• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

জাতীয়

ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে বাড়ছে মৃত্যু

  • রেজাউল করিম হীরা
  • প্রকাশিত ১৪ জানুয়ারি ২০২২

দেশে প্রতিদিনই করোনা শনাক্ত রোগী এবং শনাক্তের হার আগের দিনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নতুন বছরের প্রথম ১২ দিনেই সংক্রমণের হার গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১২ শতাংশের ওপরে। শনাক্ত হয়েছেন ১৬ হাজারেরও বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সঠিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। সেই পরিস্থিতি থেকে ফিরে আসা অনেক কঠিন হবে।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত একদিনে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৩৫৯ জন। শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ০৩ শতাংশে। এ সময়ে মারা গেছেন  ১২ জন। যা প্রায় তিন মাসে সর্বোচ্চ। আগের দিন শনাক্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯১৬ জন। আর শনাক্তের হার ১১ ছিল দশমিক ৬৮ শতাংশ।  এ নিয়ে গত টানা সাত দিন পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্ত ৫ শতাংশের বেশি।

অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, পুরো ডিসেম্বরে শনাক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৫৮৮ জন, আর জানুয়ারির প্রথম ১২ দিনেই ১৬ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ওমিক্রনের পাশাপাশি ডেলটা ভাইরাসও কিন্তু অবস্থান করছে। সংক্রমণ হঠাৎ করে মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে ধরে নিতে হবে নতুন ভ্যারিয়েন্টেই সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।

করোনায় যদি এভাবে রোগী বাড়তে থাকে তাহলে সেটি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। হাসপাতালের বেড সংকট, চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ফলে ফের দেশের ডেল্টা পরিস্থিতির মতো অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়লে সেখান থেকে ফের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা কঠিন হবে। তাই করোনার নমুনা পরীক্ষা যেন মানুষ ভোগান্তি ছাড়াই করতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। নয়তো সামনে চরম বিপর্যয়।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, প্রতিদিন রোগী লাফিয়ে লাফিয়ে রোগী বাড়ছে, বাড়ছে শনাক্তের হার। এখনই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া গেলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।

তিনি বলেন, বর্তমানে উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে রয়েছি বলেই জাতীয় কমিটিসহ সবাই যে পরামর্শ দিচ্ছে, সরকার নিশ্চয়ই সে অনুযায়ী কাজ করবে। কিন্তু ওমিক্রন ঠেকানো যাবে না, এর কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঠেকানো খুব কঠিন। ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রনের সংক্রমণ ক্ষমতা তিন থেকে পাঁচগুণ বেশি। সেই সঙ্গে করোনায় লক্ষণ উপসর্গ বিহীনও থাকেন অনেকে, যা কি না বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করে।

ওমিক্রন দ্রুত ও অধিকসংক্রমণশীল হওয়ায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ পড়তে বাধ্য বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তর গঠিত পাবলিক হেলথ কমিটির সদস্য ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. আবু জামিল ফয়সাল। ওমিক্রন কতটা ছড়াচ্ছে, সেটা দেশের প্রতিদিনের সরকারি হিসাব থেকেই টের পাওয়া যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদিও আমি বিশ্বাস করি এর বাইরেও অসংখ্য রোগী রয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে করোনা রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর হার কম। কিন্তু আশঙ্কার কথা হচ্ছে, যেকোনো সময়ে এটা বেড়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হার্ট ডিজিস ও ক্যানসারের মতো যারা জটিল রোগে আক্রান্ত, তারাও কিন্তু এতে সংক্রমিত হবেন। আর তাদের ক্ষেত্রে এটা মারাত্মক হবে। তখন তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগবে, তাদের ছাড়াও হাসপাতালে যাবেন অসংখ্য মানুষ। সে ক্ষেত্রে হাসপাতালের ওপর আবার চাপ বাড়বে, ডেল্টার সময়ের মতো আইসিইউর চাহিদা বাড়বে।

করোনা সংক্রমণের এ ঊর্ধ্বগতিতে সরকার গত সোমবার ১১ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে তা কার্যকর শুরু হয়েছে। ১১ দফার মধ্যে অন্যতম হলো, ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরা এবং রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে টিকার সনদ দেখানো। সেই সঙ্গে উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়। কিন্তু বিধিনিষেধের প্রথম দিন কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায় নি। সবাই যার যার খেয়াল খুশি মতো চলা ফেরা করছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads