• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

ফের খুচরা মূল্য বাড়ছে বিদ্যুতের

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ০৪ মার্চ ২০২২

বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির ফলে প্রতিবছর বিদ্যুতে বড় ধরনের ভর্তুকি দিতে হয়। এ প্রক্রিয়ায় চলতি বছরেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ঘাটতি দাঁড়াবে ৩০ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। তাই লোকসান ও ভর্তুকির বোঝা কমাতে বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা মূল্য। একই সঙ্গে গ্রাহকের ডিমান্ড চার্জ ও নিরাপত্তা জামানত বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে পিডিবি। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) মূল্যহার ৬৯ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সম্প্রতি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) এ প্রস্তাব জমা দেয় সংস্থাটি। পাশাপাশি গ্রাহক পর্যায়ে একই অনুপাতে বিদ্যুতের খুচরা মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে পিডিবি। একই সঙ্গে গ্রাহক পর্যায়ে ডিমান্ড চার্জ ও পোস্ট পেইড গ্রাহকদের নিরাপত্তা জামানত বৃদ্ধিরও প্রস্তাব করা হয়েছে।

সূত্রমতে, চলতি বছর বিতরণকারী সংস্থা/কোম্পানিগুলোর কাছে পিডিবির বিদ্যুৎ বিক্রির সম্ভাব্য পরিমাণ দাঁড়াবে আট হাজার ৮৯৯ কোটি ৩০ লাখ ইউনিট। এ বিদ্যুৎ কেনায় পিডিবির ব্যয় হবে ৭৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। আর তা বিক্রি করে পিডিবির আয় হবে ৪৩ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ পিডিবির বিদ্যুৎ কেনা ও বিক্রিতে ইউনিটপ্রতি দাম পড়বে যথাক্রমে আট টাকা ৫৮ পয়সা ও পাঁচ টাকা আট পয়সা।

বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির ফলে চলতি বছর পিডিবির ঘাটতি দাঁড়াবে ৩০ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটাতে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার ইউনিটপ্রতি নির্ধারণ করতে হবে আট টাকা ৫৮ পয়সা। অর্থাৎ বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার সাড়ে তিন টাকা বা ৬৮ দশমিক ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। আর পাস থ্রু পদ্ধতিতে বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধির অনুপাতে গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। পিডিবির প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, সরকার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় আরো বাড়বে। এক্ষেত্রে দুটি বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরেছে পিডিবি। এর মধ্যে গ্যাসের দাম ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি করলে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি আরো ৫৬ পয়সা বাড়াতে হবে। এতে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার পড়বে ৯ টাকা ১৪ পয়সা। আর গ্যাসের দাম ১২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করলে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে আরো ৬৯ পয়সা বাড়াতে হবে। এতে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার পড়বে ৯ টাকা ২৭ পয়সা। এ দুই ক্ষেত্রে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যহার বাড়াতে হবে যথাক্রমে ৮১ শতাংশ ও ৮৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাবে বেশকিছু নতুন বিষয় যুক্ত করেছে পিডিবি। এর মধ্যে রয়েছে ট্যারিফ সমন্বয়ের ক্ষেত্রে এনার্জি চার্জের (বিদ্যুৎ বিলের) সঙ্গে ডিমান্ড চার্জ বৃদ্ধি করে ট্যারিফ সমন্বয় করা, গ্রাহক মিশ্রণ অনুপাতে বিতরণ ইউটিলিটিগুলোর গড় ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে সমতা আনা, গ্রাহকের বকেয়ার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ চার্জ ও পুনঃসংযোগ চার্জ সংশোধন করা, সব থ্রি ফেজ এলটি গ্রাহকের ক্ষেত্রে পাওয়ার ফ্যাক্টর চার্জ আরোপ, সব পোস্ট পেইড গ্রাহকের ২৫ শতাংশ হারে নিরাপত্তা জামানত বৃদ্ধি করা, প্রি-পেইড গ্রাহকদের বিদ্যমান এক শতাংশ রিবেট প্রত্যাহার করা, বেসরকারি হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিক হারে বিল আরোপ করা এবং সম্পূরক বা সংশোধিত বিল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এককালীন বা কিস্তিতে পরিশোধের ক্ষেত্রে সারচার্জ আরোপ না করা।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে আবাসিক ও সেচ গ্রাহকদের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোওয়াটে মাসিক ডিমান্ড চার্জ ৩০ টাকা। ধর্মীয়, শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানে এ চার্জ ৩৫ টাকা, রাস্তার বাতি/পাম্প, ব্যাটারি চার্জিং স্টেশন ও বাণিজ্যিক ভবনে ৬০ টাকা এবং অস্থায়ী বা নির্মাণ সংযোগে ১০০ টাকা। আর ১১ ও ৩৩ কেভি সংযোগে ডিমান্ড চার্জ প্রতি কিলোওয়াটে প্রতি মাসে ৬০ টাকা হারে আদায় করা হয়।

এদিকে সাধারণ আবাসিক ও সেচ গ্রাহকদের ক্ষেত্রে দুই কিলোওয়াট পর্যন্ত গ্রাহকদের নিরাপত্তা জামানত ৪০০ টাকা, দুই কিলোওয়াটের ঊর্ধ্বে ৬০০ টাকা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, বাণিজ্যিক গ্রাহকদের নিরাপত্তা জামানত ৮০০ টাকা এবং নির্মাণ ও বৃহৎ শিল্পে এক হাজার টাকা নিরাপত্তা জামানত আদায় করা হয়।

মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাবনায় পিডিবি জানায়, বর্তমানে সংস্থাটির সিস্টেম লস ছয় দশমিক ৬০ শতাংশ। গত অর্থবছর গ্রাহক পর্যায়ে সংস্থাটির বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যয় ছিল প্রতি ইউনিটে ছয় টাকা ৬২ পয়সা। চলতি (২০২২) বছর তা সামান্য বেড়ে দাঁড়াতে ছয় টাকা ৬৪ পয়সা। তবে বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধি করা হলে একই সঙ্গে পাস থ্রু পদ্ধতিতে তা গ্রাহক পর্যায়ে বাড়াতে হবে।

জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাব বিইআরসিতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া সমপ্রতি প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ভর্তুকি তুলে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে ভর্তুকি হ্রাস করলে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই।

তিনি আরো বলেন, দ্রুত বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি না করলে চলতি অর্থবছর লোকসান বেড়ে দ্বিগুণ হবে। সে ক্ষেত্রে সরকারের ভর্তুকি অনেক বেড়ে যাবে। তাই বাল্ক মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব বিইআরসিতে দেওয়া হয়েছে। আর বাল্ক মূল্য বৃদ্ধিকে পাস থ্রু পদ্ধতি গ্রাহক পর্যায়ে দেওয়া হবে। বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য চার্জও বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে গণশুনানি শেষে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে মূল্যহার কতটা বৃদ্ধি করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads