• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর ৩ প্রস্তাব

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১০ মার্চ ২০২২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৩০ কোটি ৫৭ লাখ মানুষ এখনও ক্ষুধার কষ্ট পাচ্ছে। আমরা সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে তাদের জন্য সহজেই খাবারের ব্যবস্থা করতে পারি।’

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থাভুক্ত এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে কৃষি খাতে অর্থায়ন ও সহায়তায় বিশেষ তহবিল গঠন, প্রযুক্তি বিনিময় ও গবেষণা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

আজ বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সকালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের মন্ত্রী পর্যায়ের ৩৬তম সম্মেলনের উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাব দেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।

খাদ্য নিরাপত্তা একটি দেশের জনগণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ ওই সময় এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

১. কৃষি গবেষণা এবং শিক্ষায় আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে।

২. কৃষি খাতে জৈবপ্রযুক্তি, ন্যানোটেকনোলজি এবং রোবটিক্সের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির স্থানান্তর এবং অংশীদারত্বের সুযোগ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এ অঞ্চলের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে জোরদার করা প্রয়োজন।

৩. আধুনিক কৃষিতে বিপুল বিনিয়োগের প্রয়োজন। তাই কৃষি খাতে অর্থায়ন ও সহায়তার জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করা যেতে পারে।

কোভিড-১৯ মহামারি অন্য সব খাতের মতো কৃষিকে প্রভাবিত করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে মহামারির শুরুতে সাপ্লাই চেইন বাধাগ্রস্ত হয়, যা উৎপাদক এবং ভোক্তাকে প্রভাবিত করেছিল। তবে সরকারের সময়মতো এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এ খাতে দ্রুত পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা করেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি দেখিয়েছে, এ ধরনের বিপর্যয়ের মুখে মানুষ কতটা দুর্বল। আবারও এটাও দেখিয়েছে যে, মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব।’

বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের আপেক্ষিক গুরুত্ব কমে গেলেও অবদান কমেনি, বরং বেড়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২০০৫-০৬ থেকে কৃষি জিডিপি ৪০ শতাংশ বেড়েছে।’

বাংলাদেশের জিডিপিতে অবদান কমলেও কৃষি এখনও কর্মসংস্থানের প্রধান উত্স বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দেশের মোট শ্রমশক্তির ৫০ শতাংশের জীবিকা কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে প্রায় ২ কোটি ২৭ লাখ মানুষ, যাদের ৪৫ শতাংশ নারী, তাদের সবাই কৃষি খাতে কর্মরত।’

বর্তমানে অনেক কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের মৌলিক কাঁচামাল (যেমন: চাল মিলিং, চিনি, চা, ফলের রস, মসলা, ভোজ্যতেল, তামাক, পাটের বস্ত্র, তুলা বস্ত্র) কৃষির ওপর নির্ভরশীল বলেও জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড এখনও কৃষি।’

কৃষিতে বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চাল, সবজি, ফল, মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ উৎপাদনে গত ১৩ বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে বাংলাদেশ। বছরে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের মধ্য দিয়ে ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ।

‘বিশ্বে বাংলাদেশ পাট ও মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয়, ধান ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয় এবং চা উৎপাদনে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম।’

সরকারের নীতি নির্ধারণ, সহায়তার সঙ্গে কৃষকের কঠোর পরিশ্রম ও চেষ্টার কারণেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘এ সাফল্যের পরও আমরা মনে করি প্রকৃত অর্থে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে। কারণ এই খাতগুলো প্রকৃতি এবং জলবায়ু সম্পর্কিত অস্বাভাবিকতার কারণে আঘাতের ঝুঁকিতে রয়েছে।’

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনও টেকসই কৃষির জন্য বড় হুমকি। তাই আমরা আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিল থেকে বিভিন্ন অভিযোজন এবং প্রশমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি, ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায়।’

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ ও ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ গ্রহণ করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানীরা বন্যা, খরাপ্রতিরোধী এবং লবণাক্ততা-সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছেন, যা সেই বিরূপ পরিবেশে জন্মে।’

জীবিকা নির্বাহের কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপ নিচ্ছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদেরকে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিতে হবে।’

টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করতে যান্ত্রিকীকরণ, ভাসমান কৃষি, ছাদে চাষ, হাইড্রোপনিক এবং অ্যারোপনিক কৃষি এবং সমন্বিত কৃষির মতো আধুনিক পদ্ধতিগুলো গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমাজে কৃষকরা ছিল সবচেয়ে অবহেলিত। এক দশক আগেও ব্যাংকিং সেবার বাইরে ছিলেন তারা। আমার প্রথম মেয়াদে, আমরা কৃষকদের কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণ করেছি এবং তাদের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করেছি।

‘এখন প্রায় দুই কোটি কৃষকের কাছে এই কার্ড আছে এবং তারা আর্থিক প্রণোদনা গ্রহণ করছেন। কৃষি ঋণ সরাসরি তাদের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হচ্ছে। এমনকি বর্গাচাষিদেরও জামানতবিহীন কৃষি ঋণ দেয়া হচ্ছে।’

ডিজিটাল বাংলাদেশে কৃষকরা এখন ‘কৃষি বাতায়ন-অ্যাগ্রিকালচারাল উইন্ডোজ’ থেকে কৃষি সম্পর্কিত তথ্য পাচ্ছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষি সংক্রান্ত তথ্য প্রদানে সারা দেশে ৪৯৯টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র রয়েছে।’

কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকদের কল্যাণে জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৮, জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নীতি ২০২০ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ বাস্তবায়নের উদ্যোগ ও নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথাও জানান সরকারপ্রধান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads