• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

ফায়ার সার্ভিস বার্ন হাসপাতাল

আটকে আছে চিকিৎসাসেবা

৪ বছরেও নিয়োগ হয়নি জনবল

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ১৬ অক্টোবর ২০২১

শুধু জনবলের অভাবে নির্মাণের ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের জন্য নির্মিত ফায়ার সার্ভিস বার্ন হাসপাতালটি। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হাসপাতালটিতে মূল্যবান সব যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন অব্যবহূত থাকায় এখন নষ্ট হওয়ার পথে।

জানা যায়, হাসপাতালটি নির্মাণের শুরুতেই ছিল গলদ। কারণ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অর্গানোগ্রামে হাসপাতাল পরিচালনার কোনো পদ নেই। তাই জনবল নিয়োগ দিতে পরিবর্তন করতে হবে অর্গানোগ্রাম। কয়েক বছর ধরে চলছে সেই প্রক্রিয়া। এদিকে হাসপাতালটি চালু করতে বেশ কিছু পরিবর্তনের কথা শোনা যাচ্ছে। এখন বিশেষায়িত হাসপাতাল না করে সাধারণ হাসপাতাল করার কথা ভাবা হচ্ছে। ৫০ বেডের এই হাসপাতালটির ১০ শয্যা থাকবে আগুনে পোড়া রোগীদের জন্য। বাকি ৪০ শয্যা থাকবে সাধারণ রোগীদের জন্য। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদেরও দাবি, হাসপাতালটি বিশেষায়িত না করে সাধারণ হাসপাতাল করার।

সূত্র জানায়, ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত ফায়ারম্যানদের জন্য মিরপুর ট্রেনিং সেন্টারে ২০ বেডের একটি বার্ন হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয় ২০০৯ সালে। পরে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০১১-২০১৬ অর্থবছরে হাসপাতালটির নির্মাণ, সরঞ্জাম কেনাকাটা ও নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে চালুর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্সের ভেতর ভবনটি নির্মিত হয়। পাঁচ তলাবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। আর ২০১৭ সালে  গণপূর্ত অধিদপ্তর কাজ শেষ করে ভবনটি বুঝিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষকে। ভবন নির্মাণের পরই হাসপাতালের জন্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম, বার্ন উপকরণ, সার্জিক্যাল উপকরণ, ফার্নিচার কেনাকাটাও শেষ করা হয়। ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বার্ন ট্রিটমেন্ট হাসপাতাল’ শিরোনামের প্রকল্পটির আওতায় এসব কাজ করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ২৪ কোটি টাকা।

চার বছর আগে সব কাজ শেষ হলেও কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি হাসপাতালটি। বর্তমানে হাসপাতালটির নিচতলার পুরোটাই ব্যবহার করা হচ্ছে ফায়ারম্যানদের শ্রেণিকক্ষ হিসেবে। চতুর্থ ও পঞ্চম তলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্সের অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দ্বিতীয় তলায় স্তূপাকারে ফেলে রাখা হয়েছে আলট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজি মেশিন, প্যাথলজি মেশিন, এক্স-রে মেশিনের মতো দামি সব চিকিৎসা যন্ত্রপাতি। তৃতীয় তলায় নির্মিত দুটি অপারেশ থিয়েটারও পড়ে আছে অব্যবহূত অবস্থায়।

এ ছাড়া অন্যন্য অফিস সামগ্রীর মধ্যে আছে-বার্ন ইউনিটের জন্য বার্ন ট্যাংক, বার্ন ট্রলি ও ফিল্টার, মেডিসিন ট্রলি, বেশ কিছু সেক্রেটারিয়েট টেবিল ও চেয়ার, হুইলচেয়ার, ৫টি আইসিইউ ও ৩০টি জেনারেল বেড, ৬টি ফটোকপি ও ফ্যাক্স মেশিন, হুইলচেয়ার, ট্রলি বেড, টেবিলসহ ২০টি কম্পিউটার, খাদ্য সরবরাহের ৬টি ট্রলি, ৫০টি ওয়েটিং চেয়ার, সিরিঞ্জ, হ্যান্ড গ্লাভস, ক্যাথিটার, ওয়াশ কিট, এক্স-রে ফিল্মসহ একটি হাসপাতালে জন্য যা যা প্রয়োজন সবকিছুই আছে হাসপাতালটিতে। দীর্ঘ চার বছর ধরে এসব চিকিৎসা ও অফিস যন্ত্রপাতি পড়ে আছে অব্যবহূত হয়ে। এর মধ্যে অনেকগুলোই নষ্ট হয়ে গেছে। 

জানা যায়, এই প্রকল্পের আওতায় ৩৩০ ধরনের যন্ত্রপাতি ও উপকরণ কেনা হয়েছে। যার মধ্যে অন্তত ৪৬টি যন্ত্রপাতি ও উপকরণের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। ধুলোর আস্তরণে ঢেকে থাকা অনেকগুলোর মেয়াদও শেষের পথে।

জানা যায়, বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবির অর্গানোগ্রামে হাসপাতাল পরিচালনার কাঠামোসহ চিকিৎসক-নার্সসহ বিভিন্ন পদের কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অর্গানোগ্রামে হাসপাতাল পরিচালনার জন্য কোনো পদ নেই। তাই এখন এই হাসপাতাল পরিচালনায় জটিলতা দেখা দিয়েছে।

তবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন জানিয়েছেন, হাসপাতালটি চালু করার জন্য অর্গানোগ্রাম সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগির সমাধান হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এতদিনে হাসপাতালটি চালু হলে ভালো হতো। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেবা পেলে তাদের মনোবলও বাড়ত। কিন্তু সেটা হলো না। তবে শিগগির তা হয়ে যাবে।

এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে ১৫২টি পদের বিপরীতে জনবল চাওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রাজস্ব খাতের জন্য মাত্র ৩৮টি পদের ছাড়পত্র মিলেছে। তবে সেটি এখনো প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় অনুমোদন মেলেনি। মূলত চিকিৎসক-নার্সসহ বিভিন্ন পদের বিপরীতে জনবল না পাওয়ার কারণেই হাসপাতাল চালু যাচ্ছে না।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ফায়ারম্যান জানান, শুধু বার্ন হাসপাতাল না করে এটিকে জেনারেল হাসপাতাল করলে সবচেয়ে ভালো হবে। কারণ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের নিজস্ব কোনো হাসপাতাল নেই। শুধু বার্ন হাসপাতাল না করে একটি জেনারেল হাসপাতাল করা হলে একদিকে যেমন পোড়া ক্ষতের চিকিৎসা পাওয়া যাবে, সেইসাথে অন্যান্য রোগেও চিকিৎসাসেবা পাবেন তারা। এতে তাদের পরিবারও উপকৃত হবে বলে জানান তারা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads