• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

মেট্রোরেলের বিনিময়ে উপশহর চায় চীন

  • চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • প্রকাশিত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২

চট্টগ্রামে নিজ খরচে মেট্রোরেল নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন। বিনিময়ে সাগর থেকে উদ্ধার করা জমিতে উপশহর বানিয়ে সেখান থেকে লভ্যাংশ নিতে চায় তারা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ’র কাছে এমন একটি প্রস্তাব দিয়েছে দেশটির চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিডিএ কর্মকর্তারা।

নগরীতে তিন থেকে চারটি রুটে মেট্রোরেল করে এই নেটওয়ার্কে মিরসরাই ইকোনমিক জোন, বিভিন্ন শিল্প এলাকা ও নগরীর উপকণ্ঠের গ্রোথ সেন্টারগুলোকে সংযুক্ত করার দাবি রয়েছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের।

অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামে এমআরটি দরকার। একেবারে কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত। গত কয়েক বছর ধরেই আমি বলছি এমআরটি করা হোক। এটা কাদের দিয়ে করা হবে তা অবশ্যই ভালো করে বিবেচনা করা উচিত।

তবে টাউনশিপ নির্মাণে চীনের যে প্রস্তাব, সে বিষয়ে অনেক কিছু বিচার বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন অধ্যাপক মইনুল। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে চায়নিজ সিটি করে শ্রীলঙ্কাকে বিপদে ফেলে দিয়েছে তারা। অতএব ভালো করে যাচাই না করে প্রস্তাব গ্রহণ করা উচিত নয়।

প্রস্তাবটি দেখতে হয়তো খুব ভালো লাগছে। কিন্তু ভালো করে সম্ভাব্যতা যাচাই না করে এ ধরনের প্রকল্পে জড়িয়ে গেলে পরবর্তীকালে সমস্যা হতে পারে। এটা খুবই প্রাথমিক পর্যায়। এ বিষয়ে এখনই চট করে মন্তব্য করতে চাই না।

সিডিএ কর্মকর্তারা বলছেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইও নিজেদের খরচে করার প্রস্তাব দিয়েছে চীনা কোম্পানিগুলো। বিষয়গুলো তারা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারকে জানাবেন, সিদ্ধান্ত যা নেওয়ার সরকারই নেবে।

সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আমাদের বে টার্মিনালের যে নির্ধারিত স্থান, তার পর থেকে মিরসরাই পর্যন্ত সাগরের মধ্যে একটি চরের মত আছে। ওই জায়গায় সাগরের জমি রিক্লেইম (ভূমি উদ্ধার) করে তারা টাউনশিপ (উপশহর) করতে চায়।

বিনিময়ে তারা মেট্রোরেল পুরোটা তাদের অর্থায়নে করার প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের কোনো টাকা লাগবে না।

চীনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সাগরের জমি উদ্ধার করে যে ‘স্মার্ট সিটি’ তারা গড়তে চায়, তার দায়িত্ব তাদের হাতেই থাকবে। সেখানে প্লট বিক্রির টাকা তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভাগাভাগি করবে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং এর পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে প্রশ্ন করলে হাসান বিন শামস বলেন, বে টার্মিনালের পর থেকে মিরসরাই পর্যন্ত অংশের সাগরের জমি উদ্ধারের কথা রয়েছে প্রস্তাবে। তবে মাঝে জাহাজভাঙা শিল্পসহ যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলো বাদ যাবে।

এটা সাগরের ডেড এন্ড। এখানে সাগরের জমি উদ্ধার করলে কোনো ক্ষতির ঝুঁকি নেই। দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সাগরের ভূমি রিক্লেইম করে এরকম টাউনশিপ করা হয়েছে। এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞতাও আছে বলে তারা আমাদের জানিয়েছে। বলেছে, এমন প্রযুক্তি তাদের কাছে আছে, যাতে ওই অংশে সাগরের পানি স্বচ্ছ দেখা যাবে।

কর্ণফুলী নদীতে টানেল এবং পদ্মা সেতুর কাজও চীনা প্রতিষ্ঠান ‘অত্যন্ত দ্রুতগতিতে’ করছে বলে মন্তব্য করেন সিডিএ এর এই কর্মকর্তা। 

গত ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের উপস্থিতি এ বিষয়ে এক বৈঠকে কোইকা প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ওই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার মধ্যেই চীনের পক্ষ থেকে প্রস্তাবের বিষয়টি সামনে এল।

প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, এখন সরকার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে কোন প্রস্তাব নিয়ে এগোবে। তবে চীনের প্রস্তাবে মেট্রোরেল ও টাউনশিপ দুটোই তারা নিজ খরচে করবে। শুধু টাউনশিপে তারা প্রফিট শেয়ার করতে চায়। সেটা কত শতাংশ তা প্রস্তাবে নির্দিষ্ট করেনি।

মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রস্তাব নিয়ে তারা আগে এসেছিল। তখন আমরা বলেছি, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের খরচ যেন তারা দেয়। নয়ত সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর যদি প্রকল্প না হয়, তাহলে আমাদের সরকারের টাকা বিনা কারণে খরচ হয়ে যাবে। পরে তারা এই প্রস্তাব নিয়ে আসে সম্প্রতি। এখন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের খরচও তারা দিতে রাজি।

টাউনশিপ নির্মাণে কত টাকা খরচ হবে, সে বিষয়েও প্রস্তাবে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই বলে জানান এই সিডিএ কর্মকর্তা।

চীনের কোন চারটি কোম্পানি যৌথভাবে মেট্রোরেল ও টাউনশিপ প্রকল্পের এই প্রস্তাব দিয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে চাননি প্রধান প্রকৌশলী।

তবে গত ১৩ জানুয়ারি ঢাকায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে চায়না রেলওয়ে কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিআরসিসিএল) নামে যে প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, তারাও এ কনসোর্টিয়ামে আছে বলে সিডিএ’র একজন জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) ২০১৯ সালের জুলাইয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালট্যান্টস লিমিটেডের মাধ্যমে একটি প্রাকযোগ্যতা সমীক্ষা করেছিল। ওই প্রতিবেদনে বন্দরনগরীতে মেট্রোরেলের তিনটি র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইনের প্রস্তাব করা হয়। তাতে প্রায় ৮৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল।

মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর, কর্ণফুলী টানেল, টানেলের ওপারে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর ও জ্বালানি হাব ঘিরে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা হবে।

সেসব বিষয় মাথায় রেখেই গত ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ঢাকার পর চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল নির্মাণের নির্দেশ দেন।

চট্টগ্রামের মেট্রোরেল প্রকল্প নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়াও আগ্রহী। ইতোমধ্যে উন্নয়ন সংস্থা কোইকার মাধ্যমে এ প্রকল্পের প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে তারা। এ কাজে তারা ৫ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবেও দিতে চায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads