• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বিপর্যয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত 

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

বিপর্যয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত 

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৯ জুন ২০২২

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। এ সৈকতে দেখা যায় অভাবনীয় সব দৃশ্য। তাই প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এখানে ভ্রমণে আসেন। তবে অনেক সময় অসতর্কবসত সমুদ্রের পানিতে প্লাস্টিকসহ নানা ধরনের বর্জ্য ফেলছে অনেক পর্যটক। পাশাপাশি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট সিস্টেম না থাকায় এই শহরের ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের তরল বর্জ্য ড্রেন দিয়ে সরাসরি যাচ্ছে সমুদ্রে। এছাড়া পুরো শহরের বর্জ্য গিয়ে পড়ছে বাঁকখালী নদী হয়ে সমুদ্রে। শুধু তা-ই নয়, কক্সবাজারের শতাধিক হ্যাচারির বিষাক্ত পানিও সমুদ্রেই গিয়ে মিশছে। এতে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে কক্সবাজারের স্থানীয় পরিবেশ ও সমুদ্রের নীল জলরাশি।

সৈকতের নাজিরারটেক থেকে হিমছড়ি পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে এরকম মারাত্মাক দূষণ। অনেকেই মনে করেন, ট্যুর অপারেটর ও হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কর্তৃপক্ষের অক্ষমতার কারণে প্রতিনিয়ত মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে সমুদ্রের নীল জলরাশি।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিচালক ফরিদ আহমদ বলেন, স্যুয়ারেজ সিস্টেম বাস্তবায়নে ট্যুর অপারেটর, হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সবার একান্ত সহযোগিতা দরকার।

আর কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, সমুদ্র দূষণের জন্য পর্যটন নগরীতে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার অবস্থানকেও দায়ী। তার মতে, রোহিঙ্গা আগমনের ফলে পাহাড় কেটে তাদের জন্য ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। সেসব ক্যাম্পের বর্জ্য গিয়ে মিশছে নাফ নদে। পরে তা যাচ্ছে সমুদ্রে।

মোর্শেদ চৌধুরী মনে করেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হোটেল-মোটেল জোনসহ চারদিকে নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। সরকারের সঙ্গে একযোগে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগী হতে হবে।

এদিকে, কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানিয়েছেন, কক্সবাজারের তলদেশ থেকে এখন আর বিশুদ্ধ মিষ্টি পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ শহরের তরল বর্জ্য একদিকে যেমন সমুদ্রে যাচ্ছে, তেমনি এর কিছু অংশ মাটির নিচের পানিতে মিশে যাচ্ছে।

তিনি আরো জানান, পৌরসভার কঠিন বর্জ্য রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়িতে ফেলার কথা থাকলেও শহরের কাছাকাছি বাঁকখালী নদীতে ফেলা হচ্ছে। সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত এই নদীটির পানিও এখন মাত্রাতিরিক্ত দূষিত।

তার মতে, স্যুয়ারেজ সিস্টেম না থাকাই সমুদ্র দূষিত হবার সবচেয়ে বড় কারণ।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কক্সবাজার জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এইচএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য শহরের তুলনায় কক্সবাজার বেশি অপরিচ্ছন্ন। পৌরসভার গাফিলতি এর অন্যতম কারণ। অথচ আমরা নিয়মিত ট্যাক্স দেই পৌরসভাকে। সমুদ্রের দূষণ কমাতে কক্সবাজারে কেন্দ্রীয়ভাবে বর্জ্য শোধনাগার বা এসটিপি করা উচিত বলে মনে করেন নজরুল ইসলাম। কিন্তু এটা করা যাদের দায়িত্ব তারা বিষয়টিকে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে দাবি করেন তিনি।

এ ছাড়া সমুদ্র দূষণ রোধ করতে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতনতার সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর কক্সবাজারে প্রায় ১০ লাখ পর্যটক আসেন। এর মধ্যে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটন মৌসুমেই আসেন প্রায় ৬ লাখ। এই মৌসুমে ছুটির দিনগুলোতে কক্সবাজারে উপচে পড়েন পর্যটকরা।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার জন্য কক্সবাজারে ৫১৬টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। এসব স্থানেই প্রতিদিন শত শত টন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে, যার বেশিরভাগই শেষ পর্যন্ত সাগরে গিয়ে পড়ছে।

এ ছাড়া পাহাড়ি ঢলের প্রবাহমান বাঁকখালী নদীতে পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে বিপুল সম্ভাবনার কথা বলা হলেও দূষণের ফলে তা খাতা-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁকখালী নদীর উজানে ৩৫০ থেকে ৫০০ মিটার প্রশস্থতা থাকলেও মোহনায় তা সর্বোচ্চ ৫০ মিটার। এখানে পৌরসভার বর্জ্য ফেলে, তার ওপর নদী ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলে হাউজিং প্রকল্প করা হয়েছে। পরিবেশ ধ্বংস করা এসব প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ করছে একাধিক সিন্ডিকেট।

এ ছাড়া শোধনাগারের জন্য সদর উপজেলার পিএমখালীতে ৩৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে প্লান্ট স্থাপন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এটি হলে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটা সমাধান হবে।

এদিকে বাঁকখালী নদীতে বর্জ্য ফেলার অভিযোগ অস্বীকার করে কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কে এম তারিকুল ইসলাম দাবি করেছেন, নদীতে নয়, ময়লা রাখা হচ্ছে খোলা জায়গায়। সেখানে এটি পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads