• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

মৌসুমি জ্বর-সর্দি বেড়েছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৭ অক্টোবর ২০২১

বেশ কয়েক দিন ধরে সারা দেশেই বেশ গরম অনুভূত হচ্ছে। গতকাল শনিবার ছিল আশ্বিনের শেষ দিন। আজ রোববার থেকে কার্তিক মাস, অর্থাৎ শরৎ শেষে হেমন্তের শুরু। এ সময় শীতের আগমনি বার্তা পাওয়ার কথা থাকলেও গরমে টেকা দায়। দিনের বেলার তাপ তো থাকছেই, রাতেও কমছে না। এর ফলে জ্বর-সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

চিকিৎসকরা বলছেন, শরতের শেষে এসে গরম বেড়ে যাওয়ায় জ্বর, সর্দি, কাশি বেড়েছে। রাজধানীতে অনেক পরিবারেই ভোগাচ্ছে মৌসুমি জ্বর। ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক শফি আহমেদ বলেন, তার হাসপাতালে এখন চিকিৎসা নেওয়া শিশুদের ৮০ শতাংশই আসছে জ্বর, সর্দি, কাশির সমস্যা নিয়ে। সাধারণ সর্দি-ঠান্ডা থেকে অনেক শিশুর ভাইরাল নিউমোনিয়া, ব্রোঙ্কিওলাইটিস বা শ্বাসকষ্টও হয়ে যায়। যেসব শিশুর অবস্থা গুরুতর, তাদের আমরা ভর্তি নিই। অধিকাংশই আউটডোরে সেবা নিয়ে বাসায় চলে যায়।

চারদিন আগে জ্বর-সর্দির সঙ্গে কাশি শুরু হয় লালবাগের বাসিন্দা আল আমিনের। দুদিন পর মেয়ে ও স্ত্রীও জ্বরে আক্রান্ত হন। করোনাভাইরাস আর ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যে ভয়ই পেয়ে গেলেন তারা। ডাক্তারের পরামর্শে দুই ধরনের রক্ত পরীক্ষা করাতে হল। তবে রিপোর্ট আসলো দুটোই ‘নেগেটিভ’। ডাক্তার বললেন, সিজনাল জ্বর, অনেকেরই হচ্ছে। 

আল আমিন বলেন, হঠাৎ হাঁচি, তারপর নাক দিয়ে পানি পড়া শুরু হল। সাথে হালকা জ্বর, একদিন পর বেড়ে গেল ১০২, ১০৩ ডিগ্রি পর্যন্ত। গায়ে ব্যথাও শুরু হল, শরীর খুব দুর্বল হয়ে গেল। এখন অনেকটা সেরে উঠলেও সর্দি আর দুর্বলতা কাটেনি। তার স্ত্রী লুৎফা খাতুন জানালেন, জ্বরের সঙ্গে আর খুসখুসে কাশি ছিল। তাদের ১২ বছর বয়সি মেয়ের জ্বর ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে থাকলেও কাশি, সর্দি আর ঠান্ডার সমস্যা ছিল। কোভিড ও ডেঙ্গু পরীক্ষার ফলাফল ‘নেগেটিভ’ আসার পর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এখন বেশি বেশি তরল খাবার ও ফলমূল খাচ্ছেন বলে জানালেন তিনি।

গরমে ঘেমে অনেকেরই ঠান্ডা লাগছে, জ্বর আসছে জানিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আমিনুর রহমান বলেন, এর প্রধান কারণ হচ্ছে গরম বেড়ে যাওয়া। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণও বেশি। এ কারণেই এই রোগগুলো হচ্ছে। সেজন্য তিনি শিশুদের গরমে বের না করা, পানি ও তরল খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। এ ছাড়া যাদের সর্দি, কাশি, জ্বর আছে, তাদের কাছ থেকে বাচ্চাদের আলাদা রাখা ও বেশি জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগেও এখন ‘ভাইরাস জ্বরের’ রোগী বেশি জানিয়ে পরিচালক খলিলুর রহমান বলেন, এখন একটা ফ্লু দেখা যাচ্ছে। সেটা ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ভাইরাল ফ্লু। এখন গরমকাল চলছে, কিছুদিন পরই শীত আসবে। এই সময়টাতেই এই ভাইরাস জ্বর বেশি হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এ সময় প্রোটিন, টাটকা শাকসবজি, ফলমূল ও প্রচুর পানি খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন এ চিকিৎসক।

ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক কাজী মো. রশিদ উন নবী জানালেন, তার হাসপাতালেও এখন ‘সিজন্যাল ফ্লু’ নিয়ে রোগী বেশি আসছে। এখন মানুষ কিন্তু অনেক টেস্ট করাচ্ছে। কারণ তাদের জ্বর, সর্দি, কাশির মতো লক্ষণগুলো আছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যখন ১০ থেকে ২০ শতাংশ ছিল, তখন আমাদের এখানে টেস্ট করাতে আসত ১২০-১৩০ জন, কখনো বেশিও হতো। ২০০ জনও হয়েছে। কিন্তু এখন কোভিড সংক্রণের হার দিনে ২ থেকে ৩ শতাংশ। অথচ এখনো ১৩০-৪০ জন টেস্ট করাতে আসছে। অর্থাৎ এদের মধ্যে অনেকেই আসলে মৌসুমি জ্বরের রোগী। যেহেতু মানুষ কোভিডের টেস্ট করছে, বোঝাই যাচ্ছে যে মানুষের জ্বর আছে বলেই আসছে। তিনি বলেন, এখন যে আবহাওয়া আর তাপমাত্রা চলছে, তা ভাইরাসের জন্য বেশি ‘উপযোগী।

করোনাভাইরাস না হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার তাগিদ দিয়ে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ‍ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানলে এই ‘সিজনাল জ্বরও’ এড়ানো যায়। এটাকে আমরা সেলফ লিমিটিং ভাইরাস বলি। এটা কোভিডের মতোই সংক্রামক ভাইরাস। একে অপরের হাঁচি-কাশি থেকেই এটা ছড়ায়। করোনার মতোই ভাইরাল ফিভার এটি, কিন্তু কোভিডের মতো ভয়ংকর নয়। এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থেকেও হতে পারে। রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাসের কারণেও হতে পারে। মৌসুমি এই রোগে আক্রান্ত হলে বাসায় বিশ্রাম নেওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সাবান দিয়ে হাত ধুতে বলছেন তিনি। মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এটি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। এ সময়ে জ্বরের কারণে মুখে রুচি থাকে না। তবে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। কারণ সর্দিতে পানি বের হয়ে যায় শরীর থেকে। পানি কমে গেলেই জ্বরটা আসে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads