• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

জাতীয়

কর অফিসে ভিড় নেই করদাতাদের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৯ নভেম্বর ২০২১

করোনার কারণে এ বছর আয়কর মেলার আয়োজন করেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মেলার পরিবর্তে এনবিআরের আওতাধীন সারা দেশে ৩১টি কর অঞ্চলে মেলার মতো সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি কর অঞ্চলে জোনভিত্তিক বুথ, ই-টিআইএন ও তথ্যসেবা বুথ রাখা হয়েছে। করদাতাদের সুবিধার্থে সব কর অঞ্চলে নভেম্বর মাসজুড়ে আয়কর মেলার সুবিধা দেওয়া হবে। এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে উপ-কর কমিশনারের কাছ থেকে সময় নিয়ে পরবর্তীতে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন করদাতারা। কিন্তু অফিসগুলোতে আয়করদাতাদের কাঙ্ক্ষিত ভিড় দেখা যায়নি। এ কারণে যারা এখন আয়কর জমা দিতে যাচ্ছেন, অনেকটা নির্বিঘ্নে করসেবা নিতে পারছেন। তাদের উপচে পড়া ভিড়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না।

কর অঞ্চল-১০-এর আওতায় ১ লাখ ৫৪ হাজার টিআইএনধারী করদাতা রয়েছেন। এদের মধ্যে ৫০ শতাংশের কিছু বেশি ব্যক্তি নিয়মিত আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। এ কর অঞ্চলের করদাতাদের বড় অংশ হচ্ছেন দেশের চিকিৎসক।

গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত কর অঞ্চল-১০ ঘুরে দেখা গেছে,  অফিসের সামনে ৯টি রিটার্ন গ্রহণ বুথ রাখা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ রোধে অনেক বুথে গ্লাস লাগানো রয়েছে। এ মিনি করমেলায় ই-টিআইএন সেবা কিংবা আয়কর রিটার্ন ফরম বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। তবে করদাতাদের সরব উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। করসেবা দিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি থাকলেও প্রায় প্রতিটি বুথই ছিল ফাঁকা।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাসের শেষ দিকে করদাতাদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে। কর অফিস প্রাঙ্গণগুলোতে তখন মেলার প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠবে। সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে কর অঞ্চল-১০ এর কমিশনার মো. লুৎফুল আজীম বলেন, করদাতাদের সর্বোচ্চ করসেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা রয়েছে। নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে এখনো করদাতাদের কাঙ্ক্ষিত উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে না। ১৫ তারিখের পরে হয়তো উপস্থিতি বাড়তে পারে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রত্যাশা থাকবে করদাতারা নিজ উদ্যোগে আয়কর দেবেন। আমরা করদাতার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চাই। যাতে কোনো ধরনের দূরত্ব না থাকে। এজন্য এনবিআরকেও ধীরে ধীরে ডিজিটালাইজেশনের দিকে ঝুঁকতে হবে। আমাদের লোকবলসহ অবকাঠামোগত ঘাটতি রয়েছে, এ কারণে অটোমেশনের বিকল্প নেই। একই সঙ্গে কর ফাঁকি দিয়ে পার পাওয়া যায় না- এ ধরনের ম্যাসেজ থাকা দরকার বলেও মনে করেন ওই কমিশনার।

খাদেম হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী এ কর অঞ্চলে আয়কর দিতে এসেছেন। তিনি বলেন, আমি প্রতি বছর করমেলায় আয়কর রিটার্ন দাখিল করে থাকি। যেহেতু মেলা হচ্ছে না, তাই কর অফিসে আসলাম। পরিবেশ ভালো লেগেছে। কোনো রকম জটিলতা ছাড়াই আয়কর দিলাম।

কর অঞ্চল-১০এর মতো একই ধরনের চিত্র পাওয়া গেছে রাজধানীর বিজয় নগরে অবস্থিত কর অঞ্চল-৬ এ। ধানমন্ডি, কলাবাগান ও গ্রিন রোড এলাকার করদাতারা এর আওতাধীন। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারাও তাদের নিয়মিত করদাতা। এ অঞ্চলের আওতায় এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৪৩ হাজার করদাতা ই-টিআইএন নিবন্ধন নিয়েছেন। কর অঞ্চল হিসেবে এখানে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক করদাতা রিটার্ন দাখিল করে থাকেন। গত অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার করদাতার মধ্যে ৯৩ হাজার আয়কর রিটার্ন দাখিল হয়েছে। নির্বিঘ্নে করদাতাদের করসেবা দিতে অফিস সংলগ্ন ১৫টি বুথ রয়েছে। তবে নেই কাঙ্ক্ষিত করদাতাদের উপস্থিতি।

কর অঞ্চল-৬-এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মো. নুরুজ্জামান খান এ বিষয়ে বলেন, করসেবা দিতে আমরা প্রস্তুত। এখনও করদাতাদের উপস্থিতি বাড়েনি। প্রতিদিন ৫০০ শত জনের মতো করদাতা রিটার্ন দাখিল করছেন। আশা করছি মাসের শেষ দিকে করদাতাদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে।

রিটার্ন দাখিল করতে আসা এক করদাতা বলেন, আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় প্রতি বছর সময়মতো আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। প্রতিবছর মেলায় রিটার্ন দিয়ে থাকি। এ বছর কর অফিসে জমা দিলাম। অভিজ্ঞতা ভালোই। মেলার মতো জনসমাগম না হলেও অফিসগুলোতে মেলার পরিবেশ রয়েছে। তবে করমেলায় সবকিছু এক ছাদের নিচে হয়, সেই পরিবেশ এখানে নেই। সেটা মিস করেছি আজ।

২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর করমেলা আয়োজন করে আসছে এনবিআর। তবে গত বছরও করোনা বিবেচনায় নিয়ে মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। এনবিআরের আওতাধীন সারা দেশে ৩১টি কর অঞ্চল রয়েছে, যদিও আয়কর মেলার আদলে কর অফিসগুলোতে করদাতারা পাচ্ছেন ‘ওয়ানস্টপ’ সেবা।

এ ছাড়া অনলাইনে বিকাশ, রকেট, নগদ, ইউক্যাশ ব্যবহার করে ঘরে বসেই দেওয়ার সুবিধা রয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বর জাতীয় আয়কর দিবস ২০১১ উদযাপন করা হবে। সে সময়ে মোট ৬৬৬ জন করদাতাকে সেরা করদাতাদের সম্মাননাও প্রদান করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads