• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

আবারো তেল নিয়ে তেলেসমাতি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

রমজানকে সামনে রেখে ভোজ্যতেল নিয়ে তেলেছমাতি শুরু করেছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আরো এক দফা বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে তারা।

চলতি মাসেই বোতলজাত তেলে লিটার প্রতি আট টাকা বাড়ানোর পর আবার নতুন করে লিটার প্রতি ১২ টাকা বাড়াবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। ফলে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম হবে ১৮০ টাকা।

আগামী ১ মার্চ থেকে বাড়তি দাম কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সমিতি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ।

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এক কোটি মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রিতে সরকারের পরিকল্পনার মধ্যেই ভোজ্যতেলের দাম আরো এক দফা বাড়ানোর খবরে চিন্তার ভাজ পড়েছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে।

দেশে ভোজ্যতেল বিপণনে সবচেয়ে শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি সিটি গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আমরা দাম বাড়ানোর আবেদন করেছি। এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেটি বিচার বিশ্লেষণ করবে।

বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, লিটারে ১৬৮ টাকায় যে তেল আমরা বিক্রি করছি, সেটির আন্তর্জাতিক বাজার ছিল টনপ্রতি এক হাজার ৩০০ ডলার। এখন যে তেল আমরা বাজারে ছাড়তে যাচ্ছি, সেটি এক হাজার ৪২০ ডলারের। আগামী এক থেকে দেড় মাস পর আন্তর্জাতিক বাজারে কোথায় গিয়ে ঠেকে, সেটি আমরা এখনই বলতে পারছি না। কিন্তু এক হাজার ৭০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস আছে। তখন পরিস্থিতি কী হবে, তা জানি না। নতুন দাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেছে কি না জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব (অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘না, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় নেয়নি। সমিতি থেকে মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো আবেদনও আসেনি। যদি তারা এ রকম কিছু করতে চায় তাহলে আগে তো মন্ত্রণালয়ের কাছে আসতে হবে।

তিনি বলেন, আবার আবেদন করলেই তো মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দিয়ে দেবে না। এই তো ৬ ফেব্রুয়ারি বাড়ানো হলো তেলের দাম। সেখানে লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হলো। এখন আবার দাম বৃদ্ধি কেন?

এক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, আগে আবেদন আসুক। দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপট কী দেখি। আমরাও আমাদের মতো করে পর্যালোচনা করব। দাম বাড়াতে চাইলেই তো হবে না।

এক বছরেরও কম সময়ে লিটারপ্রতি ৩৪ টাকা বেড়ে যাওয়া এই তেলে এবার লিটারপ্রতি ১২ টাকা দাম বাড়াতে চাইছে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সমিতি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। ১ মার্চ থেকে বাড়তি দাম কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে তারা।

যদিও দাম বাড়াতে হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে। মন্ত্রণালয় বলছে, তারা এর কিছই জানে না।

গত বছর রোজায় ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছিল লিটারে ১৪৪ টাকা। দাম কমাতে সে সময় করছাড়ও দেয় সরকার। কিন্তু একবার লিটারে ২ টাকা কমা ছাড়া করছাড়ের সুফল পাওয়া যায়নি।

আন্তর্জাতিক বাজারে রান্নার উপকরণটির দাম ক্রমেই বাড়ছে আর সমানতালে বাড়ছে দেশেও।

সবশেষ গত ৬ ফেব্রুয়ারি লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৬৮ টাকা করা হয়।

এবার সেটি লিটারে ১৮০ টাকা করতে চাইছে ব্যবসায়ীরা। এই দাম কার্যকর হলে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দামের নতুন রেকর্ড হবে। অবশ্য বর্তমান দামও রেকর্ড।

ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে দেশেও এই দাম বাড়াতে হচ্ছে।

তেল ব্যবসায়ীরা এও বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ক্রমেই বাড়ছে। আর যে পূর্বাভাস আছে, দাম সেই পরিমাণ বাড়লে তারা যে দাম প্রস্তাব করছেন, তা থেকেও বাড়াতে হবে ভবিষ্যতে।

দাম বৃদ্ধির সুনির্দিষ্টি ঘোষণা দিয়ে সমিতির সচিব নুরুল ইসলাম মোল্লা স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) কাছে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েন। কেন সরকার ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে বোতলজাত তেল লিটারে ১৬৮ টাকা করে বিক্রির অনুমতি দিল-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তেলের দাম আমরা বাড়িয়েছি। কারণ, ৯০ ভাগ তেল আমরা ইমপোর্ট করি। আন্তর্জাতিক বাজারে সেই তেলের দাম বেড়েছে। কনটেইনার ভাড়া বেড়েছে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যদি আমরা ঠিক না করে দিই তাহলে তো ব্যবসায়ীরা তেল আনবেই না।

মন্ত্রী জানান, আমদানি করা নিত্যপণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণে ট্যারিফ কমিশন আছে। তারা বসে আন্তর্জাতিক বাজারের ১০ দিন ১৫ দিনের দাম দেখে দেশে যত টাকা দাম হওয়া উচিত, তা ঠিক করে।

গত বছর ১৯ অক্টোবর সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয় প্রতি লিটারে ৭ টাকা। সরকারের অনুমোদন নিয়ে ওই দিন থেকেই বর্তমানে দেশের বাজারে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৭৬০ টাকায়। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল ১৩৬ টাকা এবং পাম অয়েল ১১৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেই দাম বাজারে কার্যকর হওয়ার আগের দিনই বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কাছে পরের ধাপে বর্তমান বাজার দামের তুলনায় প্রতি লিটার সয়াবিনে ১২ টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে রাখা হয়। যা গত ৩ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করার দাবি জানানো হয়।

কিন্তু নানা কারণে উৎপাদকরা ডিসেম্বরে ভোজ্যতেলের বর্ধিতমূল্য কার্যকর থেকে বিরত থাকে। তবে নতুন বছরের শুরুতেই উৎপাদক ও বাজারজাতকারীরা আবারো দাম বৃদ্ধির পক্ষে এককাট্টা হয়। তবে এবার আগের বর্ধিত প্রস্তাব থেকে লিটারে ৪ টাকা ছাড় দিতে চাইছে।

সে অনুযায়ী গত ২ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানানো হয়। দাম বাড়ানোর প্রস্তাব সম্পর্কিত চিঠিতে বলা হয়, করোনা মহামারিতে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার কথা বিবেচনা করে এতদিন দাম বাড়ানো হয়নি। কিন্তু আমদানি মূল্য বিবেচনায় বর্তমান দাম ধরে রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এরপরই লিটারে আট টাকা বাড়ানো হয়। কিন্তু মাস না যেতেই আবারো লিটারপ্রতি তেলের দাম ১২ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads