• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

দুর্ঘটনায় দায়ী মানব-ত্রুটি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৪ জানুয়ারি ২০২২

ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যুর ঘটনার জন্য পথচারীদের অসচেতনতাকেই দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে রেলের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ঘটা রেল দুর্ঘটনার ৭২ শতাংশ মানব-ত্রুটিজনিত।

সাম্প্রতিক সময়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর ঘটনা পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অধিকাংশই ঘটেছে রেল লাইন পারাপারের সময় অসচেতনতার কারণে। অবহেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে লোকের মৃত্যুও বাড়ছে। ট্রেন আসার সময়েই রেল লাইন পারাপার হতে চায় মানুষ। সামান্য অবহেলার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে হয়। ইয়ারফোন কানে লাগিয়ে, মোবাইলে কথা বলা অবস্থায় এবং বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়েও প্রাণ দিতে হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ ট্রেন দুর্ঘটনার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে ঘটা রেল দুর্ঘটনার ৭২ শতাংশ মানব-ত্রুটিজনিত, ২৩ শতাংশ যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত এবং বাকি ৫ ভাগ অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং এবং যানবাহন চালক ও পথচারীদের অসতর্কতায় রেলক্রসিং পারাপারের কারণে ঘটে। মানব-ত্রুটিসমূহের মধ্যে আছে লোকোমাস্টার, স্টেশনমাস্টার ও পরিচালকের ত্রুটি বা অবহেলা এবং বেপরোয়াভাবে ট্রেন চালানো। যান্ত্রিক ত্রুটি ঘটে লোকোমোটিভের ত্রুট, ত্রুটিমুক্ত ট্র্যাক ও সিগন্যাল পদ্ধতির কারণে। ২০০৮-২০১৯ সালে লেভেল ক্রসিংগুলোয় ৩১০টি দুর্ঘটনায় ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রেলের আরকেটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত ছয় বছরে রেলে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৭৫ জন। এর মধ্যে ১৪৫ জনই প্রাণ হারিয়েছেন লেভেল ক্রসিংয়ে। গত বছর মারা গেছেন ৩৪ জন। এর মধ্যে ৩৩ জনেরই মৃত্যু হয়েছে লেভেল ক্রসিংয়ে।

রেলপথে মুখোমুখি সংঘর্ষ, পেছন থেকে ট্রেনের ধাক্কা, ট্রেন থেকে কোচ আলাদা হয়ে যাওয়া, ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা, সংকেত অমান্য ও লাইনচ্যুতির খবর হরহামেশাই চোখে পড়ে। এর মধ্যে পথচারীদের অসচেতনতার কারণে ট্রেনের ধাক্কায় অনেকের প্রাণহানি হয়ে থাকে। রেলওয়ের তথ্য অনুসারে, সারা দেশে মোট লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৫৬১টি। এর মধ্যে অনুমোদন নেই ১ হাজার ৩২১টির। এসব ক্রসিংয়ের বেশিরভাগই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সড়কে। আরও আছে পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) সড়কে। সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশের ৮২ শতাংশ লেভেল ক্রসিংই রয়েছে অরক্ষিত অবস্থায়।

বাংলাদেশ রেলওয়ের বৈধ-অবৈধ মিলে শতকরা ৮০ শতাংশ লেভেল ক্রসিং একেবারে অরক্ষিত। অনেক স্থানে লোকবলও নেই বললেই চলে। স্থানীয় জনগণই ভরসা। এমনকি রাজধানীর চারপাশের রেলপথের দুই পাশে হাটবাজার বসা লেভেল ক্রসিংগুলো প্রায় অরক্ষিত ও অনিরাপদ। যে কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনাগুলোর প্রধান কারণ অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং, জরাজীর্ণ রেললাইন, পর্যাপ্ত সিগন্যালের অভাব, ঘন কুয়াশা ইত্যাদি। এর পাশাপাশি প্রধানত দায়ী বলে মনে করা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়মিত-অনিয়মিত কর্মীদের গাফিলতি, দায়িত্বহীনতা, উদাসীনতা, সর্বোপরি ঘুষ-দুর্নীতি অনিয়ম-অব্যবস্থা ইত্যাদি। যেসব কারণে প্রায়ই ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেন আসার মাত্র কয়েক মিনিট আগেই দুপাশে ব্যারিকেড ফেলে যানবাহনের গতিরোধ করা হয়। কিন্তু তখনো অনেক গাড়ি ব্যারিকেড ফেলার আগে তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পার হতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে।

রেলওয়ের অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং যেন মৃত্যুফাঁদ। সারা দেশে রেলপথে মোট ক্রসিং আছে ২ হাজার ৮৫৬টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৬১টিরই অনুমোদন নেই। আবার ১ হাজার ৪৯৫টি বৈধ ক্রসিংয়ের মধ্যে ৬৩২টি ক্রসিংয়ের গেটম্যান নেই। রেল দুর্ঘটনায় যত প্রাণহানি হয়, তার ৮৯ শতাংশই অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে ঘটে। রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংগুলোর (বৈধ-অবৈধ) প্রায় ৮৪ শতাংশই অরক্ষিত। আর এসব ক্রসিংয়ে প্রায়ই ঝরছে সাধারণ মানুষের প্রাণ।

তবে দুর্ঘটনা ঘটলেই ঢাক ঢোল পিটিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তদন্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশ আলোর মুখ দেখে না। এ ছাড়াও গত ৬ মাসে ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথের আখাউড়া-সিলেট অংশে অন্তত ১৫ বার ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads