• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
বদলে যাচ্ছে ঢাকার চিত্র

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

বদলে যাচ্ছে ঢাকার চিত্র

  • প্রকাশিত ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২

রতন বালো

যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকার দিন শেষ হতে চলেছে। অস্বস্তি, ক্লান্তি আর দুর্ভোগের দিনও থাকছে না। রাজধানীর সড়কে থেমে থাকা যানবাহনের দীর্ঘ সারিও চোখে পড়বে না। এমনকি মহাসড়কে যে যানজটের চিত্র দেখে হাঁপিয়ে উঠতে হয়, তাও একদিন চলে যাবে কল্পনার জগতে। জাদুঘরের দেওয়ালে শোভা পাবে যানজটের চিত্র। এ চিত্র বাস্তবায়নে রূপ পেতে যাচ্ছে সরকারের চার মেগা প্রকল্পে। চলতি বছরেই শেষ হচ্ছে এই প্রকল্পগুলো।

মেগা প্রকল্পগুলো হচ্ছে, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও কর্ণফুলী টানেল। এর মধ্যে আগামী জুনে উদ্বোধন হবে স্বপ্নের পদ্মা বহুমুখী সেতু। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হবে অক্টোবরে। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে চালু হবে ঢাকাবাসীর কাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ফলে যানজটের চিত্রও পাল্টে যাবে বলে মনে করছে সরকার।

ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলবে মেট্রোরেল। ২৪ সেট ট্রেনে ৬টি করে বগি থাকবে। ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২৪টি ট্রেনে ঘণ্টায় আপ-ডাউন রুটে ৬০ হাজার যাত্রী নেওয়ায় সক্ষম হবে বলে দাবি করেছেন কর্মকর্তারা। এছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত অংশটি চালু করা হবে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে ৭০ শতাংশের বেশি।

বিশেষ করে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে বদলাবে দক্ষিণাঞ্চল। ইতোমধ্যে পদ্মা পারে গড়ে উঠছে বিভিন্ন স্থাপনা। যে চরাঞ্চল ছিল জনবিচ্ছিন্ন, ছিল না বিদ্যুৎ, সেই জনবিচ্ছিন্ন চলাঞ্চল শিবচরসহ গোটা মাদারীপুর জুড়ে এখন সাজ সাজ রব। এখানে গড়ে উঠছে নানা প্রকল্প।

যানজট দূর করা লক্ষ্যে সরকারের নেওয়া মেগা প্রকল্প বিষয়ে সম্প্রতি সচিবালয়ে সমসাময়িক ইস্যুতে ব্রিফিংকালে চার মেগা প্রকল্প চালুর এসব তথ্য জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি জানিয়েছেন, সরকারের যে দায়িত্বটি পালন করছি, সেখানে চারটি মেগা প্রজেক্ট আছে, সেগুলো দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। মেট্রো রেল, পদ্মা সেতু, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও কর্ণফুলী টানেলের কাজ এগিয়ে চলছে, চালু করার গতি পেয়েছে।

তিনি জানান, সবই ২০২২ সালে উদ্বোধন করতে পারব। আগামী জুনে স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্প চালু করব। এ চার প্রকল্পের মধ্যে মেট্রো রেল ডিসেম্বরে চালু করা হবে। ইতোমধ্যে দিয়াবাড়ি থেকে উত্তরা, উত্তরা থেকে মিরপুর-১০ এবং মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্টোরেল পরীক্ষামূলক চালু করা হয়েছে। মেট্টোরেল লাইন দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যুক্ত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী আরো বলেন, মেট্রো রেল চালুর যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তা যথাসময়ে অর্জন করা সম্ভব হবে। সরকারের অন্যতম মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু চালুর লক্ষ্য এরই মধ্যে কয়েক দফা পরিবর্তন করা হয়েছে। সর্বশেষ চালুর লক্ষ্য ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে শেষ হয়েছে সেতুর স্প্যান বসানোর কাজ। এখন চলছে স্প্যানের ভেতরে রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ। একইভাবে স্প্যানের ওপরে বসানো হচ্ছে রোডওয়ে স্ল্যাব। স্প্যানগুলোর ভেতরে রেলওয়ে স্ল্যাব বসবে ২ হাজার ৯৫৯টি।

সেতু বিভাগ জানিয়েছে, ১ হাজার ৯৪২টি রেলওয়ে স্ল্যাব এরই মধ্যে বসে গেছে। অন্যদিকে ওপরে বসানো হবে সব মিলিয়ে ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব, যার মধ্যে বসানো সম্পন্ন হয়েছে ১ হাজার ৩৩৩টি। রোডওয়ে স্ল্যাবের ওপর গড়ে তোলা হবে চার লেনের সড়ক। এখন পর্যন্ত মূল সেতুর সার্বিক কাজ ৯১ শতাংশের বেশি শেষ হওয়ার তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার উত্তরা-মতিঝিল মেট্রো রেলপথ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যেতে কাজ করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। মতিঝিল-কমলাপুর অংশের দৈর্ঘ ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বিমানবন্দর থেকে বনানী হয়ে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত অংশটি চালু করা হবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ পায় ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড।

এদিকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ চার প্রকল্পকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি ৯ লাখ টাকার ব্যয় সংবলিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়। সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) সাশ্রয় হবে প্রায় ২ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাশ্রয় হচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১ হাজার ১ কোটি টাকা। এছাড়া মেট্রোরেল প্রকল্পে ৮শ, কর্ণফুলী টানেলে ৩শ ১৭ ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে এডিপি সাশ্রয় হবে ১শ ৬৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরেই পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলী টানেল নির্মাণকাজ শেষ হবে। এক্ষেত্রে সেতু বিভাগের দুটি প্রকল্পের সাশ্রয় হওয়া টাকা অন্য প্রকল্পে স্থানান্তর হতে পারে। এছাড়া অন্য কোনো মন্ত্রণালয় এডিপির টাকা সাশ্রয় করলে তা-ও অন্য মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তর করা হবে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কৃষি, শিল্প ও সমন্বয় উইং) মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু-কর্ণফুলী টানেলসহ নানা প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ সাশ্রয় হচ্ছে। এসব বরাদ্দের অর্থ অসম্পন্ন অন্য প্রকল্পে স্থানান্তর করা হয়। কারণ এক মন্ত্রণালয়-বিভাগের একাধিক প্রকল্প থাকে। যেমন- সেতু বিভাগে শুধু পদ্মা সেতু নয়, আরো একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। সুতরাং, পদ্মা সেতুর বরাদ্দ সাশ্রয়ের টাকা অন্য প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads