• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

আতঙ্ক অবৈধ বাল্কহেড

চোখের সামনে দেখেও সহসা গতি কমায় না চালকরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০২ নভেম্বর ২০২১

বাল্কহেডের ধাক্কা কিংবা চাপায় নৌকা ডুবছে প্রায় প্রতিদিন। মাঝি সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও বেশিরভাগ সময়ই যাত্রী নিখোঁজ হন। এসব কারণে খেয়া পারাপারে লক্ষাধিক যাত্রী আতঙ্কে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, ওইসব বালুবাহী বাল্কহেড থেকে বখরা নিচ্ছে নৌপুলিশ। সর্বশেষ গতকাল সোমবার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের হুজুরঘাট এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় যাত্রীবাহী নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো দুজন নিখোঁজ রয়েছেন। বুড়িগঙ্গায় পোস্তগোলা থেকে বসিলা ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ থেকে সাত হাজার খেয়া নৌকায় প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ পারাপার হয়। তার মধ্যে বেশিরভাগ শ্রমিক। তারা সদরঘাট, মিটফোর্ড ও বাদামতলী ছাড়াও পুরান ঢাকার বিভিন্ন কলকারখানায় কর্মরত। ভোর ৪টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত নৌকা পারাপারে খুব ভিড় থাকে। সন্ধ্যা ৬টার পর এসব নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানছেন না অবৈধ বাল্কহেড চালক ও মালিকরা।

একাধিক বাল্কহেড চালক জানান, মুন্সীগঞ্জ থেকে গাবতলীর আমিনবাজার পর্যন্ত নৌপুলিশকে চাঁদা দিতে হয়। না দিলে অহেতুক হয়রানি করে পুলিশ। সবচেয়ে বেশি হয়রানি করে সদরঘাট নৌ থানা পুলিশ। যেসব স্পটে নৌপুলিশকে চাঁদা দিতে হয় তা হলো-মুন্সীগঞ্জ নৌপুলিশকে ২০০, বক্তাবলি নৌপুলিশ ২০০, পাগলা ৪০০, পোস্তগোলা ৪০০, সদরঘাট ৮০০, বরিসুর ৪০০ ও বসিলা ৪০০ টাকা। বাংলাদেশ লঞ্চ শ্রমিক ও বাল্কহেড শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নৌযানকেন্দ্রিক সরকারি অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ছাড়াও নৌপুলিশের খোরাক এই বাল্কহেড দিয়ে। আগে চাঁদপুর থেকে সাভার আমিনবাজার পর্যন্ত চাঁদা দিতে হতো সাড়ে তিন হাজার টাকা। নৌপুলিশ গঠন হওয়ার পর প্রতি বাল্কহেডে আপডাউন খরচ ৩৬ হাজার টাকা। তারপরে সন্ধ্যা ৬টার পর চলাচল করলে খরচ আরো বেশি হয়। বুড়িগঙ্গায় খেয়াপারাপার করা মাঝিরা জানান, বুড়িগঙ্গায় হাজার মাঝি ও নৌকা। চোখের সামনে দেখেও সহসা গতি কমায় না বাল্কহেড চালকরা। ওইসব নৌযানের ধাক্কায় প্রতিদিন দুই থেকে চারটি খেয়া নৌকা ডুবে যায়। প্রায়ই কেউ না কেউ মারা যায়। নৌপুলিশ এসব দেখেও না দেখার ভান করে। নৌপুলিশ ওইসব বাল্টহেড থেকে প্রাকাশ্যে টাকা নিচ্ছে। টাকা দিতে দেরি করলে মারধর করছে। তিনজন পার হলে পাবো ১৫ টাকা। দৈনিক নৌকা ভাড়া বাবদ ১৩০ ও ঘাট মালিক ১৫০ টাকা ছাড়াও পাহারা ১৫ থেকে ২০ টাকা দিতে হয়।

জানা গেছে, সরকারি হিসাবে তিন হাজার ৮১১টি বালুবাহী বাল্কহেড নিবন্ধিত থাকলেও বেসরকারি মতে এর সংখ্যা কমপক্ষে ১০ হাজার। নিবন্ধিত সংখ্যার চেয়ে প্রায় তিনগুণ অবৈধ বাল্কহেড চলছে নদীপথে। সন্ধ্যার পর বাল্কহেডগুলো নদীপথের জন্য আরো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। কারণ লাইটবিহীন বাল্কহেডের বেশির ভাগ অংশই পানির নিচে থাকায় ২০ হাত দূর থেকেও তা চোখে পড়ে না।

এ বিষয়ে সদরঘাট নৌ থানার ওসি কাইয়ুম বলেন, সন্ধ্যার পরে কোনো বাল্কহেড বুড়িগঙ্গায় চলাচল করবে না। এ নির্দেশনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। ভোর ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তারপরও যদি ওই সব নৌযান চলাচল করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া সদরঘাট নৌ থানা এরিয়ায় বড় বড় লঞ্চ চলাচল করছে। তাই বাল্কহেড আটকে রাখা যাচ্ছে না। বাল্কহেড আটকে কোনো পুলিশ সদস্য টাকা নিচ্ছে, এমন সত্যতা মিললে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবে ১৪ জন নিহত হয়। এ ঘটনার পর রাতে বালুবাহী নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads