলছে ‘টোকেন বন্ধ’ কার্যক্রম, এই প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন হাজার খানেক সেট লক করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি। এই কার্যক্রমে ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায় বিক্রেতারাও এখন গ্রাহককে দেওয়া ‘অবৈধ’ ফোন ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন।

এদিকে দেশে এনইআইআর সিস্টেম চালুর পর অবৈধ মোবাইল ফোনের বিক্রি বন্ধ হওয়ায় মোবাইলের বিক্রি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন দেশীয় উৎপাদক ও আমদানিকারকরা। নাম না প্রকাশের শর্তে তাদেরই কয়েকজন জানান, মোবাইল ফোনের বিক্রি বেশ বেড়েছে। তবে পরিষ্কার চিত্র পেতে অন্তত ১৫ দিন সময় লাগবে। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চালু করা ফোনগুলোর বিক্রি শেষ হওয়ার পর প্রকৃত বাজার বোঝা যাবে। তারা জানান, সারা বিশ্বে এখন চিপ সংকট চলছে। এ কারণে মোবাইল ফোনের ব্যবসায়ীদের কাছে ফোনের স্টক কম। সংকট কাটতে শুরু করলেই বাজার তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে।     

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন বলেন, বাজারে অবৈধ মোবাইল ফোন আছে। সেগুলো নিবন্ধিত হওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তিনি জানান, দেশে এখন অবৈধ উপায়ে মোবাইল ফোন প্রবেশ করছে না। তবে গত ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনেকে মোবাইল ফোন নিবন্ধন করে রেখেছেন বলে জানতে পেরেছি। সেসব মোবাইল ফোন এখন কিছু কিছু বিক্রি হচ্ছে। এগুলো দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। তিনি আরো জানান, এরইমধ্যে অনেক মোবাইল ফোনসেট চালু করতে গিয়ে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সেসবের মধ্যে কিছু বন্ধ হয়েছে, কিছু বন্ধ হয়নি বলে জানা গেছে।

বিএমপিআইএ জানায়, দেশে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ লাখ মোবাইল ফোন বিক্রি হয়। এরমধ্যে ন্যূনতম ১০ শতাংশ অবৈধ ফোন ধরলেও সেই সংখ্যা হয় ৩ লাখ। বিএমপিআইএ বলছে, দেশে প্রতি মাসে অবৈধ মোবাইল (চোরাইপথে, অবৈধভাবে দেশে আসা) বিক্রির পরিমাণ ৩ থেকে ৫ লাখ। যদিও মোবাইল ফোনের ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশে বিক্রি হওয়া মোট ফোনের মধ্যে ৩০ শতাংশই অবৈধ ফোন।

বিটিআরসির তথ্যানুযায়ী, মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে প্রাপ্ত আইএমইআই-এর সংখ্যা ৪৪ দশমিক ৫৩ কোটি, যা ইতোমধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনইআইআর সিস্টেমে নিবন্ধিত হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ২২ কোটি ২৬ লাখ মোবাইল হ্যান্ডসেট মোবাইল নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads