• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

৫২ কোটি টাকার ভলভো বাস ৫০ লাখে বিক্রি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ অক্টোবর ২০২১

২০০৪ সালে ৫২ কোটি ব্যয়ে ৫০টি দোতলা সুইডিশ ভলভো বাস নিয়ে আসে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। অযত্ন-অবহেলায় আয়ুষ্কালের আগেই বাসগুলো বিকল হয়ে যায়। পরে ৫২ কোটি টাকায় কেনা ৫০টি বাস মাত্র ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করে সংস্থাটি।

জানা গেছে, সুইডেন থেকে ১৭ বছর আগে কেনা ৫০টি ভলভো বাস ভাঙারি হিসেবে বেঁচে দেওয়া হয়েছে। সুইডিশ প্রতিষ্ঠানটির হিসেবে টানা ১২ বছর সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও বিআরটিসির দাবি ওই বাসগুলো রাস্তায় ৭-৮ বছর চলেছে। একে একে বাসের যন্ত্রাংশগুলো অকেজো হতে শুরু করলে তা মেরামতের উদ্যোগও নিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু দেশে ভলভোর যন্ত্রাংশ দুষ্প্রাপ্য হওয়ায় সেই প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সুইডেন থেকে নিয়ে আসা বাসগুলোর যন্ত্রাংশের কারণে দীর্ঘদিন পরে থাকায় বাসের রং মুছে গেছে, ইঞ্জিন নষ্ট, কোনোটির গিয়ার বক্স নেই, সামনের অংশ ভেঙেছে। কোনোটিতে ধুলাবালু-ময়লা পড়ে ক্ষয় স্থায়ী হয়েছে। নতুন করে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কোরিয়ান ৩২০টি এসি বাস কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বিআরটিসি। ইতোমধ্যে বিআরটিসির প্রস্তাবিত প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান। পাশাপাশি বাসগুলো যাতে দীর্ঘদিন মানুষকে সেবা দিতে পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, মানুষ যাতে সঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারে সেজন্য প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে বাস কেনার বিষয়ে অনেক অভিযোগ শুনতে পাই। কিছুদিন না যেতেই বাসগুলো ভেঙে পড়ে, নষ্ট হয়। জনগণের টাকায় কেনা বাসগুলো যাতে দীর্ঘদিন সেবা দিতে পারে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বাস কেনার আগের প্রকল্পগুলোতে ১০ শতাংশ যন্ত্রাংশের সংস্থান ছিল। তবে নতুন প্রকল্পে ৩০ শতাংশ যন্ত্রাংশের সংস্থান রাখা হয়েছে। পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকেই এ সিদ্ধান্ত। পার্টসের ব্যবস্থা বেশি রাখছি, যাতে বাসগুলো ২০ থেকে ২২ বছর সেবা দিতে পারে।

প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য কোরিয়ায় প্রস্তাব পাঠিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার ও কোরিয়ান সরকারের মধ্যে বিষয়টি আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ইআরডি থেকে প্রস্তাব কোরিয়ান সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। এখন অর্থায়নের বিষয়টি আলোচনা পর্যায়ে আছে।

জানা যায়, প্রকল্পটির প্রাক্কলিত মোট ব্যয় ৬শ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১৬৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও বৈদেশিক ঋণ ৪৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) কোরিয়ান বৈদেশিক ঋণের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃশহরের মধ্যে নির্ভরযোগ্য এবং আরামদায়ক পাবলিক পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করা, দূষণমুক্ত বাস পরিচালনা ও দুর্বল বাসগুলি স্থানান্তর করা।

প্রকল্পটি গ্রহণের যৌক্তিকতা দেখিয়ে বিআরটিসি জানায়, ঢাকা মহানগরীতে উন্নত ও সমন্বিত পরিবহন নেটওয়ার্ক সিস্টেম প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিআরটিসি বিভিন্ন সময় ঢাকা মহানগরীতে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। যাত্রীদের কাছে বিআরটিসি বাসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু বাসস্বল্পতার কারণে বিআরটিসির পক্ষে যাত্রীদের এ চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।

এ পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) মাধ্যমে ইডিসিএফ-এর ঋণ সহায়তায় ৩২০টি সিএনজিচালিত একতলা এসি বাস কেনার পিডিপিপি (প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিআরটিসির আওতায় গুণগত মানসম্পন্ন গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়বে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads