• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
পাটে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে দেশ

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

পাটে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে দেশ

  • প্রকাশিত ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২

রতন বালো

উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কাজ করছে সরকার। এই প্রকল্পটি ৪৬টি জেলার ২৩০টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। পাঁচবছর মেয়াদি এই প্রকল্পটি যৌথভাবে তৈরি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রতিবছর প্রত্যক্ষভাবে ১ লাখ ৫৩ হাজার পাটচাষি ও পরোক্ষভাবে ৬ লাখ ১২ হাজার কৃষক ও পরিবারের সদস্য উপকৃত হবে।

গত পাট মৌসুম থেকে রোডম্যাপ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। যা আগামী ২০২৫ সালে কাজ শেষ হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মানসম্মত উচ্চফলনশীল পাট ও পাটবীজ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। নতুন এই প্রযুক্তির বীজ থেকে উৎপাদিত পাট ফলন ভালো হবে বলে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষিতত্ব বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানান। তারা বলেছেন, পাট থেকে পলিথিনের বিকল্প পরিবেশবান্ধব সোনালী ব্যাগ, পাটপাতা হতে স্বাস্থ্যসম্মত জৈব পানীয়, জুট-জিও টেক্সটাইল, সয়েল সেভারসহ ২৮২ ধরণের বহুমুখী পাটপণ্য উদ্ভাবনে স্থানীয় ও বিশ্ববাজারে পাটের বহুমুখী ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে।

রোডম্যাপ সফল করতে গত ৩০ জানুয়ারি দুপুরে সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর অফিস কক্ষে বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ), বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) ও বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। তিনি সভায় উপস্থিত বিজেএ, বিজেএমএ ও জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সহযোগিতা কামনা করেন। গতকাল মঙ্গলবার বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈকত চন্দ্র হালদার এতথ্য জানান।

এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত পাটবীজ উৎপাদনে স্বনির্ভর হবে। প্রয়োজনীয় পাটবীজ সংগ্রহে আমদানি নির্ভরতা আর থাকবে না। এ পাট মৌসুম থেকে রোডম্যাপ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ধাপে ধাপে তা আগামী পাঁচবছরে শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে। তবে বর্তমান সরকারের আগামী তিন বছরের শতভাগ আমদানিনির্ভরতা কমানো সম্ভব হবে। এছাড়াও  বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় উচ্চফলনশীল পাট বীজ উৎপাদনে সফল অর্জন এবং মানসম্মত পাট উৎপাদনে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধকরণ ও সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-এর আওতায় ‘উন্নত প্রযুক্তি নির্ভরপাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প চলমান রয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।

লাইসেন্স বিহীন অসাধু ব্যবসায়ীগণকে কাঁচাপাট ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি দেশে কাঁচাপাটের সংকট তৈরির কারণে পাটকলগুলোর উৎপাদন ঝুঁকিতে পড়েছে। এ অবস্থায় পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয়ের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য কাঁচাপাটের সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এজন্য লাইসেন্সবিহীন অসাধু ব্যবসায়ীগণকে কাঁচাপাট ক্রয়-বিক্রয় ও মজুত হতে বিরত রাখা, ভিজাপাট ক্রয়-বিক্রয় রোধ করা, বাজারে কাঁচাপাটের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাট অধিদপ্তরকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।

তিনি আরো বলেন, কাঁচাপাটের ডিলার বা আড়তদাররা ১ হাজার মণের বেশি কাঁচাপাট এক মাসের বেশিসময় ধরে মজুত করতে পারবে না। এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাট অধিদপ্তরকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে পাটের ভূমিকা ঐতিহাসিক। পাট হতে পলিথিনের বিকল্প পরিবেশবান্ধব সোনালী ব্যাগ, পাটপাতা হতে স্বাস্থ্যসম্মত  জৈব পানীয়, জুট-জিও টেক্সটাইল, সয়েল সেভারসহ ২৮২ ধরণের বহুমুখী পাটপণ্য উদ্ভাবনের ফলে স্থানীয় ও বিশ্ববাজারে পাটের বহুমুখী ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ এর প্রয়োগ ও শতভাগ বাস্তবায়নের ফলে পাটপণ্যের ব্যবহার ও চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বেসরকারি পর্যায়ে ছোট ও বড় আকারের সর্বমোট ২৫৯টি পাটকল চালু রয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদিত ৭৫ দশমিক ৬০ লাখ বেল কাঁচাপাটের মধ্যে ৮ দশমিক ৬৪ লাল বেল কাঁচাপাট রপ্তানি করা হয়েছে। একই সময়ে ৭৫২ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যমানের ৭ দশমিক ৯০ লাখ মেট্রিক টন পাটপণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। পৃথিবীজুড়ে পাটের কদর ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাটচাষিরা ও কাঁচাপাটের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন। চলতি পাট মৌসুমে কাঁচা পাটের গড়দর ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায়  শতকরা ৫০ বাগ বেশি। এর ফলে পাটচাষীরা ভবিষ্যতে অধিক পরিমাণে পাট চাষে আগ্রহী হবে। এতে করে দেশের অর্থনীতিতে পাটখাতের অবদান আরো সুসংহত হবে।

এদিকে এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৭৫ হাজার পাটবীজ উৎপাদনকারী চাষিকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। প্রকল্পের অধীন তালিকাভুক্ত সকল পাটচাষিকে বিনামূল্যে উফশী জাতের পাটবীজ সার (ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপিও) এবং বালাইনাশকসহ কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদান করা হবে। প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা কমিটি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া কমিটিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও রয়েছে। সুতরাং প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক পাটচাষিদের যেসব প্রণোদনা বা সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে তা জেলা ও উপজেলা কমিটির মাধ্যমে তদারকি ও সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করতে হবে বলে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট এর গবেষকদের অভিমত।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৬৯৮ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। রপ্তানি আয়ে পাটখাত চামড়াকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads